সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত চারজনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ও পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মরদেহগুলো তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার চারালপাড়া এলাকা থেকে জাহিদুল ইসলাম (২৮), ভাদাইল এলাকার পাবনারটেক থেকে আশরাফুল ইসলাম (৩০) এবং বগাবাড়ির আমবাগান এলাকার কবরস্থান থেকে পরিচয় শনাক্তের জন্য দুটি মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়। 

আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তারের নেতৃত্বে আশুলিয়া থানা পুলিশ কবর থেকে মরদেহগুলো উত্তোলন করে। 

আরো পড়ুন:

১১০ দিন পর আন্দোলনে নিহত রিপনের লাশ উত্তোলন

সুরতহালে যুবক, ময়নাতদন্তে হয়ে গেলো কিশোরী

নিহত মো.

আশরাফুল ইসলামের ভাই মো. নাসির উদ্দিন টিপু বলেন, ‍“গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে আশরাফুল ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশরাফুল গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর আসে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাইপাইল এলাকায় বেসরকারি হাবীব হাসপাতালের সামনে আশরাফুলের মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন সকালে তাকে দাফন করা হয়।” 

বগাবাড়ি আমবাগান এলাকার কবরস্থানে দাফন হওয়া দুইটি মরদেহ তোলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মরদেহ গত বছরের ৫ আগস্ট নিহত আবুল হোসেনের বলে দাবি করেন লাকী আক্তার নামে এক নারী। 

লাকী আক্তার জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন আবুল হোসেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যরা আবুল হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভ্যানে তোলা হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যদের জানান। কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশুলিয়া থানার সামনে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপের একটি ভিডিও দেখতে পান লাকী আক্তার। ওই ভ্যানের একটি মরদেহের পোশাক দেখে সেটি আবুল হোসেন বলে জানতে পারেন তিনি।

তিনি আরো জানান, বগাবাড়ি এলাকার কবরস্থানে আন্দোলন নিহত দুই ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়। যারা কবর দিয়েছিলেন তারা একটি মরদেহের পড়নের জামা-কাপড়ের বর্ণনা দিলে সেটি আবুল হোসেনের পোশাকের সঙ্গে মিলে যায় বলেও দাবি করেন তিনি। 

লাকী আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “আমারে ছাত্ররা নিয়া মামলা করাইছে। আসামি কয়জন আমি জানি না। আমারে কোন কিছু পইড়া শুনায় নাই। আমি লেখাপড়া জানি না। আমারে যেখানে সাইন (সই) করতে বলছে, আমি সাইন করছি।” 

আশুলিয়া থানার ওসি মো. নূর আলম সিদ্দিক বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় কিছু হত্যা মামলা হয়েছে। ওই সময় নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য পিএম রিপোর্ট তৈরি করা প্রয়োজন। আদালতের নির্দেশে মরদেহ তোলা হয়েছে। সুরতহাল প্রস্তুত শেষে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।” 

আশুলিয়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তার বলেন, “আদালতের আদেশে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কবর থেকে চারটি মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। একজন নারী একটি লাশ তার স্বামীর বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ওই কবরস্থান থেকে দুটি মরদেহ তোলা হয়েছে।”

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ময়ন তদন ত মরদ হ ময়ন তদন ত কবরস থ ন কবর থ ক আশর ফ ল র মরদ হ এল ক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুনের মরদেহ ছয় মাস পর কবর থেকে উত্তোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত মামুন খন্দকারের (৪৩) মরদেহ আদালতের নির্দেশে ৫ মাস ২৬ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের গ্রামের বাড়ি উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ি পারিবারিক কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চঞ্চল গোলদার, থানা পুলিশ, জেলা হাসপাতালের ডোম চয়ন ও মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী সাথী খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

নিহত মামুন খন্দকার মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর খন্দকারের ছেলে। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন।

নিহতের স্ত্রী সাথী জানান, তার স্বামী গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের লোকজনের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে ৮ আগস্ট পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি গত ২২ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত মামুন খন্দকারের কলেজ পড়ুয়া ছেলে খন্দকার মো. হেলাল (১৮) জানান, আন্দোলনে তার বাবা নিহত হবার পর তার বাবার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। মা আদালতে তার বাবার লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, ঢাকা এর ১৭৪৮ নং স্মারকের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, তার বাবা বাইপাইল তাওহিদা ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ উত্তোলন করে পিরোজপুর জেলা মর্গে পাঠানো হয়।

মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিহত মামুন খন্দকারের নিহতের ঘটনায় করা মামলায় মরদেহ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলন
  • ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুনের মরদেহ ছয় মাস পর কবর থেকে উত্তোলন