বইমেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে বই প্রকাশের আগে ডিএমপির পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের অনুরোধকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে একটা সংবাদ ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে। পুলিশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি বা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নেই।’ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সেটা যদি আমাকে গালাগালি করেও হয়, এতে কিছু যায় আসে না। আর বই প্রকাশ সেন্সর করব, এটা হাস্যকর। এই ভুল–বোঝাবুঝি এখানেই দূর করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের বই সেন্সরের পরিকল্পনা নেই। ওই পুলিশ কর্মকর্তা যদি বলে থাকেন, সেটা তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনার কথা বলেছেন। এটার সঙ্গে আমরা একমত নই।

এর আগে শুক্রবার মেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে বই প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি যাচাই করতে বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা চাইছে, ২০২৬ সালের বইমেলা থেকে এ ব্যবস্থা চালু করা হোক। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ডিএমপি সদরদপ্তরে বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে একটা সমন্বয় সভায় বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাদের অনুরোধ করেছি, এ রকম বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং (অনুসন্ধান) করে, ভেটিং (পরীক্ষা) করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন।’

এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে পরামর্শ দিয়েছি। তবে তারা এবার পারবে না। আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশিত হবে, তার পাণ্ডুলিপি আগে যেন বাংলা একাডেমিতে জমা দেওয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে, পড়ে দেখবে যে এমন কোনো লেখা যেন ছাপানো না হয়, যেটা আমাদের সোশ্যাল, কমিউনাল হারমনিকে (সামাজিক সম্প্রীতি) ডিজরাপ্ট (বিঘ্ন) করে এবং দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ (অস্থির) করে– এ রকম কোনো ধরনের প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে। এটা আমরা অনুরোধ করেছি বাংলা একাডেমিকে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তারা নোট নিয়েছেন। আশা করি, আগামী বছর বাংলা একাডেমিকে দিয়ে এটা করাতে পারব। বই প্রকাশনার আগে পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দিতে হবে। তারা অনুমতি দিলে সেটা শুধু প্রকাশ হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন সমকালকে বলেন, ‘আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। একটা নীতিমালা রয়েছে, সে অনুযায়ী বইমেলা পরিচালিত হয়।’

এ নিয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গণি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রথার পক্ষে নয়। তাহলে বইয়ের ক্ষেত্রে কেন এমন হবে? মেলায় নীতিমালা মেনে বই বিক্রি হবে। কোনো বইয়ের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সেটার বিক্রি বন্ধ করতে পারে কর্তৃপক্ষ। বাস্তবতা হলো, দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এমন কোনো বোর্ড বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই, যারা পাণ্ডুলিপি যাচাই করবে। এটা বাংলা একাডেমির কাজ নয়, তারা গবেষণা প্রতিষ্ঠান।’

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার হাজার বই প্রকাশ হয়। এত বই যাচাই-বাছাই করার সামর্থ্য বাংলা একাডেমি বা অন্য কোনো দপ্তরের আছে? তা ছাড়া এটা একটা অদ্ভুত-আজগুবি বক্তব্য। পৃথিবী যখন সামনে এগোচ্ছে, তখন আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে পেছনে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আশা করছি, বাস্তবতার নিরিখে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে পুলিশ।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ড এমপ এক ড ম ক হ স যকর সরক র বইম ল ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