উপন্যাস লিখবার সময় আমি অন্য যেকোন লেখা থেকে বিরত থাকি: পাপড়ি
Published: 1st, February 2025 GMT
পাপড়ি রহমান একাধারে কথাশিল্পী, সম্পাদক, গবেষক এবং অনুবাদক। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন ‘খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’। ২০২৫ বইমেলায় পাপড়ি রহমানের একটি উপন্যাস এবং একটি গল্পের বই প্রকাশ হচ্ছে। নতুন বইয়ের প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন পাপড়ি রহমান। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: বইমেলা ২০২৫ প্রকাশতিব্য উপন্যাস ' ঊষর দিন, ধূসর রাত'—এর প্রেক্ষাপট জানতে চাচ্ছি।
পাপড়ি রহমান: যারা আমার পাঠক, তারা কিন্তু জানেন যে, আমি প্রান্তিক জনজীবন নিয়েই লিখি বা লিখতে ভালোবাসি, স্বচ্ছন্দ বোধ করি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন বরাবরই। অধ্যাপক ড.
আমি চেষ্টা করেছি অন্যরকম জীবন নিয়ে লিখতে। রাজনৈতিক বিষয়াদি অত স্পষ্ট করে বলা না গেলেও টাচ করে গিয়েছি। ইঙ্গিত দিয়েছি। মানুষের মনের চেতনার গভীর স্তরগুলি অনুসন্ধান করতে চেয়েছি। জানিনা কী পেরেছি, কতোটা পেরেছি? আমার পাঠক ও শিক্ষকেরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলছি, এই ঢাকাশহরের বাস্তব জীবনের গল্পগুলোই বলার চেষ্টা করেছি আমি। পাঠক, প্রতিটি চরিত্রকে চিনতে পারবেন। একই সঙ্গে চমকেও উঠবেন হয়তো ।
রাইজিংবিডি: 'হেমন্তের দিনে' গল্পগ্রন্থটি কী ধরনের গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে।
পাপড়ি রহমান: আমি চাই পাঠক আমার লেখায় ডাইভার্সিটি খুঁজে পাক। গত ৫ বছরে লেখা ৫ গল্প আর ৯৫/২০০১/২০০৩ এর তিনটি গল্প মোট ৮ গল্প নিয়ে এ বই। মুক্তিযুদ্ধের গল্প আমি খুব অল্প লিখেছি। কারণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভেবেচিন্তে ও যত্ন নিয়ে লিখতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি খুবই সেনসেটিভ ইস্যু। এই বইতে একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প আছে। প্রেম ও প্রতারণার গল্প আছে। ঢাকাশহরের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের গল্প আছে। প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধের গল্প আছে। ৫ বছর বাদে প্রকাশিত হলো আমার নতুন কোনো গল্পগ্রন্থ। প্রকাশ করেছে ‘ঐতিহ্য’।
আরো পড়ুন:
হাজারমুখীরা আমাদের চারপাশেই থাকে: কাজী লাবণ্য
‘বিশ্বের বিভিন্ন অনুবাদ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে আমরা পিছিয়ে আছি’
রাইজিংবিডি: আপনিতো গল্প এবং উপন্যাস দুই’ই লেখেন। একযোগে গল্প এবং উপন্যাস লেখার কাজ কীভাবে এগিয়ে নেন।
পাপড়ি রহমান: হ্যাঁ, আমি গল্প ও উপন্যাসেই কাজ করি। এর বাইরে সম্পাদনাও করি। বা করেছি।কিন্তু কে বললো আমি একযোগে লিখি? উপন্যাস লিখবার সময় আমি অন্য যেকোন লেখা থেকে বিরত থাকি। বিরত থাকতে চাই। এই উপন্যাসটি আমার চতুর্থ উপন্যাস 'নদীধারা আবাসিক এলাকা' প্রকাশের ৬ বছর পর বেরুলো। আর গল্প নিয়ে তো বললামই। বই করার মতো গল্প গুছাতে বছর পাঁচেক লেগে যায়। তবে এ বছর মিরাকল ঘটলো, আমার নতুন উপন্যাস ও নতুন গল্পের বই একই মেলায় প্রকাশিত হলো।
রাইজিংবিডি: আপনার গল্প সাধারণত গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে, আপনার বেড়ে ওঠা শহরে, গ্রামকে এতো ভালো উপলব্ধি কীভাবে করতে পারেন?
