মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরসংলগ্ন চৌরঙ্গী সুপারমার্কেটের পাশেই ৯ তলাবিশিষ্ট এস আর টাওয়ার। ওই ভবনের তিনতলায় বসবাস করতেন অন্যতম মালিক জিয়াউল হক। তাঁর পরিবারে রয়েছেন ৭৫ বছরের মা রোকেয়া বেগম, স্ত্রী সায়মা খানম সাথী ও কন্যা আল-হক সুফি নাজ ও পালিত পুত্র আবির হোসেন। গতকাল শুক্রবার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ডাইনিং টেবিলে বিমর্ষ অবস্থায় বসে আছেন বৃদ্ধ মা। তাঁর চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ। নাতনি সুফি তাঁর পাশে। ছুটির দিনে কয়েকজন আত্মীয় তাদের বাসায় এসেছেন। একটি মামলা ঘিরে কীভাবে সাজানো একটি পরিবার তছনছ হয়ে গেল, তা নিয়ে আলোচনা করছেন তারা।
গত ২০ জানুয়ারি রাতে সুফির বাবা, মা ও ভাইকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর থানা পুলিশ। তাঁর ভাই ও মা এখন কেরানীগঞ্জ কারাগারে এবং বাবা কাশিমপুরে। কেন, কী পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে তারা যাচ্ছেন, তার বর্ণনা দিতে গেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন জিয়াউলের কলেজপড়ুয়া কন্যা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে গলা ভারি হয়ে আসে বৃদ্ধ রোকেয়ারও।
সুফি সমকালকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পড়াশোনা করেছেন তাঁর মা-বাবা। মা সায়মা বনফুল আদিবাসী গ্রীন হার্ট কলেজের শিক্ষক। আর বাবা জিয়াউল দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মিরপুরে দাদার পৈতৃক বাড়িতে তারা বসবাস করে আসছেন। বাসার নিচের অংশে স্যানিটারি দোকানসহ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। শৈশব থেকে খালাতো ভাই মিরপুর কমার্স কলেজের ছাত্র আবিরকে নিজের ছেলে হিসেবে লালনপালন করে আসছেন সুফির মা-বাবা।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুফি বলেন, তাদের ভবনের কয়েকটি তলার কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনেক দিন ধরেই এস আর টাওয়ারে স্যানিটারি কাজ করে আসছেন কামাল হাওলাদার ও তাঁর ছেলে সিফাত হোসেন (২৪)। গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ২০ জুলাই দুপুরে সিফাত ও তাঁর এক আত্মীয় এ ভবনের চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ দুটি বিকট শব্দ শুনতে পান। এর পরই চতুর্থ তলা থেকে একজন চিৎকার করে নিচে নামছিলেন। তাঁর চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। দৌড়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখি, সিফাত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর কপালে গুলির চিহ্ন। মেঝে রক্তে ভিজে গেছে। দেয়ালের মোটা কাচ ও স্টিলে গুলির দাগ। এই ঘটনার পরপরই ভবনে আরও যারা কাজ করছিলেন, তারা দৌড়ে আসেন। কয়েকজন মিলে প্রথমে তাঁকে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে পাঠানো হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।
অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়াসহ চিকিৎসার প্রাথমিক খরচের জন্য সুফির বাবা ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তবে সিফাতকে বাঁচানো যায়নি।
তিনি আরও জানান, নিহতের ঘটনায় ১৫ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা করেন বাবা কামাল হাওলাদার। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়। ২০ নম্বর আসামি করা হয় সুফির বাবা জিয়াউল হককে। তবে এজাহারে জিয়া ও তাঁর বাবার নাম সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। জিয়াউল হকের নাম লেখা হয়–‘মো.
