প্রশাসক নিয়োগে নাগরিক সেবায় বাড়তি ভোগান্তি
Published: 31st, January 2025 GMT
ফরিদপুর পৌরসভার সেবা পেতে বাড়তি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নাগরিকরা। জন্ম-মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ পেতে দুই মাস পর্যন্ত লাগছে। সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, মেয়রের দায়িত্বে প্রশাসক ও কাউন্সিলরের পরিবর্তে সরকারি দপ্তরের প্রধানরা আসায় ঠিকমতো মিলছে না সেবা। কয়েক মাস ধরেই নাগরিক সনদের সংশোধনী ছাড়ছে না জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ফরিদপুর পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম। সংশোধনী কাজে স্থানীয় সরকার বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন এডিএলজি মো.
পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিজাউল ইসলাম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি তিনি অনলাইনে নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করেন। পরদিন পৌরসভায় গেলে জানানো হয়, এটি ভেরিফিকেশনে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি ভোটার হওয়ার শেষ দিন। নাগরিক সনদ ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। ঢাকার খামারবাড়ি গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে সই আনতে অথবা তাঁর ফরিদপুরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন কর্মকর্তারা।
পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর সৈকত আহমেদ তন্ময় জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলরের অধীনে তারা নাগরিক সনদ দিতে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা নিতেন। এখন তা ১০-১৫ দিন লাগছে। একইভাবে ওয়ারিশ সনদে দুই মাস ও জন্ম-মৃত্যু সনদে লাগছে ১৫ দিন থেকে এক মাস। যেগুলো আগে তিন দিনেই দেওয়া যেত। কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকার শাখা থেকে সংশোধনী না ছাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজিউল হাসান বলেন, ওয়ারিশ সনদের জন্য গত ২১ নভেম্বর আবেদন করেছি। এখনও অনুমোদন হয়নি। আমার ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান ফরিদপুরের চেয়ে ঢাকায় অফিস করেন বেশি।পৌরসভার ২৭ ওয়ার্ডে ২৭ কাউন্সিলর ও ৯ মহিলা কাউন্সিলর ছিলেন। পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের পর তাদের জায়গায় কাজ করছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের আটজন। তাদের সহায়তায় ২৭ ওয়ার্ডে ২৭ কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভার প্রেষণে অফিস সহকারী গোলাম মওলা মলি বলেন, সনদের কোনো আবেদন পৌরসভার দায়িত্বরত কর্মচারী গ্রহণ করে ভেরিফিকেশনের জন্য নেন কাউন্সিলরের কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন অফিসের দু’জন কর্মকর্তাকে। তারা সম্মতি দিলেই অনুমোদন দেন কাউন্সিলর। আবার কাউন্সিলর বাইরে থাকলে তাঁর কর্মস্থলে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে এখন একটি আবেদন অনুমোদনে চারটি ভেরিফিকেশন লাগছে। অথচ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একবার ভেরিফিকেশন সই দিলেই অনুমোদন হয়ে যেত।
পৌরসভার বাজার পরিদর্শক কাউছার খান বলেন, ‘আমরা নাগরিকের আবেদন ভেরিফাই করে দিলেও দায়িত্বরত অফিসপ্রধান যারা কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা অনলাইনে অনুমোদন দিতে সময় নিচ্ছেন।’
পৌরসভার জন্মনিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর সৌরভ ঘোষ শুভ বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে কিছু জটিলতা হয়। বাড়তি কোনো সময় লাগে না। কাউন্সিলরের কাছ থেকে ভেরিফাই হয়ে অনলাইনে আবেদন পেয়ে যাচ্ছি। এর পর রেজিস্ট্রারের কাজ শেষে নাগরিকের হাতে সনদ তুলে দিচ্ছি।’
ফরিদপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবেদনের তথ্য যাচাই করতে সরকার নির্দেশনা দিয়েছে। তাদের দপ্তরে বিলম্ব হলে পৌরসভার কিছু করার নেই। আমাদের কোনো গাফিলতি আছে বলে আমরা মনে করি না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রসভ র সনদ র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-তরুণ, ছিলেন স্টেশনের টোকাই: রেলওয়ে পুলিশ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন কিশোর-তরুণ সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বলে জানা গেছে। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, তাঁরা সবাই ‘টোকাই’ ছিলেন। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা জানান, আজ বুধবার ভোরের কোনো এক সময় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ কিশোর-তরুণের মৃত্যু৫ ঘণ্টা আগেতিনজনের মধ্যে একজনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম (১৮)। তিনি কুমিল্লা রেলস্টেশনে বোতল কুড়ানোর কাজ করতেন। তাঁর মা-বাবা সেখানে রেলস্টেশন পরিচ্ছন্নতা কাজের পাশাপাশি বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিহত অন্য দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও আরেকজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তুহিনও কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে বোতল কুড়াতেন। তবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে সাইফুলের মরদেহের পাশে মোখলেছুর নামের এক ব্যক্তিকে আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে সাইফুলের বাবা দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার তিনটা পুত (ছেলে)। এর মইধ্যে সাইফুলডা বড়। গতকালকা দুপুরে আমি সাত প্লেট ভাত আনছি হোটেল থাইক্কা। পুতে কইলো, “আব্বা, কসবা স্টেশনে যাইয়াম; বোতল টোকানোর লাইগ্যা।” আমি কইছি, “পুত, তুই ভাত খাইয়া যা; এহন বোতল টোকান লাগতো না।” পুতে আমার কথা না হুইন্যা চইল্যা গেল। রাইত ৩টা পর্যন্ত পুতের লাইগ্যা অপেক্ষা করছি। আজকা সহালে স্টেশনের এক লোক আমারে ভিডিওতে দেহাইলো, আমার পোলাডা ট্রেনে কাটা পইড়া মইরা গেছো।’
মোখলেছুর জানান, সাইফুলের সঙ্গে নিহত অন্য কিশোর-তরুণও টোকাই। তাঁদের মধ্যে একজনকে তুহিন নামে চেনেন তিনি। মোখলেছুরের গ্রামের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায়। সেখানে তাঁর ভিটেমাটি না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। ছেলের লাশ দাফন করার মতো জায়গা নেই। তাই রেলওয়ে পুলিশকে বলেছেন, লাশটি যেন সরকারিভাবে দাফন করা হয়।
সাইফুলসহ ওই তিনজন গতকাল দুপুরে কুমিল্লা স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন বলে জানান রাজীব হোসেন নামের আরেক সুবিধাবঞ্চিত তরুণ। সাইফুলের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল বেলা দেড়টার দিকে ওই তিনজন আমাকে ও ইউসুফকে (আরেক পথশিশু) যেতে বলছিল। আমরা যাইনি। আমাকে জানাইছিল, হেরা আখাউড়া যাইব। বিকালে ফিরে আওনের কথা থাকলেও রাইতে আর তাগো দেহি নাই। সাইফুল কুমিল্লা স্টেশনে থাকত। তয় ওই দুজন চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্টেশনে বোতল টোকাইতো।’
তবে ওই তিনজন কোন ট্রেনের নিচে এবং কীভাবে কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা। তিনি ধারণা করছেন, গতকাল শেষ রাতের দিকে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তাঁরা।
সোহেল মোল্লা আরও বলেন, নিহত তিনজনই টোকাই ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে বোতলসহ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়াতেন। তবে যেখানে তাঁরা কাটা পড়েছেন, সেটি নির্জন এলাকা। হয়তো মাদক সেবন করে অসাবধানতার কারণে তাঁরা ট্রেনে কাটা পড়েছেন। কারণ, যেভাবে কাটা পড়েছেন, সেটি দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা ট্রেনের ছাদ থেকে লাফ দিয়েছেন। আবার চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময়ও এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাঁদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে।
পুলিশ জানায়, লাশগুলোর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হবে। অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া না গেলে দাফনের জন্য সাইফুলের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে পাঠানো হবে।