পাপড়ি রহমান: আমার শৈশব কিন্তু গ্রামে কেটেছে। মুক্তিযুদ্ধের আগের বছরগুলি। গ্রামের ওই মাটি আমাকে আজও টানে। বা মায়ামমতায় ভরা আমার দাদার বাড়ির পারিবারিক পরিবেশ। বা ওই পুকুর, গুল্ম, ধানক্ষেত, শীতকাল মানেই পিঠাপুলির ধুম। সেই পিঠা শরীকদের সবার ঘরে পৌঁছে দেওয়া। তবে গ্রাম বা শহর এখানে ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হলো আমি নিবিড় পর্যবেক্ষণ ছাড়া কিছুই প্রায় লিখিনা। বা লিখতে পারিনা। এটা আমার এক ধরনের সীমাবদ্ধতাও বলতে পারো।
রাইজিংবিডি: অনেকেই বলেন পাপড়ি রহমানের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া উচিত, ‘না প্রাপ্তি’ কে কীভাবে দেখেন?
পাপড়ি রহমান: কোনো পুরস্কার কি উত্তম সাহিত্য সৃষ্টি করে? নাকি উত্তম সাহিত্যকে পুরস্কৃত করা হয়? পুরস্কার যদি উত্তম সাহিত্য সৃষ্টিতে অবশ্যম্ভাবী না হয়, তাহলে একজন লেখকের জন্য পুরস্কারের প্রয়োজন কী? এখানে কে ধন্য হয়? লেখক নাকি পুরস্কার? কত নোবেল লরিয়েট, কত রাস্ট্রীয় পুরস্কার বাহকেরা তল্পিতল্পাসহ কে কোথায় হারিয়ে গেল, তার ইয়াত্তা নেই। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে টেক্সটই তো, নাকি? পাঠক পুরস্কার মনে রাখে না, মনে রাখে একজন লেখকের কাজ। কবি জীবনানন্দ দাশ কয়টা পুরস্কার পেয়েছিলেন? কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহির মৃত্যুর আগে পুরস্কৃত হননি, কিন্তু পুরস্কারের না পাওয়ার কারণে কি উনার লেখা থেমে ছিল? বা উনার লেখার মান ক্ষুন্ন হয়েছিল? ‘ডলু নদীর হাওয়া’ বা ‘ডুমুর খেকো মানুষ’এর কথা সাহিত্যপ্রেমীরা আজীবন স্মরণ রাখবে। তবে আরেকটি কথা, আমাদের এখানে পুরস্কার পাওয়ার জন্য যে যে যোগ্যতা লাগে, তা বোধ করি আমার নেই। এবং এই 'না প্রাপ্তি' কিন্তু এক ধরনের প্রাপ্তিই। এই 'না প্রাপ্তির' জন্যই হয়তো মনে হয়, লাইফ ইজ রিয়েলি বিউটিফুল।
রাইজিংবিডি: বাংলাদেশের ছোটগল্প সম্পাদনা করেছেন আবার এলিস মানরোর ছোটগল্পও সম্পাদনা করেছেন। হাসান আজিজুল হক, মানিক বন্দোপাধ্যায়দের গল্পকে দেখিয়েছেন মানরোর গল্পের সমান্তরালে। তার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশের ছোটগল্পের মান কোনো অংশেই কম নয় কিন্তু বিশ্ব দরবারের নানাভাষী পাঠকদের কাছে উল্লেখযোগ্যভাবে পৌঁছাতে পারছে না কেন?