প্রত্যক্ষদর্শী ও জিয়াউল হকের স্বজন জানান, ২০ জানুয়ারি রাতে এস আর টাওয়ার অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় জিয়াউল, তাঁর স্ত্রী ও অসুস্থ ছেলেকে। এর পর জিয়াউলকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুফি নাজ বলেন, সিফাত গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমার বাবা অ্যাম্বুলেন্সের খরচ দিয়ে তাঁকে হাসপাতালে পাঠান। বিপদের সময় বাবা তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ তাঁকে হত্যা মামলার আসামি করা হলো। এ মামলায় আমার নিরপরাধ মা ও ভাই এখন জেলে। অথচ তাদের নাম এজাহারে নেই। যেদিন আমাদের বাসায় পুলিশ অভিযানে আসে, সেদিন পিঠের ব্যথায় আমার ভাই শয্যাশয়ী। কিশোর হওয়ার পরও তাঁকে সংশোধনাগারে না পাঠিয়ে পাঠানো হয় কারাগারে।
জিয়াউল কন্যা বলেন, আন্দোলন যখন চলছিল, তখন আমার বাবা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ফেসবুকে নানা স্ট্যাটাস দিতেন। ১৮ জুলাই তিনি স্ট্যটাসে লেখেন– ‘ছাত্রদের দমিয়ে রাখা যদি এতই সহজ হতো, তাহলে আজ রাষ্ট্রভাষাটা উর্দুই থাকত!’ অন্যদের সঙ্গে মামলায় বাবার নাম জড়ানোর পরও শুরুতে পরিবারের সদস্যরা তেমন ভীত ছিলেন না। কারণ, সরকার ঘোষণা করেছিল, অপরাধী-নিরপরাধ যাচাই করেই গ্রেপ্তার করা হবে। হঠাৎ অভিযানের পর সবাই হতভম্ব। শুনেছি আড়ালে থেকে কেউ চাপ প্রয়োগ করে মামলায় নাম জড়িয়েছে। কারও নাম বলে আর শত্রুতা বাড়াতে চাই না। যারা সত্যিকার দোষী, তাদের বিচার হোক। আমরা মব জাস্টিসের অনেক ক্ষতি আমাদের পরিবারের হয়ে গেছে। এর মধ্যেই ৩০ জানুয়ারি বাসার ছাদে আগুন লাগে। এর পর ৯৯৯-এ কল করা হয়। আশপাশের লোকজন আগুন নেভায়। আগুনের ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। আগুনের ঘটনাটি নাশকতা কিনা, সে সন্দেহ রয়েছে।
জিয়াউলের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ২০ জুলাই বাড়ির চতুর্থ তলায় একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেই নামাজে বসে যাই। তার জন্য দোয়া করতে থাকি। পরে এই ঘটনা ঘিরে এতকিছু হয়ে যাবে, কল্পনায়ও ছিল না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
নিহত সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার বাদী হয়ে যে মামলাটি করেন, সেটির এজাহারে দাবি করা হয়, ‘২০ জুলাই আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে মিরপুর-১০ নম্বরে এম এস টাওয়ারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। সেখানে পুলিশ গুলি চালায়। সিফাত হোসেন রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। বুলেট তার মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ঘটনাস্থলের ভিন্নতা ও বাড়ির মালিককে আসামি করার ব্যাপারে মামলার বাদী কামাল হাওলাদার সমকালকে বলেন, ‘আমার ছেলে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়। এর পর তাকে টেনে চার তলায় ওঠানো হয়েছে। তার লাশ গুম করার চেষ্টা হয়েছে। ওই বাসা থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, তাই মালিককে আসামি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ওই বাসায় স্যানিটারির কাজ করি আমি। মালিকের কাছে এখনও আমি টাকা পাব। ঘটনার দিন সকালে পাওনা টাকা নিতেই ওই বাড়ির সামনে গিয়েছিলাম। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বাড়ির মালিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেটা আর হলো না।’
গতকাল এস আর টাওয়ারের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, গুলির চিহ্ন এখনও স্পস্ট। জানালার কাঁচ ভাঙা ও স্টিলের কাঠামোয় গুলির গোলাকৃতি অবয়ব।
