অস্তিত্ব সংকটে বাঘ ভেবে ভুল বোঝা প্রাণীটি
Published: 31st, January 2025 GMT
বছর তিনেক আগের ঘটনা। ঢাকার ধামরাইয়ের কালিঘাট এলাকায় কৃষকরা জমিতে ধান কাটতে যান। এ সময় ধান ক্ষেতে বাঘের মতো একটি প্রাণী দেখে তারা চিৎকার করে ওঠেন। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজন লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে প্রাণীটিকে মেরে ফেলেন। ছোপ ছোপ দাগ দেখে বাঘ বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু বন বিভাগ জানিয়েছে, বাঘের থেকে অনেক ছোট এই প্রাণীটি আসলে মেছো বিড়াল। এভাবে না জেনে মানুষ প্রায়ই মেছো বিড়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। নিরীহ নিশাচর এ বন্যপ্রাণীকে মানুষ ‘মেছোবাঘ’ নামে ডাকে। আর এ নামের কারণে ভুল ধারণার শিকার হয়ে প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন (আইইউসিএন) মেছো বিড়ালকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমায় প্রাণীটির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণীটির অবদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাসস্থান সংকুচিত হওয়া ও মানুষের সচেতনতার অভাব প্রাণীটির জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার দেশে প্রথমবারের মতো নানা আয়োজনে বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আগারগাঁওয়ের বন অধিদপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, মেছো বিড়াল জলে ও স্থলে সমানভাবে তুখোড় শিকারি। সাধারণত খাল, বিল, নদী, পুকুর ও জলাভূমি আছে– এমন জায়গাতেই এদের বসবাস। সুন্দরবনে বেশ ভালো সংখ্যক আছে। মেছো বিড়াল মাছ, সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, খরগোশ, গুইসাপসহ মাঝারি আকারের অনেক প্রাণী শিকার করে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ বলেন, ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি সংবাদ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশে ১৬০টি মৃত মেছো বিড়ালের খোঁজ পেয়েছিলাম। সবই মনুষ্য সৃষ্ট কারণে। ৮৩ শতাংশ সংবাদ মেছো বিড়ালকে ভুল প্রাণী ভেবেছে। কোথাও বলা হয়েছে বাঘ, কোথাও চিতা বাঘ, কোথাও বাঘের বাচ্চা।
তিনি বলেন, মেছো বিড়াল জনরোষ থেকে উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা বনের প্রাণী নয়। ভুলভাবে ধরা আর ভুল জায়গায় ছাড়ার কারণে এই বিড়ালরা খুব কম দিনই বাঁচে। মেছো বিড়াল অবমুক্ত করার অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গা বাইক্কা বিল।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, মেছো বিড়াল সংরক্ষণে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। মেছো বিড়াল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। মেছো বিড়ালের জন্য বাসস্থান রক্ষা, বন সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ
রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।
গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।
কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’