‘শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে ঘটবে কেন?’ এ প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার রাজধানীর ভাসানী মিলনায়তনে ঠিকানা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পরিচিত সভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছেই মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শঙ্কা আমাদের দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লায় যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে মৃত অবস্থায় ফিরে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ড.

ইউনূসের আমলে এই ঘটনা ঘটবে কেন? ড. ইউনূসকে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো অত্যন্ত পছন্দ করে। এ দেশের মানুষও তাঁকে পছন্দ করে। তারা মনে করেন, তিনি দেশের একজন গুণী মানুষ, যিনি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের আমলের বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো হোঁচট খাবে জনগণ।’

কুমিল্লায় যুবদল নেতাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়া যেত। কিন্তু গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ টর্চার করে মেরে ফেলে বাবা-মার কাছে ফেরত দেওয়া এটা এই আমলে হবে কেন? 

রিজভী বলেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করেছে, নির্বাচিত না হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থিত এ সরকার, তাঁর সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলে যদি শেখ হাসিনার আমলের পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো এই যে এত রক্তাক্ত আন্দোলন, রাজপথে রক্তের আলপনা, আহাদের মতো পাঁচ বছরের শিশু, মুগ্ধর মতো একটি তরুণ প্রাণ, আবু সাঈদের নির্ভীক চিত্তে নিজের শার্টের বোতাম খুলে পুলিশের গুলি বরণ- এই যে আত্মদান, এই আত্মদান তো একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল। 

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন স র সরক র র র আমল

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে পবিত্র রমজান মাসেও চলছে ডাকাত সালাদ্দিনের চাঁদাবাজি

পবিত্র রমজান মাসেও চলছে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার আলোচিত চাঁদাবাজ ডাকাত সালাউদ্দিন এবং তার বাহিনীর চাঁদাবাজি। সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা রীতিমত তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ইফতারীর দোকান থেকে শুরু করে ফলের দোকান, কাঁচাবাজরের ব্যবসায়ি তার চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। 

সম্প্রতি চাঁদাবাজির সময় হাতে নাতে সালাউদ্দিনের ভাই কামালকে শিক্ষার্থীরা আটক করে গণধোলাই দিয়ে সেনা ক্যাম্পে হস্তান্তর করলেও সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। এনিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। 

তাদের অভিযোগ, আইনশৃংখলাবাহিনীর নিস্ক্রীয়তায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিনী। তারা আরও বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল থেকে এক কিলোমিটার দুরুত্বে সেনা ক্যাম্প, র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়। অথচ সেই সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে ডাকাত সালাউদ্দিন। 

ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় ব্যবসায়িরা ভয়ে কেউ প্রতিবাদ তো দুরের কথা মুখ খুলতে সাহস করছে তার বিরুদ্ধে। আইনশৃংখলাবাহিনীর গোয়েন্দা টিম দিয়ে নজরদারী করলেই ডাকাত সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজির চিত্র ও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের অনেকেই।

স্থানীয়রা জানায়, সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে। তার দুই ভাই কামাল এবং বাবুলও অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের তিন ভাইয়ের নানা অপকর্ম এবং অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার ব্যবসায়ি ও এলাকাবাসী। সালাউদ্দিনের একটি বাহিনী রয়েছে। 

এই বাহিনীর মাধ্যমে ভুমিদস্যুতা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জবর দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই যা করে না ডাকাত সালাউদ্দিন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠে সালাউদ্দিন বাহিনী। আওয়ামীলীগের আমলে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া লোকজন এখন বলতে শুরু করেছে সালাউদ্দিন আগেও জালাইছে এখনো জালাচ্ছে। আমরা কি মুক্তি পাবো না?

