কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট ট্রেন কি আসবে, নাকি ফাঁকা বুলি
Published: 31st, January 2025 GMT
অনেক দেশেই জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে যাওয়া-আসার জন্য পর্যটকদের কাছে ‘ট্যুরিস্ট ট্রেন’-এর কদর বরাবরই অন্য রকম। বাংলাদেশেও পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটক আকর্ষণে ট্যুরিস্ট ট্রেন চালুর কথা জানিয়েছিল সরকার। ট্রেন চালাতে ৩৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৪টি বিলাসবহুল কোচ (বগি) আমদানির উদ্যোগও নেয় রেলওয়ে। কথা ছিল, ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন চালু হওয়ার পরপরই ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু হবে। ফলে ট্যুরিস্ট ট্রেন নিয়ে পর্যটক ও কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু সে আগ্রহ এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। ২০২০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া ওই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাই প্রশ্ন উঠেছে– ট্যুরিস্ট ট্রেন কি সত্যিই কখনও কক্সবাজারে আসবে, নাকি সবই রেলওয়ের ফাঁকা বুলি।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করতে ৫৪টি কোচ আমদানির উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কোচ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। তিনি এ নিয়ে খুব তৎপরতাও দেখান। শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের সুবিধাসম্পন্ন বিলাসবহুল কোচ আমদানি করে ট্রেন চালু করতে পারেননি। অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয় আমদানি প্রক্রিয়া। এখন
দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির অজুহাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আদৌ এ ট্রেন চালু করা হবে কিনা, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না রেল কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। স্বাভাবিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি ট্যুরিস্ট ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিল রেলওয়ে। এ জন্য বিলাসবহুল কোচ আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ সংকট, কোচ আমদানি, ইঞ্জিন ও লোকবল সংকটসহ নানা কারণে এটা পারা যায়নি। তবে রেলওয়ে ট্যুরিস্ট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে কিছুটা সময় লাগছে।’ তবে কবে এ ট্রেন চালু করা যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্যুরিস্ট ট্রেন চালুর অংশ হিসেবে ‘প্রকিউরমেন্ট অব ৫৪ ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ ফর অপারেটিং ট্যুরিস্ট ট্রেন ফর ট্যুরিস্ট অব কক্সবাজার’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল রেলওয়ে। এরই অংশ হিসেবে কোচ আমদানির জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০২০ সালের মার্চে রেলওয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সে সময় রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (মেকানিক্যাল) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি একই বছরের আগস্টে প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পর ডিপিপি তৈরি করে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায় রেলওয়ে। প্রস্তাবনায় ৫৪টি বিলাসবহুল কোচ আমদানির জন্য ব্যয় ধরা হয় ৩৫৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচ আমদানিতে খরচ পড়ত ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কথা ছিল, ব্যয়ের ৭৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। অবশিষ্ট ২৭৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও প্রকল্পটি রাখা হয়।
প্রকল্প অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি প্রতিদিন দুই জোড়া ট্যুরিস্ট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে এক জোড়া ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, এসব ট্রেনের সব ক’টি কোচ হবে বিলাসবহুল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যাত্রীদের সুবিধার্থে এসব কোচে সুপরিসর বার্থ সার্ভিস ছাড়াও থাকবে রেলের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস, সার্বক্ষণিক গার্ড, ওয়েটার সুবিধা ও যাত্রাপথে স্বচ্ছ আয়নার জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের ব্যবস্থাও। যেসব কোচ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে ছিল ছয়টি মিটারগেজ ট্যুরিস্ট কার, ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ২২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, সাতটি পাওয়ার কার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু
করা গেলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারের আকর্ষণ ও গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ ও নিরাপদ করবে ট্রেন যোগাযোগ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক চ আমদ ন র প রকল প য় র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
জবি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, জবির রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ আলী, তামান্না তাবাসসুম ও আবুল বাসার। অপরদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাশ মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে উঠলে রসায়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। এতে তাদের ওপর হামলা চালায় মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ হামলার নেতৃত্ব দেন জবি ছাত্রদল কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক কুমার দাশ। এতে আরো যুক্ত ছিলেন, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী মাহী, আয়ান, আরিফ, রাতুল, আসিফসহ আরো ১৫ জন।
এ হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আর কোন দমন-পীড়ন বরদাস্ত করব না। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে না। এর আগের হামলাগুলোর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুক। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রসায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ২০২০ -২০২১ সেশনের তামান্না তাবাসসুম বলেন, “আমরা প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। আমরা তাহলে কার কাছে যাব? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, “গতকালের ঘটনার পর আমরা প্রক্টরের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের বলেন, ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়ার জন্য। এ বিষয়ে তারা কি পদক্ষেপ নেবে, সে ব্যাপারে তিনি আমাদের কিছু জানাতে পারেননি। বরং আমাদের বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যদি এ ঘটনায় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা প্রশাসন ও যে দলের প্রশ্রয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই সঙ্গে আমরা ক্লাস বর্জনের ডাক দেব।”
আব্দুল কাহহার জামিল বলেন, “গতকালের ঘটনায় প্রক্টর স্যার আমাদের কোন খোঁজ নেননি। রাত ১০টার পর একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। তিনি চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দেন। কিন্তু প্রক্টর স্যারের সঙ্গে আমরা কথা বলতে গেলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন। গত ১ বছরে আামদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিনটি হামলার অভিযোগ করলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি। যদি ওই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হত, তাহলে আজ আমাদের এখানে দাঁড়াতে হত না। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
তিনি বলেন, “বিচারের নামে টালবাহানা করা হয়। আমাদের প্রক্টর অফিস থেকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের নানা হুমকি দিয়ে ভয় দেখনো হয়। বলা হয়, যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ হামলা করে, তাহলে সে দায় প্রক্টর অফিস নেবে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, “সবকিছুর জন্য সময় দরকার। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিচার চাচ্ছে, সেটা এত দ্রুত সম্ভব না। আগের একটা কমিটি আছে, সে কমিটির কাছেই আমি এটার তদন্ত হস্তান্তর করেছি।”
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাদের ২০০৫ সালের নীতিমালা পড়তে বলেছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ভর্তি পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী