বিকেলের মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের
Published: 1st, February 2025 GMT
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেল ৫টা থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয়। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অনশনের মধ্যেই শুক্রবার দুপুর থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। শনিবার বিকেলের মধ্যে দাবি না মানা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় তারা বলেন, শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেল ও সড়কপথ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে। বিশ্ব ইজতেমার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড শিথিল থাকবে।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো.
শুক্রবার সকালে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনশনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকে জুমার নামাজ আদায় করবেন। প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার পরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন।
দীর্ঘ সময় বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক– সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছ। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু এখনই বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়াটা তো সম্ভব নয়। পরবর্তী সময়ে যত জায়গায় এটা নিয়ে কাজ হবে, আমি সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তোমরা আজকে রাতে ফিরে যাও।’
যুগ্ম সচিবের এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তা মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তারা স্লোগান দেন, ‘হয় তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়, না হয় মৃত্যু’। এ ঘোষণা দিয়ে রাতেও তারা গণঅনশন, রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। অনশনে গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বিকেলে তিতুমীর কলেজের সামনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। সড়কে তুলনামূলক যানবাহন কম হলেও শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন কলেজের সামনে দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী অনেকের সঙ্গে অবরোধকারীদের থেমে থেমেই বাগ্বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে।
এদিকে রাত ৯টার পর গুলশান-১ নম্বর সড়কের মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। গুলশানে অবরোধের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। সে জন্য আমরা এখন সড়ক অবরোধ করেছি।
‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো– রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ বা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন ও সাংবাদিকতা বিষয় চালু করা। এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার গুণগত মান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ অবর ধ ত ত ম র কল জ কল জ র অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনে অসুস্থ তিতুমীরের ২ ছাত্র ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে অনশনরত দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার বিকেলে তাদের অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অসুস্থরা হলেন, তিতুমীর কলেজের ম্যাথমেটিক্স বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ রায়হান (২৩) ও বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র রানা আহমেদ (২২)।
বর্তমানে তারা ঢামেকের নতুন বিল্ডিংয়ের মেডিসিন বিভাগের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তিতুমীর কলেজের সামনে অনশন অবস্থায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে তাদের সহকর্মীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।