পাপড়ি রহমান: এটা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছি। বিদেশি সাহিত্যের তুলনায় বাংলাসাহিত্যের মান কোনোভাবেই নগন্য নয়। কেন বা কীভাবে পৌঁছাবে আমাদের লেখা বিশ্বের কাছে? যদি সেভাবে অনুবাদ না হয়? অনুবাদে জোর দিতে হবে। বাংলা একাডেমি কি করে এ বিষয়ে? আমাদের ক্ল্যাসিকগুলি উত্তম অনুবাদে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয়াটা বাংলা একাডেমির দায়িত্বের মাঝেই পড়ে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি বই ছাড়া তেমন কোনো অনুবাদের কথা তো শুনিনি। বা দেখিনি।
রাইজিংবিডি: প্রকাশনীগুলির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? কোন কোন প্রকাশক ঠিকঠাকমতো রয়্যালিটি প্রদান করেছেন?
পাপড়ি রহমান: এ ক্ষেত্রে মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে। কেউ কেউ সঠিক তথ্য গোপন করে বলেন, আপনার বই তো চলেই না। ১৭ বছর ধরে প্রথম মুদ্রণের বই-ই উনারা দেদারসে বিক্রি করছেন। লামছাম রয়্যালিটি বুঝিয়ে দিয়ে বাকী বইয়ের হিসাবই আর দেননি আমাকে। বা দ্বিতীয় মুদ্রণ বা তৃতীয় মুদ্রণ এটা জানানো দূরে থাকুক।আবার কোনো কোনো প্রকাশক বাসায় এসে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে সম্মানী দিয়ে গেছেন। কেউ কেউ বলছেন, আপা, এই বইটিও শেষ হবার পথে, দ্বিতীয় মুদ্রণে যেতে হবে অচিরেই। একটা বইয়ের দ্বিতীয় বা তৃতীয় মুদ্রণ কি লেখক ও প্রকাশকের জন্য আনন্দের নয়? তাহলে অযথা এসব কারচুপির মানে কী? আর একজন লেখককে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে। লেখকের প্রাপ্য পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিতে হবে। তেমনি একজন লেখকও তার প্রকাশককে সম্মানিত মনে করবে।বিষয়টি কিন্তু পারিবারিক বন্ধনের মতো হওয়া উচিত। কিন্তু এই প্রকাশনার জগত আজব ভেলকির জায়গা। অন্য সবকিছুর মতো দলাদলিটাও এখানে ভালোভাবেই চলে। বা লেগপুলিং। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকেই এমন বলছি।
রাইজিংবিডি: কেমন বইমেলা চান?
পাপড়ি রহমান: বইমেলা যেন বইমেলাই হয়, বাণিজ্য মেলা না হয়ে ওঠে। ধুলাবালি মুক্ত, নতুন বই আর নতুন লেখকদের ভিড় আর প্রাণচাঞ্চল্য ভরপুর মেলা চাই। নতুন লেখক, নতুন লেখা না এলে চলবে নাকি? আমাদের জীবন তো সায়াহ্নে পৌঁছে গেছে। আর আমি কিছুই কুক্ষিগত করে রাখতে চাইনা। রাখিনি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আঁধারে।
একেবারে সদ্য তরুণটির উজ্জ্বল মুখচ্ছবি মেলায় দেখতে চাই। তরুণদের লেখা বিমুগ্ধ হয়ে পড়তে চাই। এতসব প্রশ্ন করে আমাকে অনেক কথা বলতে দেওয়ার জন্য তোমাকে আন্তরিক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপন য স কর ছ ন র জন য জ বন ন বইম ল রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতারণা’: হিটলারের ডায়েরি কীভাবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে বোকা বানিয়েছিল
এপ্রিল ১৯৮৩। জার্মান সাময়িকী ‘স্টার্ন’ ও ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য সানডে টাইমস’ দাবি করে, শতাব্দীর সবচেয়ে অসাধারণ ঐতিহাসিক আবিষ্কারের একটি করেছে তারা। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রতারণা বা ঠকবাজির একটি। আর এ কেলেঙ্কারির ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি ও সুনাম নষ্ট হয়।
৪২ বছর আগে ১৯৮৩ সালের ২৫ এপ্রিল নামকরা জার্মান পত্রিকা স্টার্ন সবার আগে এমন সংবাদ প্রকাশ করে, যা তাদের মতে ইতিহাসের সবচেয়ে চমকপ্রদ খবর। সেটি হলো, জার্মানির স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলারের অজানা ব্যক্তিগত ডায়েরিগুলো। সারা বিশ্বে ‘এ অসাধারণ এক্সক্লুসিভ খবর’ ছড়িয়ে দিতে হামবুর্গে একই দিন একটি সংবাদ সম্মেলনও আয়োজন করে সংবাদভিত্তিক সাপ্তাহিকীটি। সত্যিই সংবাদটি বিশ্বজুড়ে শিরোনাম হয়ে ওঠে। তবে তারা যেভাবে আশা করেছিল, সেভাবে নয়।
এ ঘটনার তিন দিন আগে স্টার্নের লন্ডন সম্পাদক পিটার উইকম্যান বিবিসিকে বলেন, তাঁরা ‘একেবারেই নিশ্চিত’, তাঁরা হিটলারের আসল ডায়েরিগুলো হাতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে শুরুতে আমরা সন্দেহে ছিলাম। কিন্তু আমাদের একজন গ্রাফোলজিস্ট সেগুলো দেখছেন, আমাদের একজন বিশেষজ্ঞ কাগজপত্রগুলো পরীক্ষা করেছেন। অধ্যাপক ট্রেভর–রোপারের মতো ইতিহাসবিদদেরও তা দেখিয়েছি আমরা। সবাই সম্মত হয়েছেন, এগুলো আসল।’
আরও পড়ুনবাস্তুহীন হিটলার যেভাবে জার্মানির সর্বোচ্চ নেতা হলেন২৯ জানুয়ারি ২০২৫ডায়েরিগুলো হাতে লেখা। ব্যাপ্তিকাল ১৯৩২ থেকে ১৯৪৫ সাল। অর্থাৎ হিটলারের থার্ড রিখ (পুরো নাৎসি শাসনকাল) পর্যন্ত। উইকম্যান বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘এই ৬০টি ডায়েরি দেখতে স্কুলখাতার মতো। তবে শক্ত মলাট রয়েছে। এগুলোর বাইরের দিকে স্বস্তিকা চিহ্ন (হিটলারের নাৎসি দলের প্রতীক) ও ইগলের সিল এবং ভেতরে নিশ্চিত করেই হিটলারের খুব পাতলা গোথিক হস্তাক্ষর।’
এ বিষয়ে শুরুতে আমরা সন্দেহে ছিলাম। কিন্তু আমাদের একজন গ্রাফোলজিস্ট সেগুলো দেখছেন, আমাদের একজন বিশেষজ্ঞ কাগজপত্রগুলো পরীক্ষা করেছেন। অধ্যাপক ট্রেভর-রোপারের মতো ইতিহাসবিদদেরও তা দেখিয়েছি আমরা। সবাই সম্মত হয়েছেন, এগুলো আসল।পিটার উইকম্যান, স্টার্নের লন্ডন সম্পাদকস্টার্নের কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস ছিল, তাদের এ আবিষ্কার নাৎসি নেতাকে নিয়ে আগে জানা সবকিছু বদলে দিতে পারে। ডায়েরির লেখা ছিল চমকে ওঠার মতো। তাতে ছিল হিটলারকে নিয়ে খুব কম জানা সংবেদনশীল নানা তথ্য। যেমন নিজের পেট ফাঁপা ও মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা থেকে শুরু করে অলিম্পিকের টিকিট পাইয়ে দিতে বান্ধবী ইভা ব্রাউনের চাপ দেওয়া, স্তালিনকে জন্মদিনের টেলিগ্রাম ‘দ্য ওল্ড ফক্স’ পাঠানো পর্যন্ত নানা কিছু। ডায়েরিতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, হিটলার হলোকাস্ট (৬০ লাখ ইহুদি নিধন) সম্পর্কে জানতেন না, অথচ তাঁর নামেই এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল; যা ছিল আশ্চর্যজনক।
ডায়েরিগুলো খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিলেন স্টার্নের সাংবাদিক গার্ড হেইডম্যান। তিনি আগে থেকেই নাৎসি স্মৃতিবিজড়িত স্মারক সংগ্রহে একজন আসক্ত ব্যক্তি হিসেবে স্টার্নে পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে হেইডম্যানকে হিটলারের সেকেন্ড–ইন–কমান্ড হারম্যান গোরিংয়ের জরাজীর্ণ একটি নৌযান নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। পরে কিছু অর্থ খরচে তা কিনে সংস্কার করেন। গোরিংয়ের মেয়ে এডার সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান তিনি। এডা তাঁকে কয়েকজন সাবেক নাৎসির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এই সূত্র ধরেই হিটলারের ডায়েরি পাওয়ার কথা জানান সাংবাদিক হেইডম্যান।