৫ আগস্টের পর সালাউদ্দিনের ভাই কামাল সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের ফুটপাতের দোকানীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে। এক পর্যায়ে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জপুলস্থ বাজারের দোকান থেকে চাঁদা আদায়কালে কামালকে হাতে নাতে ধরে শিক্ষার্থীরা। পরে চাঁদাবাজ কামালকে গনধোলাই দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সোপর্দ করে।

আওয়ামীলীগের পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে সালাউদ্দিনসহ তার সহযোগীরা। শুধু সেখানেই নয় তার বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আবু সুফিয়ান নামে এক যুবককে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফল ব্যবসায়ী আনোয়ারসহ প্রায় ১০টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে সালাউদ্দিন বাহিনী। সালাউদ্দিনের দাবি প্রতি মাসে তাকে চাঁদা দিতে হবে। 

ডাকাত সালাউদ্দিনের একটি চাউলের দোকান রয়েছে। সেই দোকানে বসেই দিনরাত চলে নানা অপকর্মের শলাপরামর্শ।
সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় খাজা কাঁচাবাজার ও আবু তালেব মার্কেটের দোকানীদের বাধ্য করছে তার কাছ থেকে চাল ও আলু কিনতে। ব্যবসায়িরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি, চিটাগাং রোড, আদমজী বাজার থেকে পাইকারীভাবে চাল ও আলু কিনলে কিছুটা কম দামে পায়।

কিন্তু ওই ব্যবসায়িদের কোথাও থেকে চাল ও আলু আনতে দিচ্ছে না সালাউদ্দিন। সে তার লোকজন দিয়ে সকালে দোকান খোলার আগেই দোকানের সামনে আলু ও চালের বস্তা রেখে আসে। যাতে দোকানীরা বাধ্য হয় বেশি দামে তার চাল ও আলু কিনতে। 

বাজারের দোকানীরা জানায়, মানিক নামে এক নিরিহ ক্ষুদ্র দোকানদার কয়েকদিন আগে যাত্রাবাড়ি থেকে ৭ বস্তা আলু আনেন পাইকারী দামে। এই কথা জানতে পেরে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন আলুর বস্তাগুলো নিয়ে যায়। তখন মানিক বিভিন্ন লোকজনের কাছে ধর্ণা দিয়েও সহযোগিতা পায়নি।

পরে নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার দিকে সালাউদ্দিনের কাছে গিয়ে জানায়, সে আর অন্য কোথাও থেকে আলু আনবে না। তখন সালাউদ্দিন মুছলেকা নিয়ে আলু ফেরত দেয়। এছাড়া ফুটপাতে ভ্যানগাড়ি দিয়ে আলু সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রিতাকেও শান্তি দিচ্ছে না সালাউদ্দিন ও তার লোকজন।

সালাউদ্দিনের কাছ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের লোভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে। ভয়ে সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। মুখ বুঝে সব অত্যাচার জুলুম সহ্য করছে তারা। জয়নাল নামে এক ব্যক্তির বৈদ্যুতিক সংযোগ জোর করে দখল করে বিভিন্ন দোকানে ভাড়া দিয়ে টাকা উঠায় সালাউদ্দিনের ভাই কামাল।

স্থানীয়রা জানায়, রমজান শুরু হওয়ায় ইফতারীর দোকান এবং ফলের দোকান থেকেও ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি চলছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সালাউদ্দিন। আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্থ দোকানীকে হত্যার হুমকি দেয় ডাকাত সালাউদ্দিন ও তার বাহিণীর সদস্যরা।

এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামীলীগের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফুটপাতে চাঁদাবাজির ঘটনায় সালাউদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তদবিরে ছাড়া পায় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন। আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত এই ডাকাত সালাউদ্দিন এখন নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিচ্ছে।

তারা আরও জানায়, সালাউদ্দিন ১৯৯৮ সালে একটি ট্রাক বোঝাই ভারতীয় কাপড়ের চালান ডাকাতি করে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকায় রাখেন। পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে মালামাল উদ্ধার করেন।

কাপড় উদ্ধার করলেও তার বেশ কিছুদিন পর কাপড় বহনকারী ওই ট্রাকটি জয়দেবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এখনো সেই ডাকাতি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছয় মাসের সাজা হয় সালাউদ্দিনের। ৬ মাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আগের মতোই অপকর্ম চালিয়ে যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পুর্বপাড়া, দক্ষিণ মজিববাগ, আলামিন নগর এবং  সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকার খাজা কাচাবাজার, আবু তালেব মার্কেটসহ ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে। সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার জন্য তারা আইনশৃংখলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