সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।

টানা তৃতীয় দিনের মতো আজ সড়ক অবরোধের কারণে গুলশান, বাড্ডা, মহাখালী ও তেজগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কে চলাচলকারী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে দীর্ঘসময় যানজটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

এর আগে, ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর আবার কলেজের সামনে ফিরে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তারা গুলশান-১ নম্বর চত্বরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।

আরো পড়ুন:

সিরাজগঞ্জে নদীতে গোসলে নেমে ৩ স্কুলছাত্র নিখোঁজ

তিতুমীরের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে শোনা গেছে। তারা বলছেন, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তিতুমীর আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘টিসি না টিউই, টিউই টিউই’, ‘আমার ভাই অনশনে, প্রশাসন কি করে’, ‘প্রশাসনের সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, চলবে না চরবে না’, ‘অধ্যক্ষের সিন্ডিকেট, মানি না মানবো না’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে’।

এদিকে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার অনশনরত অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফকে ‘গুরুতর অবস্থায়’ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিতুমীর কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন করছেন। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট ১২ জন শিক্ষার্থী অনশনে যুক্ত হয়েছেন। 

আন্দোলনকারীদের একজন তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী জাহিদ রানা বলেন, আমরা ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমার ভাইয়েরা এ নিয়ে অনশন করে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই আমরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এখানে সড়ক অবরোধ করেছি।

কতক্ষণ এখানে সড়ক অবরোধ করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কেউ এসে বিষয়টি সুরাহা না করছেন, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।  

এ সময় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহাখালী আমতলী এলাকায় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সেসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান মহোদয় এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন— শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, তিনি রাষ্ট্রকে বিষয়টি জানাবেন। শিক্ষার্থীরা অনশনরত অবস্থায় মারা যাবে, আর তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে ধীরে-সুস্থে কাজ করার কথা ভাবছে। এ ধরনের বক্তব্য শিক্ষার্থীরা আশা করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার মধ্যে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি মেনে নিয়ে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়া হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ বা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেল ও সড়কপথ এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের চলমান এই আন্দোলনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত’ উল্লেখ করে এতে জানানো হয়, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইতোমধ্যে এই কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এই কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় সব বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে। এ অবস্থায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। সেজন্য আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ করা হলো। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বিবৃতিতে সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার সব সময় সচেতন ও সহানুভূতিশীল রয়েছে বলেও জানানো হয়।

হাফছা/এনএইচ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ ত ত ম র কল জ সড়ক অবর ধ পর স থ ত র কল জ র র ধ কর ব ষয়ট অবস থ ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানের ১৮ দিন

ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও মিত্রদের নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চলমান গণঅবস্থান কর্মসূচি রবিবার ১৮তম দিন অতিবাহিত করেছে।

এদিনও ফ্যাসিবাদী দল নিষিদ্ধ ও বিচারের পাঁচ দফা দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অব্যাহত ছিল।

রবিবার (২ মার্চ) গণঅবস্থানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অংশ নেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বিভিন্ন পর্যার্যের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:

নাগরিক পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রদল নেতা

ঢাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পতাকা উত্তোলন

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক আহ্বায়ক আনিছুর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান, সদস্য ওয়াসিম আহম্মেদ, মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ ও তামিম আনোয়ার।

এছাড়া বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে, রমজান উপলক্ষে গণঅবস্থানের মঞ্চে গণইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সাধারণ পথচারী রোজাদাররাও অংশগ্রহণ করেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের অনশনের মধ্য দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের চলমান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনশনে যোগ দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।

১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার শহীদ রানা তালুকদারের পরিবার এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান। তার অনুরোধে অনশন ভেঙে লাগাতার গণঅবস্থান শুরু হয়।

২৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।

তাদের দাবিগুলো হলো-⁠ ⁠গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের তাদের মিত্রদের নিষিদ্ধ করতে হবে; ⁠সকল ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনের কার্যালয় ও সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করে তা ফ্যাসিবাদী আমলে নির্যাতিত অসহায় মজলুমদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করতে হবে; ⁠২০০৯-২০২৪ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রীপরিষদ সদস্যসহ সবাইকে ফ্যাসিস্ট ঘোষণা করে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

তাদের অন্য দুইটি দাবি হলো- ⁠ফ্যাসিবাদ ধারণ করে গড়ে ওঠা নব্য ফ্যাসিবাদী বা একই চরিত্রের যেকোনো দল ও সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করতে হবে; ⁠ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানের ১৮ দিন