আরও পড়ুনসস্ত্রীক আত্মহত্যার আগে যে দুটি কাজ করেছিলেন হিটলার৩০ এপ্রিল ২০২৪হেইডম্যান দাবি করেন, ডায়েরিগুলো একটি উড়োজাহাজে করে আনা হচ্ছিল। পথে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনার পর ডায়েরিগুলো একটি খড়কুটোর পালায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে এগুলো পূর্ব জার্মানির একজন সংগ্রাহকের কাছে যায়। এই সংগ্রাহক ডায়েরিগুলো বিক্রির প্রস্তাব দিলে তিনি (হেইডম্যান) তা কিনতে স্টার্ন কর্তৃপক্ষ ও তাঁর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন।
নাৎসি স্বৈরশাসককে নিয়ে অজানা ও চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে, এমন প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ডায়েরিগুলো কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে স্টার্ন। ডায়েরির নির্দিষ্ট কয়েকটি পাতা হস্তলেখাবিশেষজ্ঞ ও ইতিহাসবিদদের কাছে পাঠিয়ে এর বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তারা। এরপর এ সাময়িকীর কর্তৃপক্ষ প্রায় ৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন (৯৩ লাখ) ডয়েচমার্কসে (প্রায় ২৩ লাখ পাউন্ড) ডায়েরিগুলো কিনে নিরাপত্তার জন্য তা সুইস ভল্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এগুলো হিটলারের লেখা প্রায় ৬০টি ডায়েরিই শুধু নয়, তাতে ছিল প্রায় ৩০০টি চিত্রাঙ্কন, ছবি ও ব্যক্তিগত নথিপত্র, যেমন তাঁর পার্টির কার্ড। আমার মনে আছে, কিছু চিত্রাঙ্কন আছে, যা তিনি (হিটলার) আর্ট স্কুলে জমা দিয়েছিলেন, যখন তিনি তরুণ ছিলেন এবং আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার আশা করছিলেন। ডায়েরিতে আছে চিত্রকর্ম, তৈলচিত্র ও আরও কিছু। এখন একজন জালিয়াতকে এত বড় জালিয়াতি করতে খুব দক্ষ হতে হবে।চার্লস ডগলাস-হোম, দ্য টাইমসের সম্পাদকস্টার্নের পক্ষে যে ইতিহাসবিদ ডায়েরিগুলো প্রথম পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেন, তিনি হলেন অধ্যাপক হিউ ট্রেভর-রোপার। লর্ড ড্যাক্রে অব গ্লানটন নামও পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে হিউ ট্রেভর–রোপার ‘দ্য লাস্ট ডেজ অব হিটলার’ (হিটলারের শেষ দিনগুলো) নামে একটি বই লেখেন। এটি তাঁর বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। নাৎসি স্বৈরশাসকের বিষয়ে তাঁকে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে ধরা হতো। দ্য টাইমসের একজন স্বাধীন পরিচালকও ছিলেন তিনি। এর দুই বছর আগে ‘মিডিয়া মোগল’ রুপার্ট মারডক সহযোগী পত্রিকা দ্য সানডে টাইমসের সঙ্গে এটিও নিজ মালিকানায় নেন।
