চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে আজ থেকে চলবে আরও দুই ট্রেন
Published: 1st, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলরুটে আজ শনিবার থেকে চলাচল শুরু করছে ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ ও ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ নামে নতুন দুটি ট্রেন। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের দাবি ও লাভজনক রুট হওয়ায় এ দুটি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্টের কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ রুটে নতুন দুটি ট্রেন চলাচলের তথ্য জানানো হয়েছিল। প্রতিটি ট্রেন দিনে দুইবার চার দফায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে চলাচল করবে। ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার।
সৈকত এক্সপ্রেস: চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আবু জাফর মজুমদার জানান, আজ ভোর সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে প্রথমে ছেড়ে যাবে সৈকত এক্সপ্রেস। ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে। এ জন্য গত ২৩ জানুয়ারি সৈকত এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়। ফিরতি পথে ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছাড়বে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে।
প্রবাল এক্সপ্রেস: অন্যদিকে প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে; চট্টগ্রাম পৌঁছাবে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে। একই ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ছাড়বে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে এবং কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টায়। দুটি ট্রেনই যাত্রাপথে বিরতি দেবে ৪টি স্টেশনে। উভয় ট্রেনেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৫ টাকা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লপথ
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিপক্ষীয় আস্থা পুনর্নির্মাণের সূচনা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ব্যাংককে শুক্রবার অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটিকে আমরা ইতিবাচক বলিয়া মনে করি। বিশেষত দক্ষিণ এশীয় ভ্রাতৃত্ববোধ গড়িয়া তুলিবার ক্ষেত্রে ইহা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিবেচিত হইতে পারে। প্রথমত, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহের জোট বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হইল, যখন বিশেষ কিছু কারণে–যাহার জন্য কোনো দেশই এককভাবে দায়ী নহে–দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক প্রায় তলানিতে ঠেকিয়াছিল। অথচ দুই দেশেরই শীর্ষ নেতারা মনে করিয়া থাকেন, ভারত ও বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিকভাবে নহে, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনেও আবদ্ধ। অতএব, শুক্রবারের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কে জমাটবদ্ধ বরফ গলাইতে সহযোগিতা করিতে পারে। দ্বিতীয়ত, বহু বৎসর যাবৎ ধরিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংহতি ও সহযোগিতা চ্যালেঞ্জের মুখে রহিয়াছে। বিশেষ করিয়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ অনেক সম্ভাবনা লইয়া গঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট–সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হইয়া রহিয়াছে। ড. ইউনূস সম্প্রতি সার্ককে সক্রিয় করিবার প্রয়াস শুরু করিয়াছেন, যেই ক্ষেত্রে শুক্রবারের বৈঠকটি অবদান রাখিতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা জানিয়াছি, বাংলাদেশের পক্ষ হইতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন, তিস্তাসহ আন্তঃসীমান্ত নদীসমূহের পানি ন্যায়সংগতভাবে বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলি ভারতের শীর্ষ নেতার সমক্ষে উপস্থাপন করা হইয়াছে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ হইতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সংখ্যালঘু নির্যাতনের যথাযথ তদন্ত ও বিচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হইয়াছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হইতে পারে, পরস্পরের নিকট স্বীয় ফর্দ তুলিয়া ধরিবার মধ্য দিয়াই বৈঠকটি সমাপ্ত হইয়াছে। তবে ইহাকে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনার সূত্রপাত হিসেবেও বর্ণনা করা যায়। স্মরণে রাখিতে হইবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম ড. ইউনূসের সহিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হইল। উভয় পক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিলে এই সম্পর্ক আগামী দিনসমূহে আরও গভীর হইবে।
জন্মলগ্ন হইতে বাংলাদেশ সকলের সহিত বন্ধুত্ব কাহারও সহিত শত্রুতা নহে– এই পররাষ্ট্রনীতি লইয়া চলিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হইলেও বাংলাদেশের বিগত প্রায় সকল সরকারই এই নীতি মানিয়া চলিয়াছে। সম্ভবত বাংলাদেশের এই নীতির কারণে সার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকাকে বাছিয়া লওয়া হইয়াছিল। এই নীতির সুফল হিসেবে ইতোপূর্বে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সহিত দীর্ঘদিন ধরিয়া বিরাজমান সমুদ্রসীমা, ভৌগোলিক সীমারেখার ন্যায় একাধিক জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হইয়াছে। আমরা বিশ্বাস করি, মিয়ানমারের সহিত রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভারতের সহিত আন্তঃনদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যাসহ যেই সকল সমস্যা রহিয়া গিয়াছে সেইগুলিও ওই একই প্রক্রিয়ায় নিরসণ করা যাইবে। তবে ইহা সত্য, এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের আচরণ প্রায়শই প্রতিবেশীদের জন্য অস্বস্তির কারণ হইয়া দাঁড়ায়, যাহা হইতে দেশটিকে বাহির হইতে হইবে। সেই বহুলশ্রুত প্রবাদ বাক্যটি কে না জানে যে, এক হাতে যদ্রূপ তালি বাজে না, তদ্রূপ বন্ধুত্বও একতরফা হয় না। উভয়ের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতা এই ক্ষেত্রে জরুরি। বাংলাদেশ বা ভারত কেহই ইচ্ছা করিলে পরস্পরকে প্রতিবেশীর তালিকা হইতে বাদ দিতে পারিবে না। জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার জন্য উভয়ের নিকট উভয়ে অপরিহার্য। তদুপরি, ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত যদ্রূপ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অমিত সম্ভাবনা উন্মোচিত করিতে পারে তদ্রূপ অন্তত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল তথা সাত বোন বলিয়া খ্যাত রাজ্যসমূহের উন্নয়নে বাংলাদেশ অতুলনীয় ভূমিকা পালন করিতে পারে। বৈশ্বিক কূটনীতিতেও দুই দেশের মিত্রতা উভয়কে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে।
এই সকল বিষয় বিবেচনায় রাখিয়া দ্বিপক্ষীয় আস্থার ভিত্তি নির্মাণে উভয় দেশের নেতৃত্ব সচেষ্ট থাকিবে বলিয়া আমরা প্রত্যাশা করি।