ভোরের আলো ফোটার আগেই চারদিক থেকে জনস্রোত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দিকে। সবার লক্ষ্য ১৬০ একর জায়গাজুড়ে টানানো শামিয়ানা। শেষ পর্যন্ত লোকারণ্য ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। গতকাল শুক্রবার সকালের মধ্যেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় মানুষ দাঁড়িয়ে যেতে থাকেন রাস্তাজুড়ে। জনস্রোত থেকে শুধুই ভেসে আসছিল– সোবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর ধ্বনি। জুমার নামাজ আদায় করেছেন লাখ লাখ মুসল্লি। 

গতকাল ইজতেমা শুরুর দিনে ফজরের নামাজের পর মূল মঞ্চে বসে পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক উর্দু ভাষার বয়ান করছিলেন। তরজমা করেন মাওলানা নূরুর রহমান। ধ্যানমগ্ন হয়ে শুনছিলেন মুসল্লিরা। প্রখ্যাত এ বুজুর্গ স্রষ্টা-সৃষ্টি, জন্ম-মৃত্যু, সৎ কাজে আদেশ আর অসৎ কাজে নিষেধ নিয়ে বয়ান দেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তালিমের আগে মোজাকেরা করেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম ও ছাত্রদের মিম্বার থেকে বয়ান করেন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মান্নান। সে সময় যত দূর চোখ যায়, মানুষ আর মানুষ। তিল ধারণের যেন ঠাঁই নেই কোথাও। ইজতেমার মূল ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে যায় বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পলিথিন টানিয়ে জামাতবদ্ধ অসংখ্য মুসল্লি অবস্থান করছেন ময়দানের চারপাশে।

কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ যোবায়েরের ইমামতিতে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আদায় করেন পবিত্র জুমার নামাজ। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে মাওলানা যোবায়ের খুতবা দেওয়ার জন্য ইজতেমা ময়দানের মূল মঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এর সঙ্গে সঙ্গেই নিস্তব্ধ পুরো ময়দান। খুতবা শেষে তুরাগ নদের পশ্চিম পারে তাঁর ইমামতিতেই ১টা ৫৬ মিনিটে  শুরু হয় জুমার জামাত।
তাবলিগ জামাতের শূরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ২০ লাখের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। শুধু ময়দানে নয়, যে যেখানে জায়গা পেয়েছেন সেখানেই নামাজ আদায় করেছেন। ময়দানের চারদিকে সব রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন মুসল্লিরা।

ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভুটান, সুদান, নাইজেরিয়া,  মালয়েশিয়া, ইয়েমেন, ইন্দোনেশিয়া, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিয়ানমার, চাঁদ, লিবিয়া, ইতালি, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, কানাডা, পানামাসহ অন্তত ৭২টি দেশের ২ হাজার ১৫০ জন মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। আরও বিদেশি মেহমান আসবেন বলে জানায় আয়োজক কমিটি। বিদেশিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সুপেয় ঠান্ডা ও গরম পানি এবং রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে বিদেশি মেহমানদের জন্য পৃথক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে।

নিরাপত্তাবলয় 
পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে পুরো এলাকায়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিউল ইসলাম জানান, ইজতেমা প্রাঙ্গণ পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার, ১৫টি সাব-কন্ট্রোল রুম, ৩৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ৩৫টি রুফটপ ডিউটি টিম, ৫৩টি স্থির পিকেট পার্টি, ২০টি মোবাইল টহল ইউনিট, ২০টি  চেকপোস্ট, ড্রোন সার্ভেইল্যান্স, ডগ স্কোয়াড ও  বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট টিম, নৌ ও হেলিকপ্টার টহল সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় এক হাজার ট্রাফিক পুলিশ, এক হাজার সাদা পোশাকের পুলিশ, ছয় হাজার ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারি অন্যান্য সংস্থা ও বাহিনীগুলো তাদের নিজ নিজ কমান্ডের অধীনে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

এক মুসল্লি মারা গেছেন
বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আবদুল কুদ্দুস গাজী (৬০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া বাজার এলাকায় তাঁর বাড়ি। শূরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। মুসল্লিদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শূরায়ে নেজামের অধীনে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার শুরু হওয়া প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে সোমবার। আগামী বুধবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। 
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব আয়োজন করবেন তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইজত ম ময়দ ন র ইজত ম র র জন য সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