আরও পড়ুনক্ষোভের মধ্যেই হিটলারের চিত্রকর্ম নিলামে০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯লর্ড ড্যাক্রে ডায়েরিগুলোর বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে প্রথমে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু পরে তা দেখতে সুইজারল্যান্ডে উড়ে যান। ডায়েরিগুলো খুঁজে পাওয়ার কাহিনি শুনে তাঁর মত বদলে যেতে শুরু করে এবং তাঁকে ভুল করে বলা হয়েছিল যে রাসায়নিক পরীক্ষায় এগুলো যুদ্ধ-পূর্ববর্তী বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই ইতিহাসবিদ বিশেষ করে ডায়েরিগুলোর বিশালতা দেখে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।
দ্য টাইমসের সম্পাদক চার্লস ডগলাস-হোম ১৯৮৩ সালের ২২ এপ্রিল বিবিসিকে বলেন, ‘মূল ডায়েরিগুলো দেখার সময় হিউ ট্রেভর-রোপারকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল এবং অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ না হয়েও আমাকে তাড়িত করেছিল, তা হলো এর বিশালতা।’
ডায়েরির লেখা ছিল চমকে ওঠার মতো। তাতে ছিল হিটলারকে নিয়ে খুব কম জানা সংবেদনশীল নানা তথ্য। যেমন নিজের পেট ফাঁপা ও মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা থেকে শুরু করে অলিম্পিকের টিকিট পাইয়ে দিতে বান্ধবী ইভা ব্রাউনের চাপ দেওয়া, স্তালিনকে জন্মদিনের টেলিগ্রাম ‘দ্য ওল্ড ফক্স’ পাঠানো পর্যন্ত নানা কিছু।আরও পড়ুনহিটলার আমলের ট্যাংক লুকিয়ে রাখায় মামলা০১ জুন ২০২১চার্লস ডগলাস–হোম আরও বলেন, এই আর্কাইভ ছিল বিশাল পরিসরের। এগুলো হিটলারের লেখা প্রায় ৬০টি ডায়েরিই শুধু নয়, তাতে ছিল প্রায় ৩০০টি চিত্রাঙ্কন, ছবি ও ব্যক্তিগত নথিপত্র, যেমন তাঁর পার্টির কার্ড। আমার মনে আছে, কিছু চিত্রাঙ্কন আছে, যা তিনি (হিটলার) আর্ট স্কুলে জমা দিয়েছিলেন যখন তিনি তরুণ ছিলেন এবং আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার আশা করছিলেন। ডায়েরিতে আছে চিত্রকর্ম, তৈলচিত্র ও আরও কিছু। এখন একজন জালিয়াতকে এত বড় জালিয়াতি করতে খুব দক্ষ হতে হবে।’
লর্ড ড্যাক্রে ডায়েরিগুলো আসল ছিল বলে বিশ্বাস করেন। এমনকি এর সাফাই গেয়ে দ্য টাইমসে নিবন্ধও লেখেন। তিনি ঘোষণা করেন, এ ডায়েরির আলোকে ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। হিটলারের ডায়েরি পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, এর স্বত্ব নিয়ে ‘দরপত্র যুদ্ধ’ শুরু হয়। ব্যক্তিগতভাবে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে জুরিখে উড়ে যান সানডে টাইমসের স্বত্বাধিকারী মারডক।
স্বত্ব নিয়ে চুক্তি সই হওয়ার পর স্টার্ন সাময়িকী তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে হিটলারের ডায়েরি পাওয়ার খবর বিশ্ববাসীকে জানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ডায়েরিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার আগে, এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, বিশেষত সানডে টাইমসের কর্মীরা। তাঁরা আগে একবার ভুয়া ডায়েরি কিনে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে সংবাদপত্রটি ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনির লেখা বলে চালানো ডায়েরির জন্য আগাম অর্থ পরিশোধ করেছিল।
সানডে টাইমসের অনুসন্ধানী দলে কাজ করেছেন ফিলিপ নাইটলি। ২০১১ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের উইটনেস হিস্ট্রিকে তিনি বলেন, ওই ডায়েরি মিলান শহরের বাইরে ভার্সেলিতে বসবাসকারী দুই নারীর লেখা বলে পরে জানা যায়।