ঘটনার দিন আশপাশে যারা ছিলেন, তাদের ভাষ্যে মামলার তথ্যে অনেক গরমিল উঠে এসেছে। ২০ জুলাই এস আর টাওয়ারে আরও কয়েকজনের সঙ্গে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিলেন নওগাঁর শাপাহার এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুর আকমল। গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, “ঘটনার দিন কামালের ছেলে সিফাত ও তার এক ভাগনে চতুর্থ তলায় পাইপ লাগাচ্ছিল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানার পর ছুটে এসে দেখি মেঝে রক্তাক্ত। কামালের ভাগনে চিৎকার করে বলছে, ‘মামা মইর্যা গেছে।’ এরপর কামাল ও আমি সিফাতকে নামিয়ে আনি। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ভয়ে তিন-চার দিন কাজে যাইনি। কয়েক দিন পর ওই চতুর্থ তলায় গিয়ে রক্তের বিকট গন্ধ পাই। এর পর মালিকের অনুমতি নিয়ে আমিই মেঝেতে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত ধুয়ে মুছে ফেলেছি।’
জিয়াউল হকের বন্ধু ও জাতীয় জাদুঘরের উপপরিচালক নাসির উদ্দীন আহমেদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়াউল ও আমি একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। জীবনে তাকে কখনও অন্যায় করতে দেখিনি। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। বাবার সম্পত্তিতে তারা দুই ভাই মিলে তিল তিল করে বাড়ি তুলছিল। এই সম্পত্তি অনেকের চক্ষুশূল হতে পারে। জিয়াউলকে মামলায় আসামি করা, তার স্ত্রী ও পালিত পুত্রকে গ্রেপ্তার করা অশনিসংকেত।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ রুমন বলেন, প্রাথমিক তদন্ত ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে নাম আসায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে জিয়াউল হকের সুসম্পর্ক ছিল। আর একই পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছেলেকে ধরা হয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, আবির পূর্ণবয়স্ক না হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়নি– এ প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘তার বয়স ১৮ হয়নি, এ বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এখন লিখিতভাবে জানালে মেডিকেল পরীক্ষা করানো হবে।’
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, এই ধরনের মামলা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দু-তিনটি ধাপে তদারক করা জরুরি। সেটা না হলে মামলা ঘিরে উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটবে। ন্যায়বিচার থেকে অনেকে বঞ্চিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ ল ব দ ধ হওয় র গ র প ত র কর পর ব র র ২০ জ ল ই র পর ব ক জ কর ন র পর তদন ত ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সবচেয়ে বড় প্রেরণা বাবা’
শৈশবের প্রিয় মুহূর্ত
শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কেটেছে আমার বাবার সঙ্গে। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। আমার বাবাকে এখনও মনে করি তিনি পৃথিবীর সেরা শ্রেষ্ঠ মানুষ। হাত ধরে বাজারে যাওয়া, কোথাও বের হওয়া, তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত। বাবা আমার একজন আইডল ছিলেন। বাবার মতো হওয়ার জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছি। তিনি আমাকে সবখানে নিয়ে যেতেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোটাই ছিল জীবনের সেরা সময়।
যখন আপনি নবীন লেখক
বাবা মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। বিভিন্ন রিহার্সাল বা নাটক দেখানোর জন্য আমাকে নিয়ে যেতেন। তবে পরিবারের কেউ লেখালেখি করতেন না। বাবা প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারের পত্রিকা কিনতেন। সাহিত্য পাতার বিভিন্ন গল্প-কবিতা পড়তেন। বিশিষ্ট লেখকদের গল্প আমাকে শোনাতেন। আমার কাছে মনে হলো, আমি বাবাকে শ্রদ্ধা করি। বাবা তাদের শ্রদ্ধা করেন। লেখালেখি করতে হবে, আমাকে লেখক হতে হবে। সে সময় আমাদের সৈয়দপুরে ‘বার ওয়েল’ নামে রেলওয়ের একটা সংগঠন ছিল। তখন আমি কলেজে পড়ি। সেখানে নোটিশ বোর্ডে দেখলাম, নবারুণের জন্য নতুনদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান। গল্পের