দীর্ঘ এক বছর পর শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমীন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন দেশ বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। দ্রুত তাকে গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিৎ করেছেন প্রয়াত গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কন্যা সঙ্গীতশিল্পী দীঠি আনোয়ার।
 
তিনি বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমিনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকালে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে গতকাল সংগীতশিল্পী জাহাঙ্গীর সাইদ বলেন, ‘সাবিনা আপার ভার্টিগো সমস্যা রয়েছে। হঠাৎ গাইতে গাইতে তিনি ভার্টিগো সমস্যায় পড়েন। এরপর মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড ধরতে গিয়ে ভারসাম্য রাখতে পারেননি। পড়ে যান। তারপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক সব চিকিৎসা করেন। রাত সাড়ে ১০টার সময় আমরা আপাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা করেছি। এখন আপা পুরোপুরি ঠিক আছেন।’

২০২৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর আর তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি।

সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।

সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।

ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।

সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি।

দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা শুরু, মুসল্লিতে পরিপূর্ণ তুরাগ তীর

গাজীপু‌রের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ বৃহস্প‌তিবার বাদ মাগ‌রিব আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরা‌য়ে নেজামের (যোবা‌য়ের অনুসা‌রী) ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হ‌য়ে‌ছে। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ান উর্দু ভাষায় আম বয়ান শুরু করেন। এটি বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের।

তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ, শুরায়ী নেজামের মি‌ডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, ইজতেমায় অংশ নিতে গতকাল বুধবার থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। আজ দুপুর না গড়াতেই ভরে যায় ময়দান। এরপরও আসতে থাকেন মুসল্লিরা। 

সরকারিভাবে আগামীকাল শুক্রবার ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তাবলীগ জামাতের হিসেবে দিন ও তারিখ পরিবর্তন হয় প্রতিদিন মাগরিবের পর। সেই হিসেবে আজ থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।

পুলিশ ও ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এ বছর প্রথমবারের মতো তিন পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণে এ বছরই প্রথম তিন পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার আয়োজন করছেন শুরায়ি নেজাম (মাওলানা জুবায়ের) অনুসারীরা।

ইজতেমার ময়দানের দেশের বিভিন্ন জেলা থে‌কে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। গত দুইদিন ধরে আসতে থাকে মুসল্লিরা। আজ বিকেলের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমার ময়দান।

ইজতেমা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসন এবার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সিসি ক্যামেরা, ড্রোন, চেকপোস্টসহ ডিবি পুলিশের টহল বাড়িয়েছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সকালে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্ব। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরায়ি নেজাম (মাওলানা জুবায়ের) অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বেও অংশ নেবে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা।

এরপর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা। ১৬ ফেব্রুয়া‌রি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।

মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শুরায়ে নেজাম অনুসারীদের আয়োজনে ইজতেমায় লাখ লাখ মুস‌ল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে।

তি‌নি জানান, আর‌বি মাস অনুযায়ী, সুর্যা‌স্তের পর থে‌কে দিন শুরু হয়। এজন্য আমরা আজ বৃহস্প‌তিবার বাদ মাগ‌রিব থে‌কে ইজ‌তেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে‌ছি।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার ফজর নামাজের পর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা জুবায়ের। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, এ বছর বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমায় নিরাপত্তায় ৭ হাজার পুলিশ সদস্য থাকবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তায় কাজ করবে। সিসি ক্যামেরা, মোবাইল কোর্ট, ড্রোন ও পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবিনা ইয়াসমীন আইসিইউতে
  • নতুন প্রেমে মজেছেন আমির খান
  • গাজীপুরে ডাকাতি: হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে লুটপাট
  • তুরাগ তীরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা, আখেরি মোনাজাত কাল
  • বিশ্ব ইজতেমায় দুই দিনে ৩ মুসল্লির মৃত্যু 
  • কেমন আছেন সাবিনা ইয়াসমীন
  • ‘চাচা হেনা কোথায়?’ –কোথা থেকে এলো এই কথা
  • বিশ্ব ইজতেমা শুরু, মুসল্লিতে পরিপূর্ণ তুরাগ তীর
  • পিএইচডি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ১০ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