ইবির হল ফান্ড থেকে টাকা যেত ‘ছাত্রলীগের পকেটে’
Published: 1st, February 2025 GMT
বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন হলের ফান্ড থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ইবি শাখার বিরুদ্ধে। তবে ভয়ে এতদিন মুখ খুলতে পারেননি কেউ। সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলেছেন, সেই সময়ে হলে দায়িত্ব পালনকারী প্রভোস্টরা। বিভিন্ন দিবস ও প্রোগ্রামের নামে সংগঠনটির নেতাদের চাপে পড়ে চাঁদা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতো বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন কমিটিবিহীন থাকার পর ২০২২ সালে জুলাই মাসে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি ও নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটি গঠনের মাস না যেতেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও দিবসের নামে হল ফান্ড থেকে চাঁদা নেওয়া শুরু করে। প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে প্রভোস্টদের নির্দেশ দেওয়া হতো। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মিটিংয়ে রেখে এ নির্দেশনা দিতো প্রভোস্ট কাউন্সিল। ফলে সরাসরি বিরোধিতা করতে পারতেন না প্রভোস্টরা। এ ছাড়া কেউ বিরোধিতা করলে বিভিন্নভাবে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
হলের বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের চাপে পড়ে প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.
অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন কাজে ছাত্রলীগের সাথে মতবিরোধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়দের হুডি বানানোর দায়িত্ব ও অতিরিক্ত হুডি বানাতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। কিন্তু আমার মত না থাকায় তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন চাওয়া পূরণ না করায় আমার ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ডাইনিংয়ে খাবারে পাথর, কাঁচ পাওয়া যেতে শুরু হয়। এটা নিয়ে আন্দোলন করে তারা। সর্বশেষ এক কর্মকর্তার সমস্যাকে কেন্দ্র করে গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলন করে আমার পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রলীগ।’’
একাধিক প্রভোস্টের অভিযোগ, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ আমলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে সরাসরি নির্দেশনা দিতেন তিনি। পরে অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনিও একই কাজ করতেন।
লালন শাহ হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে হল ফান্ড থেকে চাঁদা নিতো। এজন্য সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হতো। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এমন কোনো অপকর্ম হয়নি। ছাত্রদের টাকা ছাত্রদের কল্যাণেই ব্যয় করা হচ্ছে।’’
প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, ‘‘দিবস ও বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে ছাত্রলীগকে টাকা দিতে সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হতো। তখন প্রভোস্ট থাকাকালে শেষের দিকে আমি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এ ছাড়া অনেক সময় প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমেও এসব কাজে প্রভোস্ট কাউন্সিলে উত্থাপনের চাপ দেওয়া হতো।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘আমার দায়িত্ব পালনকালে হল ফান্ড থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অনেকে অভিযোগ করছেন। আর মিটিংয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত রেজুলেশনে প্রকাশ হয়। সেখানেও এমন কোনো বিষয় আছে কি না, দেখতে পারেন।’’
হল ফান্ড থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, এটা মিথ্যা। তবে একবার বিশেষ আয়োজনে হলে খাবারের মেন্যু সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শের জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিল। এর বাইরে প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে চাঁদা বা অন্য কোনো বিষয়ে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মাদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছাত্রলীগ হল থেকে বিভিন্ন ভাবে চাঁদা আদায় করতো, এমন অভিযোগ শুনেছি। সেই সময়ের পরিবেশ এই নতুন বাংলাদেশে যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে আমি প্রভোস্ট কাউন্সিলকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা যেন ছাত্রদের অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা অবলম্বন করে। আর বর্তমানে ছাত্রলীগের ন্যায় অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন অপকর্মের পথ অবলম্বন করলে, বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’’
তানিম/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হল ফ ন ড থ ক সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরানের ১৩৩ কোটি টাকা উপার্জন চোরাচালান ও জালিয়াতি করে: সিআইডি
সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ১৩৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মানি লন্ডারিং মামলায় গতকাল সোমবার ঢাকার মালিবাগ থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর বিষয়ে সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিআইডি। সেখানে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক একরামুল হাবিব।
সংবাদ সম্মেলনে একরামুল হাবিব জানান, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরু আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ইমরান। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ আনতেন। ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে আনতেন। পরে এগুলো তিনি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু ও ছাগলকে বিদেশি ও ‘বংশীয়’ গরু ও ছাগল বলে প্রচার চালিয়ে উচ্চ মূল্যে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করতেন। এভাবে আয় করা ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া অবৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করেন।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিকভাবে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য–উপাত্ত পাওয়ার পর গতকাল ইমরান হোসেনসহ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করে সিআইডি। মামলায় ইমরান হোসেন, সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম (৪৫) এবং অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
গত বছর কোরবানির ঈদে ইমরানের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন তৎকালীন এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এরপর আলোচনায় আসে সাদিক অ্যাগ্রো খামার।
বেশি দামে গরু বিক্রি করে আলোচিত ছিল সাদিক অ্যাগ্রো। দেশে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অবশ্য কৌশলে সেই গরু সাদিক অ্যাগ্রোকেই দিয়েছিল।
গত জুলাই মাসে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ছয় কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
‘উচ্চবংশীয়’ ছাগলের খামার সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান গ্রেপ্তারজব্দ করা ব্রাহমা গরু কৌশলে সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসাদিক অ্যাগ্রোতে উচ্ছেদ, সরানো হলো ১৫ লাখ টাকার সেই ছাগল