বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বিয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তার বিয়ের ভিডিও নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

শনিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদন বলা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম সারজিস আলমের বিয়ের সংবাদ প্রকাশ করছে। কয়েকটি গণমাধ্যম সূত্রে তার স্ত্রীর নাম রাইতা বলে জানা গেছে। তবে তার ছবি প্রকাশ করা হয়নি৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারজিসের বিয়ের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারজিস আলমের বিয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তার বিয়ের ভিডিও নয়। তাসমিয়া তাবাসসুম মম ও রাগিব নূর নামের এক দম্পতির বিয়ের ভিডিও ওই দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির কি-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘মমটম’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত ‘সারজিস আলম’স ওয়েডিং: ক্লিয়ারিং দ্য মিস কনসেপশন’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটিতে মম নামের ওই নারী দাবি করেন, আলোচিত ভিডিওটিতে কনে সাজে তিনি ও ভিডিওটি তার বিয়েতে ধারণ করা হলেও ভিডিওতে থাকা ছেলেটি সারজিস আলম নয়। 

পরবর্তী সময়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায় এবং তার পুরো নামের (তাসনিমা তাবাসসুম মম) সূত্র ধরে তার ফেসবুক আইডির সন্ধান পাওয়া যায়। ওই ফেসবুক আইডি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া ২০২২ সালের ২৯ আগস্টের একটি পোস্টে দেখা যায়, তিনি রাগিব নূর নামক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সংবাদ জানান এবং তাদের বিয়ের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেন। 

ওই ছবিগুলোতে মম এবং তার স্বামী রাগিবের পরিহিত পোশাকের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওতে বর ও কনের পরিহিত পোশাকের হুবহু মিল রয়েছে।

এছাড়া ওই ছবিগুলোতে লেখা ‘চেকমেট’ লোগোর সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চেকমেট ইভেন্ট নামক পেজের ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারির একটি পোস্টে মম ও রাগিবের বিয়ের বেশ কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম সারজিস আলমের বিয়ের সংবাদ প্রকাশ করছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান

‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।     

এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। 

রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম  (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’

তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা,  সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