আরও পড়ুনচাপে পড়ে যে বইটি লিখতে হয়েছিল হিটলারকে১৮ জুলাই ২০২৪প্রতারণার বিষয় উন্মোচন
যাহোক, মারডক হিটলারের ডায়েরিগুলো তাঁরই হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন এবং সম্পাদক ফ্রাঙ্ক জাইলসের আপত্তি সত্ত্বেও স্টার্নের সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন ‘ওয়ার্ল্ড এক্সক্লুসিভ’ শিরোনামে দ্য সানডে টাইমসে সেটি দ্রুত ছাপার জন্য তাগাদা দেন।
সম্পাদক জাইলস লর্ড ড্যাক্রের কাছে ডায়েরি সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এই ইতিহাসবিদ স্বীকার করেন যে তিনি ডায়েরির সত্যতা সম্পর্কে ‘১৮০ ডিগ্রি ঘুরে’ যাওয়ার মতো সন্দেহ পোষণ করেননি। ফিলিপ নাইটলি বলেন, ‘(এ কথা শোনার পর) কক্ষের সবাই, সংবাদপত্রের সব নির্বাহী হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়েন। কারণ, আমরা আমাদের প্রধান প্রমাণকারীকে হারিয়ে ফেলেছি। এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, ডায়েরিগুলো একেবারেই ভুয়া ছিল।’
নাইটলি ওই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘দ্য সানডে টাইমস তখনো ছাপা থামাতে ও পত্রিকার প্রথম পাতা বদলাতে পারত। সম্পাদক জাইলস যখন স্বত্বাধিকারীকে ফোন করেন, তখন মারডক বলেন, “ড্যাক্রে সব সময় দোদুল্যমান। তাঁকে থামাও। আমরা (ডায়েরি) ছাপাব।”’
আরও পড়ুনহিটলারের জন্মভিটায় হচ্ছে থানা২২ আগস্ট ২০২৩এদিকে স্টার্ন সাময়িকীর জন্য, পরের দিনের সংবাদ সম্মেলন আরও খারাপ হয়ে ওঠে। প্রধান সম্পাদক পিটার কোচ ঘোষণা করেন, তিনি শতভাগ নিশ্চিত, হিটলার ডায়েরিগুলোর প্রতিটি শব্দ লিখেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক লর্ড ড্যাক্রে, যিনি ডায়েরিগুলো আসল বলে প্রমাণ করেছিলেন, প্রশ্নের মুখে স্বীকার করেন যে তিনি এটা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্টার্নের নির্বাহীদের আতঙ্কিত মুখ দেখে লর্ড ড্যাক্রে বলেন, তিনি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়া ও হিটলারের কথিত ডায়েরি পাওয়ার মধ্যে কোনো যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি অবশ্যই বলব, আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। কোনো কিছু ঐতিহাসিকভাবে যাচাইয়ের যে স্বাভাবিক পদ্ধতিগুলো রয়েছে, সাংবাদিকতায় দ্রুত সংবাদ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কাছে সম্ভবত কিছুটা হলেও তা ত্যাগ করা হয়েছে।’
এ সংবাদ সম্মেলনের পরদিন চার্লস হ্যামিল্টন নামের একজন অটোগ্রাফবিশেষজ্ঞ বিবিসি ব্রেকফাস্টকে বলেন, ডায়েরির পাতাগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তা জাল হওয়ার বিষয়টি টের পান। হ্যামিল্টন বলেন, তিনি জানতেন, ডায়েরিতে থাকা স্বাক্ষর সঠিক নয়। কারণ, হিটলার–সম্পর্কিত অনেক জাল নথিপত্র নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে।
চার্লস হ্যামিল্টন বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি (ডায়েরি ভুয়া হওয়ার বিষয়টি) কোনো প্রশ্ন ও বিশেষজ্ঞদের প্যানেল ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হবে। পুরো বিষয় তখন মুখ থুবড়ে পড়বে এবং এটি মানবজাতির ইতিহাসে একটি বড় প্রতারণা হয়ে থাকবে।’
