বিকেলে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 1st, February 2025 GMT
আজ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাসব্যাপী দেশের বৃহত্তম অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধন করবেন।
অমর একুশে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বৃহস্পতিবার একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন।’
এ বছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ’।
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
বইমেলায় অংশগ্রহণকারী ৭০৮ জন প্রকাশকের মধ্যে ৯৯টি স্টল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, ৬০৯টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মাণ করা হবে। গত বছর বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
মেলায় ৩৭টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। একটি বাংলা একাডেমিতে এবং ৩৬টি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লিটল ম্যাগাজিন কর্নারটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে গাছের নীচে থাকবে, তাতে প্রায় ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল থাকবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কমিটির সভাপতি ড.
বইমেলার বিন্যাস গত বছরের মতোই থাকবে জানিয়ে সরকার আমিন বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় বহির্গমন গেটটি মন্দিরের গেটের কাছাকাছি সরানো হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের কাছে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি পয়েন্ট থাকবে।
সরকার আমিন জানান, মেলার সীমানা বরাবর খাবারের স্টলের আয়োজন করা হবে ও মেলা প্রাঙ্গণে ৩০টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে, যা মেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং সব প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, বই খোলা এবং ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ স্থাপন করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। মূল মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বাদে শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে বিশেষ ‘শিশু প্রহর’। প্রতিবছরের মতো এবারও মেলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের জন্য শিল্পাচার্য, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই বছর অমর একুশে বইমেলা পরিবেশবান্ধব এবং শূন্য-বর্জ্য হওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ‘সকল অংশগ্রহণকারী এবং বইমেলার অংশীদারদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট, কাপড় ও কাগজের মতো টেকসই উপকরণ ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত ও অনুরোধ করা হচ্ছে।’
বইমেলা প্রতি কর্মদিবসে সকলের জন্য বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘন্টা বিরতি থাকবে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
পূর্ববর্তী ঐতিহ্য অনুসরণ করে, ২০২৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি গুণগত মানসম্পন্ন প্রকাশনার জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরষ্কার, শৈল্পিক উৎকর্ষতায় মুনির চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, শিশু সাহিত্যে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও নান্দনিক স্টল ডিজাইনের জন্য কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল এক ড ম প র ঙ গণ এক ড ম র উপদ ষ ট বইম ল র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আটকের পর যুবদল নেতার মৃত্যু: সরকারের তদন্তের নির্দেশ
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস উইং জানায়, যেকোনো ধরনের হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা কঠোরভাবে নিন্দনীয়।
বর্তমান সরকারে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা রয়েছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে মানবাধিকার রক্ষা করা আমাদের সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে, যাদের বেশিরভাগই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলেও জানায় প্রেস উইং।
এর আগে শুক্রবার যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর হাসপাতালে তৌহিদুল ইসলাম (৪৫) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়। নিহত তৌহিদুল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে এবং ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।
ওই যুবদল নেতার ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা চার দিন আগে মারা গেছেন। শুক্রবার ছিল তার কুলখানি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি আমাদের বাড়ি আসে। এ সময় পোশাক ও সিভিলে থাকা কয়েকজন আমার ভাইয়ের কাছে অস্ত্র আছে– এমন অভিযোগে রুমে রুমে তল্লাশি করে। তার কাছে অস্ত্র নেই– আমরা বারবার বলার পরও তারা তৌহিদকে ধরে নিয়ে যায়। সকাল থেকে আমরা থানায় ভাইয়ের খোঁজ নিয়েও পাইনি।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মোরশেদ মোবাইল ফোনে আমাদের জানান, শহরতলির গোমতীপারের গোমতী বিলাস নামক স্থান থেকে আমার ভাইকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছেন। আমরা হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
হাসপাতালের সামনে আহাজারি করে আজাদ বলেন, রাজনীতির জন্য আমার ভাই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। তাকে কেন এভাবে মারা হলো? এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।
এসআই মোরশেদ বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোমতীপারের ঝাকুনিপাড়ার গোমতী বিলাসে গিয়ে যখন সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তৌহিদকে গাড়িতে ওঠাই, তখনও তার প্রাণ ছিল। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার সময় সে অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, পরিবার থেকে এখনও লিখিত অভিযোগ না পেলেও পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় একটি মামলা আছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, যুবদল নেতা তৌহিদ তাদের দলের একজন সৎ ও নিবেদিত নেতা ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার দুই মেয়ে রয়েছে। সে অস্ত্রধারী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের দাবি করছি।