সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে ডুবল জাহাজ
Published: 31st, January 2025 GMT
খুলনায় রূপসার রেলসেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গেছে লাইটার জাহাজ এমভি সেভেন সার্কেল-২৩। জাহাজটিতে ১ হাজার ১৭৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
জাহাজের সুকানি ইমাম হোসেন লিটু ও গ্রিজার অমিত কুমার শীল জানান, তারা মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকা থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে রূপসা এলাকায় সেভেন রিংস সিমেন্ট কারখানার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে রূপসা রেলসেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। তারা জানান, জাহাজটি যখন ডুবে যাওয়ার উপক্রম তখন তারা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ফোন দেন। কর্তৃপক্ষ দ্রুত দুটি ট্রলার পাঠান। ঘটনাস্থল ফ্যাক্টরির কাছাকাছি এলাকায়। পরে জাহাজে থাকা ১৩ জন কর্মচারী ট্রলারে করে তীরে উঠতে সক্ষম হন।
খুলনা নৌ পুলিশের সুপার মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, দুর্ঘটনাকবলিত লাইটার জাহাজের কেউ নিখোঁজ নেই। সবাই তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জাহাজের কর্মচারীরা তীরে নোঙর ফেলে ও
তিনটি স্থানে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে অর্ধডুবন্ত জাহাজটিতে বেঁধে রেখেছেন। জাহাজটি উদ্ধার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, তীরের কাছাকাছি ডুবে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বয়সের ভারে মৃত্যু নয়, হাতিটি হত্যা করা হয় দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নিতে
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকা থেকে গত বুধবার উদ্ধার হয় একটি বন্য হাতির হাতির মরদেহ। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এবার বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বয়সের ভারে নয়, দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে।
হাতিটিকে হত্যার অভিযোগ এনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশখালী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন বন বিভাগের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ১৮ জনকে। নাম উল্লেখ করা দুই আসামি হলেন উপজেলার বৈলছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব চেচুরিয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো. সরওয়ার হোসেন (৪৮) এবং একই এলাকার মোহাম্মদ জাফর (৫২)।
মামলার এজাহার ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে আসামিরা সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকায় সরওয়ারের লিচুবাগানে হাতিটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, পিঠ ও দুই কানের নিচে এবং পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে হত্যা করেন। পরে ওই হাতির শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে যান। মামলায় হাতিটির বয়স ৬-৭ বছর উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, মৃত হাতিটির বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। বয়সের ভারে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
বুধবার বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তে হাতিটির দুটি দাঁত ও চার পায়ের নখ কেটে নেওয়ার তথ্য ওঠে আসে। এরপর গতকাল বিকেলে বাঁশখালী থানায় মামলা করা হয়। বন বিভাগের লোকজন জানান, মামলার আসামিরা সংঘবদ্ধ পাচারকারী।
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাতি মেরে দাঁত ও নখ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল থানায় মামলা হয়েছে। আমরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’
গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদি রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, রোগাক্রান্ত হওয়া, পাহাড় থেকে পড়েসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে।
কালীপুর রেঞ্জের আওতাধীন সাধনপুর এলাকায় ২১৫০ একর এবং পুকুরিয়া এলাকায় ৭৫৯ একর জায়গা আছে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কালীপুর রেঞ্জ আওতায় ১১টি হাতি মারা গেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৮ জুন আনুমানিক ২০-২৪ বছর বয়সী মাদি হাতি মারা যায় খাদ্য বিষক্রিয়ায়। এর আগে ১১ জুন ১২-১৪ মাসের শাবক, ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ২২-২৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২০২০ সালের ২৯ জুন ৬ বছর বয়সী মাদি হাতি উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে, ১৮ জুন ১২ বছরের হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে, ২৯ মার্চ ৬০ বছর বয়সী হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৯ সালের ৩ জুন ১০০ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত, ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১৮ বছরের খাদ্য বিষক্রিয়ায়, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৬ বছরের মাদি হাতি রোগাক্রান্ত হয়ে, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ৯০ বছরের মাদি হাতি শারীরিক দুর্বলতা এবং এর আগে আগে ৩০-৩৫ বছরের মাদি হাতি বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যায়।
অন্যদিকে, একই উপজেলার জলদী রেঞ্জে পাঁচটি হাতি মারা গেছে। তার মধ্যে, ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন চাম্বল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিটের জঙ্গল চাম্বল মৌজার মিতাইঝিরি গুন্ডার টেক এলাকায় একটি বন্য হাতি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দুই দিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় হাতিটি। এর বাইরে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই চাম্বলের দুইল্লাঝিরি এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে একটি এবং ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর চাম্বল এলাকার পূর্ব চাম্বলে ধানখেত থেকে একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।