হ্যামিল্টন ভুল বলেননি। দুই সপ্তাহের মধ্যে নিবিড় ফরেনসিক বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে, হিটলারের ডায়েরি ছিল ভুয়া। তাঁর কথিত স্বাক্ষরও ছিল ভুয়া। রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা যায়, ডায়েরিগুলোর কাগজ, আঠা ও কালি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ছাড়া আগে তৈরি করা হয়নি। ডায়েরির লেখায় ত্রুটি ছিল, ব্যবহার করা হয়েছিল আধুনিক ভাষা, ছিল ঐতিহাসিক অসংগতি। ফলে এ ইঙ্গিতও পাওয়া যায়, হিটলার হয়তো ডায়েরির তথ্যগুলো সম্পর্কে কিছু জানতেন না।
সত্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পর দ্রুতই ডায়েরি ছাপানো বন্ধ করে দেয় দ্য সানডে টাইমস পত্রিকা। এ বিষয়ে তারা দুঃখ প্রকাশ করে। প্রতারিত হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে স্টার্ন সাময়িকীও।
আরও পড়ুনহিটলারের জন্মস্থানে হবে মানবাধিকার প্রশিক্ষণকেন্দ্র২৯ মে ২০২৩সুনামে ধস, সার্কুলেশন বৃদ্ধি
চাপের মুখে স্টার্নের সাংবাদিক গার্ড হেইডম্যান স্বীকার করেন, এসব ডায়েরির লেখক পূর্ব জার্মানির কনরাড কুজাউ নামের একজন প্রতারক। তিনি একজন দক্ষ শিল্পী ছিলেন। কিন্তু তাঁর জালিয়াতি খুব বেশি আধুনিক ঘরানার ছিল না। এমনকি ডায়েরির মলাটেও ভুল করে হিটলারের আদ্যক্ষর ‘এএইচ’ না লিখে তিনি লিখেছিলেন ‘এফএইচ’। আর চা ঢেলে কাগজ পুরোনো করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে কুজাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং তিনি ওই প্রতারণায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। এমনকি হিটলারের লেখার মতো করে লিখেই তিনি লিখিতভাবে অপরাধের স্বীকারোক্তি দেন। ১৯৮৫ সালে জালিয়াতির দায়ে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর।
কুজাউয়ের মতো স্টার্নের সাংবাদিক গার্ড হেইডম্যানকেও একই বছর জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচার চলাকালে এ প্রতিবেদক বারবার দাবি করেছেন, তিনি নিজেও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু কুজাউ সব সময় জোর দিয়ে বলেছেন, ডায়েরিগুলো যে ভুয়া ছিল, তা এই সাংবাদিকও জানতেন।
আরও পড়ুনযে ছবি চুরি করতে মরিয়া ছিলেন হিটলার১২ নভেম্বর ২০২২এ কেলেঙ্কারির জের ধরে একজন ঐতিহাসিক হিসেবেও লর্ড ড্যাক্রের সুনাম ভূলুণ্ঠিত হয়। কোচসহ স্টার্নের অন্যান্য সম্পাদক তাঁদের চাকরি হারান। আবার দ্য সানডে টাইমসের সম্পাদক পদ থেকেও জাইলসকে অপসারণ করা হয়। শুধু তা–ই নয়, ২০১২ সালে গণমাধ্যমের নৈতিকতা বিষয়ক এক তদন্তে মারডকও ওই ডায়েরি প্রকাশের সিদ্ধান্তকে তাঁর এক বিরাট ভুল বলে মন্তব্য করেন।
মারডক বলেন, ‘আমি বড় ভুলটি করেছি। আমি এর পূর্ণ দায় নিচ্ছি। বাকি জীবন এ অনুতাপ নিয়েই আমাকে বেঁচে থাকতে হবে।’
সে যাহোক, ভুয়া ডায়েরি ছাপিয়ে মারডকের সংবাদপত্রের সার্কুলেশন বেড়ে গিয়েছিল। আর কেলেঙ্কারি থেকে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন। কেননা, চুক্তির ধারা অনুযায়ী স্টার্ন সাময়িকী তাঁর পত্রিকাকে সব অর্থ ফেরত দিয়েছিল।
আরও পড়ুননিলামে হিটলারের ঘড়ি বিক্রি ১১ লাখ ডলারে৩০ জুলাই ২০২২