ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ
Published: 1st, February 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং অনুগত ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুযোগ ও প্রতিযোগিতা ছাড়াই অস্বচ্ছভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চাহিদা না থাকলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপন করা হয়েছে। দেড় দশকে ১ লাখ কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সামিট, ইউনাইটেডসহ কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির পকেটে গেছে, যারা তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। আমদানিনির্ভর নীতিমালার কারণে দেশের জ্বালানি খাত ঝুঁকির মুখে। খরচ বেড়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। অদক্ষ এবং ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। অসম চুক্তিগুলোর অন্যায্য শর্ত নিয়ে আরও দরকষাকষি করতে হবে।
বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড.
প্রতিবেদনের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানির রূপান্তর নীতি শীর্ষক অধ্যায়ে দেশে জ্বালানি খাতের পরিস্থিতি, গত সরকারের অনিয়ম ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি খাতের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘময়াদি সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৫০ সালে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে ৭৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে বিনিয়োগ লাগবে ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এতে বলা হয়, এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে রেখে বিশেষ আইনে টেন্ডার ছাড়াই পছন্দের ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই না করে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলোর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার কারণে ২০২১-২২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সক্ষমতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে খরচ হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ী গ্রুপ সামিট, তারা এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার নিয়েছে। তৎকালীন জ্বালানি উপেদষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর সুপারিশে সামিটকে এলএনজির ব্যবসাও দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ দেওয়া হতো শেখ হাসিনার পরামর্শে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি হয়েছে মূলত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা এবং ভূমি অধিগ্রহণে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করে তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন করা, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়া, এ খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য জন য ব ক ষমত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জকিগঞ্জের সড়ক পথের দুরবস্থা
সিলেটের জকিগঞ্জে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয় অর্ধ শতাধিক ব্রিজ ও কালভার্টের। এ ছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সিলেট অঞ্চলে বছরে একাধিকবারের বন্যায় অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতিসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। উপজেলার বেশ কয়েকটি ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের করুণ দশা জনমনে অস্বস্তির জন্ম দেয়। জনসাধারণের দৈনন্দিন চলাচল ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। কোথাও পাকা রাস্তা ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, রাস্তার পিচ উঠে গেছে। আবার অনেক জায়গায় রাস্তার পুরো অংশ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এসব সমস্যা সমাধানে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। আমি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের আরসিআইপি প্রকল্পে সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করার সুবাদে এলজিইডির অন্তর্ভুক্ত সবক’টি সড়ক পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এলজিইডির আওতায় ছোট-বড় মোট ৩২৬টি সড়ক রয়েছে। যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সড়ক এখনও কাঁচা। বিগত ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের উপর্যুপরি বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ কাঁচা ও পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদর ইউনিয়ন, সুলতানপুর ও কশকনকপুর ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সুলতানপুর ইউনিয়নের থানাবাজার-বিলপার সড়ক ও ইলাবাজ-তিরাশি সড়কসহ গ্রামীণ পাকা সড়কের অধিকাংশই ভেঙে
চুরমার। উপজেলার দুটি অন্যতম প্রধান সড়ক জকিগঞ্জ-জিরো পয়েন্ট সড়ক ও জকিগঞ্জ-পল্লীশ্রী-কালীগঞ্জ বাজার সড়ক পানির তীব্র স্রোতে একেবারে বিধ্বস্ত। সড়কের বাজার-বৈরাগী বাজার-বরইতল সড়কের মধ্যবর্তী যশা এলাকায় প্রায় ৩০ মিটার রাস্তা ভেঙে দুই দিকের হাওড়ের পানি চলাচল করে। ওই স্থানে স্থানীয় জনসাধারণ বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করে থাকে। বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একটি ব্রিজের অভাবে বর্ষা মৌসুমে এলাকার মানুষকে উল্টো রাস্তা ধরে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরে আটগ্রাম সড়ক হয়ে জকিগঞ্জ আসতে হয়। এতে মানুষের আর্থিক ব্যয় ও ভোগান্তি দুটোই বেড়েছে সমান তালে।
আব্দুর রশিদ
ভূমি সার্ভেয়ার
শিক্ষার্থী- সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট।
মোবাইলঃ ০১৭০৫৬৪৩৩৮৫