কোনো কিছু বুঝি না। সত্য বলতে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন এসব কিছুই বুঝতাম না। তবুও একটি গল্প সেখানে পাঠিয়ে দিই। তখন তো টেলিফোন বা যোগাযোগ তেমন ছিল না। আলম ভাই নামে একজন আমার বাসায় আসেন। তিনি আবার বাবার ছাত্র ছিলেন। তাঁকে দেখেই বাবা চিনতে পারেন। কী অবস্থা জানতে চান। তখন আলম ভাই জানান, রেজানুর গল্প দিয়েছে, ওর সঙ্গে কথা আছে। তারপর আমাকে পরের দিন যেতে বলেন তাঁর কাছে। পরে তিনি গল্প ধরে ধরে পুরো বোঝালেন। গল্প সম্পর্কে একটা প্রশিক্ষণ দিলেন আর কি; যা পরবর্তী জীবনে বেশ কাজে আসে। কীভাবে গল্পের প্যারা, দাঁড়ি বা অন্যান্য সেসব বুঝিয়ে বললেন। গল্পটির নাম ছিল ‘ক্ষুদার জ্বালা’। পরবর্তী সময়ে সেই গল্পটি যখন ছাপা হলো, তখন অন্যরকম অনুভূতি কম্পিত হয়। যে পছন্দ করে তাকেও দেখাই, যে অপছন্দ করে তাকেও দেখাই।
প্রথম নাটক যেভাবে লেখা হয়
ঢাবিতে পড়ার সময় আমার ইচ্ছে হলো নাটক লিখব। একদিন বিটিভিতে আতিকুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে চলে যাই। পরে সেখানে আমার নাটক লেখার অনুভূতির কথা জানাই। তাঁকে নাটকের স্ক্রিপ্ট দিই। তিনি পরে জানাবেন বলে রেখে দেন। দুই মাস যায় কোনো খোঁজ পাই না। তখন আবার তাঁর কাছে চলে যাই। তিনি জানান, লেখা আরও ঠিকঠাক করতে হবে। এক পর্যায়ে সব ঠিক হয়ে যায়, তিনি পছন্দ করেন। নাটকের রিহার্সাল শুরু হয়। এক পর্যায়ে শুটিং শেষ হয়। পরে আতিকুল হক চৌধুরী জানান, নাটক অমুক দিন প্রচার হবে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেছি। দুঃখের কাহিনি হলো, যেদিন প্রচার হওয়ার কথা, সেদিন আর নাটক প্রচারিত হলো না। সবাই তো আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাবা শুরু করল। এক পর্যায়ে আতিকুল হক চৌধুরী চিঠির মাধ্যমে আমাকে খোঁজ করেন। আমি দেখা করি। পরে তিনি সান্ত্বনা দেন। শিডিউল জটিলতার জন্য প্রচার হয়নি। নেক্সটে প্রচার করা হবে। পরে সত্যি সত্যি প্রচার হলো। যখন নাম ঘোষণা হলো রেজানুর রহমানের গল্প অবলম্বনে আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় নাটক। শোনার পর শরীর দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেল।
প্রিয় লেখক যারা
আমার প্রিয় লেখক হলেন শওকত আলী। ‘উত্তরের খেপ’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন। ঢাকা থেকে ট্রাক নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে যাচ্ছে একজন ড্রাইভার। পথের মধ্যে যত কথাবার্তা, চোখের সামনে এখনও সেসব ভাসে। তাঁর লেখা আমাকে বেশ অনুপ্রেরিত করেছে। তরুণ বয়সে আরেকজনের লেখা আমার বেশ ভালো লেগেছিল। তরুণ বয়সে ভীষণ উন্মাদনা ছিল। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস আমার বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে যে বিষয়টি ভালো লাগত, তিনি তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতেন। লেখালেখির জায়গায় বেশি উৎসাহিত করেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের লেখাও আমাকে বেশ উৎসাহিত করেছে। তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে।
এখন যা লিখছি, পড়ছি
ছোটবেলা থেকে শুরু করে, বেড়ে ওঠা পর্যন্ত এই সময়ে। একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে বড় উপন্যাস লেখার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই লেখাটি শুরু করেছি। যখনই সময় পাই বই নিয়ে বসে যাই। পড়া শুরু করি। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে এখন পড়াশোনা কমে গেছে। আশা করি সেসব কেটে যাবে খুব শিগগিরই।
প্রিয় উদ্ধৃতি
আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা আমার বাবা। তাঁর প্রতিটি কথাই যেন আমার প্রিয় উদ্ধৃতি। তিনি বলতেন, ‘সৎ হও, সততাই শক্তি। তুমি সৎ থাক, কেউ কোনোদিন তোমার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে না। তুমি বিপদে পড়বে না।’ v
lগ্রন্থনা :: ফরিদুল ইসলাম নির্জন