ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখলে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, পেলে-পুষে বছরের পর বছর বসবাস করছেন মাদারীপুরের কালকিনির এক ব্যক্তি।

কালকিনির ক্ষমতাধর এই ব্যক্তির নাম মো. শহিদুল ইসলাম সরদার। ৫০ বছর বয়সি শহিদুল উপজেলার ১৫৪ নম্বর নতুন চরদৌলত খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ দখল করে দেড় দশক বসবাস করছেন বহাল তরিয়তে।

স্কুলটিতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা শহিদুল ইসলাম সরদারের স্কুল ভবন দখল করে বসবাসের বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে বিস্তারিত তথ্য দেন। ভবন খালি করতে প্রশাসন বারবার তাকে নোটিশ দিলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি; বরং জোর খাটিয়ে স্কুল ভবনেই রামরাজত্ব বাড়িয়ে চলেছেন তিনি।

 

শহিদুল ইসলামের পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়, তার বাড়ি উপজেলার চরদৌলত খান ইউনিয়নের নতুন চরদৌলত খান গ্রামে, তার বাবার নাম নেছার আলী সরদার। সহায়-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের মধ্যে গড়ে তুলেছেন তার সংসার।

২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ১৫৪ নম্বর নতুন চরদৌলত খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ দখল করে সংসার সাজিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি চরে বেড়াতে দেখা যায় সেখানে। জানতে চাইলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলে, এসব পশু-পাখি সব শহিদুল ইসলামের।
 
হাঁস-মুরগির জন্য খোপ খোপ ঘর বানিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। সেখানে যেতেই শোনা যায়, হাঁসের প্যাক প্যাক, শোনা যায় মুরগির ডাক। এরই মধ্যে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

স্কুল ভবনের গা ঘেঁষে শহিদুল ইসলাম গোসলখানা বানিয়েছেন। বাড়ির উঠানের মতোই দড়ি টাঙিয়ে কাপড় শোকাতে দেখা যায় সেখানে। স্কুলের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখের কাছে পানির ড্রাম বসিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।

কিছু সময় পর দেখা যায়, বিড়ি টানতে টানতে টিউবওয়েল থেকে পানি তুলছেন এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলে উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকদের এখানে কে পাঠিয়েছেন।

ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায়, স্কুল ভবনের নিচতলায় লাকড়ি-খড়ি ও বিভিন্ন জিনিসপত্রের বস্তা রাখা। সিঁড়ির নিচে বসিয়েছেন টয়লেট, যেখান থেকে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। পুরো পরিবেশটা নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে করে রেখেছেন শহিদুল ইসলাম।

 

বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী তামান্না বলে, “শহিদুল কাকা আমাদের বিদ্যালয়ের নিচতলা দখল করে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তিনি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালেন। এতে আমাদের পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।”

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুম শান্তা বলেন, “বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার পাঁচটি কক্ষ প্রায় ১৫ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন শহিদুল ইসলাম সরদার। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে; কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।”

“স্কুল ভবন ভোগ-দখল করছেন শহিদুল ইসলাম। এখানে তার গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবই আছে। আমরা চাই, অতি দ্রুত তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান,” বলেন উম্মে কুলসুম।

তিনি আরো বলেন, স্কুল ভবনের নিচতলা দখল করে রাখায় দোতলায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

দখল করা স্কুল ভবনের মধ্যেই পাওয়া যায় শহিদুল ইসলামকে। কেন স্কুলের মধ্যে ঘর-সংসার পেতে বসেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি তিনি।

১৫ বছর ধরে স্কুল ভবন দখল করে রাখলেও শহিদুলের বিরুদ্ধে কেন শক্ত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন- সে বিষয়ে জানতে রাইজিংবিডি ডটকম যোগাযোগ করে কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.

বদিউজ্জামানের সঙ্গে।

 

এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “আমি কালকিনিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ওই ব্যক্তিকে কয়েকবার বিদ্যালয় ভবন ছেড়ে দিতে বলেছি। তিনি কর্ণপাত করছেন না। এ বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।”

প্রশাসনের কথায় কেন কর্ণপাত করছেন না শহিদুল ইসলাম- প্রশ্ন রেখে কথা হয় কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সরকারি স্কুল ভবন দখল করে রাখা ওই ব্যক্তিকে কক্ষগুলো ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় না ছাড়লে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ল ভবন র ভবন দখল ন দখল উপজ ল করছ ন সরদ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোট সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাজা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। খবর- বাসস। 

এদিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটি এবং মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার কথা জানিয়েছে ইইউ। সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইইউর এই কমিশনার বলেন, যদিও এই অর্থের পরিমাণ গত বছরের প্রাথমিক ইইউ অনুদানের চেয়ে বেশি, তবু এটি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তহবিল ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখনও কোনো সমাধান নেই। কখন সমাধান হবে, তার কোনো সময়সীমা নেই।

ইইউ কমিশনার বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি। আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও অন্তর্ভুক্ত। 
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউর সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে কমিশনার বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।

কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাই বেওয়ারিশ লাশ যেন না থাকে। আমরা এমন একটা সমাজ বানাই, যেখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাজ আর থাকবে না।’ রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দোয়া ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নতুন ভবন আঞ্জুমান জে আর টাওয়ারের উদ্বোধন করেন।  ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি গোলাম রহমান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী বক্তব্য দেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