দেশে বছরে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সারে
Published: 1st, February 2025 GMT
দেশে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ১২ শতাংশ মারা যায় ক্যান্সারে। প্রতিবছর দেশে নতুন করে ক্যান্সার রোগী যুক্ত হয় প্রতি লাখে ৫৩ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষকদের করা জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার বিএসএমএমইউয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক অংশগ্রহণকারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮.
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৪ জন। ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় প্রতি লাখে ১০৬ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ৯৬ জন)। গবেষণায় ৩৮টি ভিন্ন ধরণের শনাক্তকৃত ক্যান্সার পাওয়া গেছে।
ক্যান্সার রোগীদের ৯২.৫ শতাংশই ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২.৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫.১ শতাংশ। শনাক্তকৃত শীর্ষ ৫টি ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছে স্তন (১৬.৮ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বর (৮.৪ শতাংশ), পাকস্থলী (৭.০ শতাংশ), স্বরযন্ত্র (৭.০ শতাংশ) এবং জরায়ু মুখ (৫.১শতাংশ)।
পুরুষদের ক্ষেত্রে স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার ছিল সবচেয়ে বেশি (১৩.০ শতাংশ)। অন্যান্য প্রধান ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছে পাকস্থলী (১০.৪ শতাংশ), ফুসফুস (৮.৭ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহ্বর (৭.০ শতাংশ) এবং খাদ্যনালীর (৬.১ শতাংশ) ক্যান্সার।
নারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছিল স্তন ক্যান্সার (৩৬.৪ শতাংশ)। এছাড়া জরায়ু মুখের ক্যান্সার (১১.১ শতাংশ), ঠোঁট ও মুখগহবর (১০.১ শতাংশ), থাইরয়েড (৭.১ শতাংশ) এবং ডিম্বাশয় (ওভারি) (৫.১ শতাংশ) ছিল অন্যান্য সর্বাধিক শনাক্ত হওয়া ক্যান্সার।
১৯ শতাংশ নারী ক্যান্সার রোগী নারী-প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারে ভুগছিলেন (জরায়ুমুখ ১১ শতাংশ, ডিম্বাশয় ৫ শতাংশ এবং জরায়ু ৩ শতাংশ)।
ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৭ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ১১ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৬ শতাংশ হৃদরোগ, ৩ শতাংশ কিডনি জটিলতা এবং ২ শতাংশ স্ট্রোকে ভোগার তথ্য পাওয়া গেছে।
শনাক্তকৃত সকল ক্যান্সারের ৪৬ শতাংশই তামাক (ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন) সেবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ৬০ শতাংশ ক্যান্সার রোগী সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির মধ্যে একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। রোগ নির্ণয়ের পর ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেননি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশনের কাজ সম্পন্ন
বাংলাদেশের ৪০টি জনগোষ্ঠীর ভাষিক প্রতিনিধিবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘মাল্টিলিংঙ্গুয়াল ক্লাউড: ডিজিটাল রিসোর্সেস ফর ল্যাঙ্গুয়েজেস অফ বাংলাদেশ’ বিষয়ক কর্মশালা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ মেহেদি হাসান।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম।
বিশেষ অতিথি আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ভিডিও বার্তায় বলেন, “বিশ্বের প্রায় ৭১০০ ভাষার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভাষাই বিপন্ন হতে চলেছে। ভাষার টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চর্চা ও ডিজিটাল সংরক্ষণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪২টি ভাষার ডিজিটাইজেশন ও ট্রাইলিঙ্গুয়াল ডিকশনারি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা ভাষার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভাষাগত সংরক্ষণ নিয়ে প্রধান অতিথি শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের ভাষাগুলো শুধুমাত্র ভাষাগত পরিচয়ের অংশ নয় বরং এরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই ভাষাগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
তিনি এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ভাষিক মিলের লক্ষ্যণীয় দিকগুলো তুলে ধরেন। এই আলোকে বিপন্ন ভাষাগুলোকে কীভাবে প্রাণবন্ত করা যায়, এদিকে গুরুত্ব আরোপ করে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
কর্মশালায় ভাষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় পর্বে, ম্রো ভাষার ব্যাকরণ প্রণেতা ইয়াঙগান ম্রো তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “ম্রো ভাষার কিবোর্ড ও ফন্ট তৈরির ফলে আমাদের ভাষা সংরক্ষণ ও প্রচারের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই উদ্যোগ আমাদের ভাষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব, কারিগরি অধিবেশনে কমিউনিটি-ভিত্তিক ভাষা উন্নয়ন এবং ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মনিপুরি মৈতৈ ভাষার প্রতিনিধি একে শেরাম ইউবোর্ডে মনিপুরি মৈতৈ লিপি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া তিনি অঞ্চলভিত্তিতে ভাষা বিষয়ক কর্মশালা ও বাংলাদেশের ভাষার কিবোর্ড, ইউবোর্ডকে তরুণ প্রজন্মের সাথে পরিচয় ও তাদের মাঝে এর ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে আহবান জানান।
উক্ত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম সুমন।
অধ্যাপক ড. জফির বলেন, “একটি জাতির ভাষা মৃত্যুর সাথে সাথে সেই জাতির সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চারও মৃত্যু হয়, তাই যে ভাষাগুলোর ডিজিটাইজেশন করা হলো তার যে শব্দ, বাক্য, রূপমূল রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, বয়স্ক ব্যক্তি যে কিনা ঐ ভাষা থেকে দূরে আছে, সেক্ষেত্রে তার ভাষা নেওয়ার জন্য তার কাছে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা সেটা এই প্রকল্পে কতটা অনুসরণ করা হয়েছে, তা দেখার বিষয়।”
অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার একটি লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে সব ভাষাভাষী এই প্ল্যাটফর্মের আলোকে ভাষাগুলো শিখতে আগ্রহী হবে।”
একই সাথে প্রত্যেকটি ভাষার আইপিএ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ধাপে যদি এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বিভিন্ন ভাষার ধ্বনিগত দিক বিশ্লেষণ করে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করা যাবে।”
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ ভাষা সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ভাষার প্রয়োগও নিশ্চিত করনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই ডিজিটাল রিপোজিটরির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানটিতে ধারণাপত্র উপস্থাপন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নানা মন্তব্য ও প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করেন প্রকল্পের পরামর্শক, সঞ্চালক মামুন অর রশীদ।
কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা ভাষার ডিজিটাইজেশনের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা/হাসান/টিপু