হাজীগঞ্জে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রায় ৪২০ একর কৃষিজমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিএডিসির সেচ প্রকল্পের মোটর থাকলেও পরিচালনার অভাবে কৃষকের বোরো চাষাবাদে কাজে আসছে না। এ কারণে পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে পাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন স্কিম ম্যানেজার ও কৃষকরা।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের পাতানিশ, নোয়াপাড়া, সাদিপুরা চাঁদপুর ও কচুয়া উপজেলার কালচোঁ গ্রামে ৪২০ একর কৃষিজমি। পানি নিষ্কাশনের জটিলতার কারণে এসব জমির কিছু অংশে দুই ধরনের ফসল উৎপাদনের সুযোগ থাকে। কয়েক বছর ধরে সেচ প্রকল্পে জটিলতা দেখা দিলে অনেক আবাদি জমি চাষাবাদ ছাড়াই পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরই মধ্যে বিএডিসির আওতায় মাঠের কিছু অংশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সঠিকভাবে পানি পাচ্ছে না এখানকার কৃষক। তা ছাড়া গত বছর বিএডিসি পাম্প থেকে পানি না ওঠায় দুর্ভোগে অনেক কৃষক চাষাবাদ করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
কৃষক মুকলেছুর রহমান, মেহেরাজ, সবুজ ও মালেক বলেন, চার গ্রামের প্রায় ৪২০ একর আবাদি জমি রয়েছে। আগে এ মাঠ থেকে ব্যাপক ধান উৎপাদন হতো। বর্তমানে পানি নিষ্কাশনের জটিলতা দেখা দেওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। 
স্ক্রিম ম্যানেজার দিদার হোসেন জানান, হাজীগঞ্জ-কচুয়া সীমান্তে পাতানিশ, নোয়াপাড়া, চান্দু, কালচোঁ গ্রামের প্রায় ৪২০ একর কৃষি মাঠ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বিপাকে রয়েছেন কৃষক। চাষাবাদের সুবিধার্থে গত বছর খননযন্ত্র দিয়ে কোনোমতে ড্রেন চালু করছেন তিনি। পাকা ড্রেন হলে প্রতিবছর এভাবে আর ড্রেন খনন করতে হবে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ মিয়ার ভাষ্য, উপজেলা বিএডিসির আওতায় যে সেচের লাইন সরকার দিয়েছে, তা ঠিকমতো কাজ করছে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা পাকাকরণ করা হলে সব কৃষক ঠিকমতো জমিতে পানি পাবেন।
বিএডিসি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিশাল এ কৃষি মাঠে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা করবেন। সে ক্ষেত্রে কৃষক বা স্কিম ম্যানেজার আবেদনের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, ‘এ মাঠে দেখা যায়, দক্ষিণ অঞ্চলের ধান কাটার সময় হলে উত্তর অঞ্চলের কৃষক জমিতে ধান রোপণ করেন। তার পরও কৃষকের সুবিধার্থে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারিশ করব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড র ন জ ব যবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রেল ও সড়কপথ অবরোধের ডাক শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার বিকেল ৫টা থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয়। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অনশনের মধ্যেই শুক্রবার দুপুর থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। শনিবার বিকেলের মধ্যে দাবি না মানা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় তারা বলেন, শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেল ও সড়কপথ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে। বিশ্ব ইজতেমার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড শিথিল থাকবে।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দিতে পারেননি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুক্রবার সকালে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনশনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকে জুমার নামাজ আদায় করবেন। প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার পরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন।

দীর্ঘ সময় বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক– সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছ। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু এখনই বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়াটা তো সম্ভব নয়। পরবর্তী সময়ে যত জায়গায় এটা নিয়ে কাজ হবে, আমি সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তোমরা আজকে রাতে ফিরে যাও।’

যুগ্ম সচিবের এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তা মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তারা স্লোগান দেন, ‘হয় তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়, না হয় মৃত্যু’। এ ঘোষণা দিয়ে রাতেও তারা গণঅনশন, রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান। অনশনে গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বিকেলে তিতুমীর কলেজের সামনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। সড়কে তুলনামূলক যানবাহন কম হলেও শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন কলেজের সামনে দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী অনেকের সঙ্গে অবরোধকারীদের থেমে থেমেই বাগ্‌বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে।

এদিকে রাত ৯টার পর গুলশান-১ নম্বর সড়কের মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। গুলশানে অবরোধের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। সে জন্য আমরা এখন সড়ক অবরোধ করেছি।

‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো– রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ বা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন ও সাংবাদিকতা বিষয় চালু করা। এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার গুণগত মান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