সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে এগোচ্ছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। তৈরি হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান। কিশোরগঞ্জের ভৈরব, মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল ঘুরে পাদুকা, আগর ও মণিপুরি তাঁতশিল্প নিয়ে সমকালের স্টাফ রিপোর্টার জসিম উদ্দিন বাদল তৈরি করেছেন তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। দ্বিতীয় পর্বে আজ থাকছে ভৈরবের পাদুকাশিল্পের অগ্রযাত্রা, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত।

চাকরির বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এরশাদ আলী আকাশের মনে হলো, এই ধরাবাঁধা কাজ তাঁর দ্বারা সম্ভব নয়। তিনি দাপিয়ে বেড়াতে চান মুক্ত বিহঙ্গের মতো। নতুন কিছু করতে চান নিজের মতো করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর উদ্যোক্তা হওয়ার যে স্বপ্ন এসেছিল মাথায়, সেটি নিয়ে ভাবতে থাকেন; কিন্তু ব্যবসা শুরু করা সহজ নয়। মূলধন সংগ্রহ করাও চ্যালেঞ্জিং। অনিশ্চিত গন্তব্যে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়ার সাহসও দরকার। ইচ্ছাশক্তি আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে স্বপ্ন পূরণ হয়। অবশেষে ২০১৮ সালে স্থাপন করেন কারখানা। 

আকাশ তাঁর কারখানায় উৎপাদিত পাদুকা বা জুতা এখন সরবরাহ করেন শীর্ষ ব্র্যান্ড অ্যাপেক্স, বাটা, বে, ওয়াকার ও ওরিয়নকে। ৫৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। মাত্র ছয় বছরে তাঁর পাঁচ লাখ টাকার পুঁজি রূপ নেয় ৬ কোটিতে। বর্তমানে বছরে টার্নওভার ১০ কোটি টাকা। নাম লিখিয়েছেন রপ্তানিকারকের খাতায়। নিজের জীবনের মোড় ঘোরানোর এই গল্প সম্প্রতি সমকালের কাছে তুলে ধরেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের লেইস ফুটওয়্যার বিডির কর্ণধার এরশাদ আলী আকাশ। 
ভৈরবের উত্তরপাড়া বাহার মার্কেট এলাকায় তাঁর কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আকারে ছোট হলেও এটি একটি কমপ্লায়েন্ট কারখানা। ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে শ্রমিকদের বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। কেউ চামড়া কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন কিংবা পেস্ট লাগাচ্ছেন। কেউ এসব সংযোজন করে ফুটিয়ে তুলছেন পরিপূর্ণ বাহারি জুতা। 

চাকরি ছেড়ে যেভাবে সফল উদ্যোক্তা
আকাশ ২০০৫-০৬ সেশনে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে। ২০১১ সালে বিএসসি (অনার্স) পাস করে ওই বছরই শুরু করেন চাকরি জীবন। প্রকৌশলী হিসেবে চার বছর চাকরি করেন ফেলকন ফুটওয়্যার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৬ হাজার টাকায় শুরু করলেও চাকরি ছাড়ার সময় বেতন পেতেন ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু চাকরিতে বর্ণিল জীবন আটকে রাখতে চাননি। অতীত স্মরণ করে এরশাদ আলী আকাশ বলেন, হঠাৎ একদিন মনে হলো– ‘আমি চাকরি করছি, বেতন পাচ্ছি। আবার আমার মতো অনেকেই বেকার। প্রতিযোগিতার বাজারে চাকরি পাচ্ছেন না তারা। পড়াশোনা শেষে সবাই চাকরির পেছনে ছুটলে চাকরি দেবে কে, যদি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠে? এসব চিন্তা থেকেই কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা জাগে।’
এ ভাবনা বাস্তবে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। আকাশ বলেন, ‘চাকরি থেকে জমানো অর্থ ও কর্জ করে পাঁচ লাখ টাকার তহবিল গড়ি। ছোট একটি কারখানা বানাই। চামড়া, যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে সেখানে নিজেই কাজ শুরু করি। পরে একে একে যুক্ত করি পাঁচজন শ্রমিক। আমার উৎপাদিত পণ্যগুলো মানসম্মত, শতভাগ রপ্তানিযোগ্য ও ব্র্যান্ডের জুতার মতো টেকসই। যোগাযোগ করি প্রাণ গ্রুপের ব্র্যান্ড ওয়াকারের সঙ্গে। তারা পণ্যের মান দেখে ক্রয়াদেশ দেয়। তাদের ডিজাইন ও চাহিদা মতো উৎপাদন শুরু করি। ধীরে ধীরে অ্যাপেক্স, বাটা, ওরিয়ন ও বে’র মতো ব্র্যান্ডের কাজ পাই। ছয় বছর ধরে এভাবেই চলছে উৎপাদন।’ তিনি বলেন, এ পথযাত্রায় ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই)। শ্রমিকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা। এসব সহায়তায় কারখানা বড় হয়েছে। এখন মনে হয় আরও বড় কিছু করা যাবে। বিশ্বখ্যাত কোনো ব্র্যান্ড গড়ে তোলাও সম্ভব। 

তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘কারখানা চালু করার চার বছরের মাথায় রপ্তানির উদ্যোগ নিই। ২০২১ সাল থেকে জাপানে কিছু পণ্য রপ্তানি করছি। বছরে এখন রপ্তানি হচ্ছে সাত-আট হাজার ডলারের পণ্য। এ খাতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এলসি খুলতে সমস্যায় পড়তে হয়। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে কারখানা বড় করা যাবে।’ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চিন্তার জগৎ বদলাচ্ছে। চাকরির পেছনে ছোটার দিনও পাল্টাচ্ছে। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির পেছনে না ঘুরে আকাশের মতো সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার এমন দৃষ্টান্ত অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে তরুণদের। এভাবে একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজেরই ভাগ্য ফেরান না, ভাগ্য বদলান শত শত মানুষেরও। 
এমন আরও অনেক উদ্যোক্তার দেখা মিলেছে ভৈরবে; যাদের ৮০ শতাংশই এক সময় ছিলেন শ্রমিক। তারা জুতা তৈরির কাজ করতেন ঢাকার শ্যামপুর, পোস্তগোলা ও হাজারীবাগে। এই যেমন, ২৬ বছর আগে ঢাকা থেকে ভৈরবে গিয়ে ৩০ হাজার টাকায় জুতার ব্যবসা শুরু করেন মুর্শিদ মিয়া। শ্রমিক থেকে মালিক হওয়া এ উদ্যোক্তা জানান, এখন তিনি বছরে ৫০ লাখ টাকার জুতা বিক্রি করেন। তাঁর ব্র্যান্ডের

নাম ঝিুনক ফুটওয়্যার। 
গুগল ম্যাপের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে ভৈরবের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে গাড়ি থেকে নেমে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা যায় জুতার দোকান। আধাপাকা ঘরে ছোট ছোট কারখানা। প্রতিটি কারখানায় রয়েছে কর্মব্যবস্ততা। কোনো দিকে তাকানোর যেন ফুরসত নেই তাদের। মোটাদাগে তিন ধাপে তৈরি হয় একটি জুতা। যেমন, কেউ বানান ওপরের অংশ; যাকে বলা হয় আপার লেভেল। সোল লেভেল মানে হচ্ছে জুতার নিচের অংশ। এ দুই অংশকে পেস্ট লাগিয়ে বা সেলাই করে সংযোজন করাকে বলে ফিটিংস। এসব কাজ কেউ করছেন হাতে, কেউ মেশিনে। সব প্রক্রিয়া শেষে জুতা প্যাকেজিং হয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলার ক্রয়াদেশদাতার কাছে। 

সবচেয়ে বড় জুতার ব্যবসা কেন্দ্র 
নব্বই দশকে গড়ে ওঠা ভৈরবের পাদুকাশিল্প দেশের সবচেয়ে বড় জুতার ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তিন দশক ধরে চলতে থাকা এ শিল্প গতিশীল করেছে সেখানকার অর্থনীতিকে। বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা পাদুকাশিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বহু পশ্চাৎসংযোগ শিল্প, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বড় বড় শপিংমল।
ভৈরব পাদুকাশিল্প সমিতির তথ্যমতে– ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের অন্য এলাকার সঙ্গে সড়ক, নৌ ও রেলপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা ও স্বস্তা শ্রমের কারণে শিল্পটির দ্রুত প্রসার ঘটছে। প্রথম পাদুকা কারখানা স্থাপন করা হয় উপজেলা পরিষদ এলাকায়। কারখানা বাড়তে বাড়তে ছড়িয়েছে আশপাশের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ছোট-বড় মিলে উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। কারখানা রয়েছে ১০ হাজারের মতো। দৈনিক উৎপাদন হয় দুই-আড়াই লাখ জোড়া জুতা। এ ক্লাস্টারে বছরে টার্নওভার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আগে শুধু স্যান্ডেল তৈরি হলেও এখন লোফার, ক্যাডসসহ উন্নত মানের জুতা তৈরি হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে।

ভৈরবে ৮০ শতাংশ পাদুকা তৈরি হয় রেক্সিন ও আর্টিফিশিয়াল চামড়া দিয়ে। বাকি ২০ শতাংশ হয় মূল চামড়া দিয়ে। পণ্য উৎপাদনে চামড়া, পেস্ট, সলিউশন, রেক্সিন, ফোম, রংসহ বিভিন্ন কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কাঁচামালের ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এর সিংহভাগই আসে চীন থেকে। বর্জ্য হিসেবে থাকা কাঁচামাল থেকে উৎপাদন হয় মানিব্যাগ, বেল্ট, চাবির রিংসহ বিভিন্ন পণ্য।  বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলারের। এতে ভৈরবের অবদান জানা সম্ভব না হলেও উদ্যোক্তারা বলছেন, তাদের অংশ নেহাত কম নয়।

বর্জ্য অব্যবস্থাপনায় পরিবেশ দূষণ
ব্যবসায়ীরা জানান, জুতা তৈরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার হয়। ভৈরবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুব্যবস্থা নেই। বর্ষাকালে বর্জ্যগুলো পানিতে ভেসে বেড়ায়। তাতে পরিবেশ দূষিত হয়। নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়। ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাদুকাপল্লির মার্কেটে সাতবার অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও সরকার কাউকে আর্থিক সহায়তা দেয়নি।
ভাগ্যের উন্নতি ঘটেনি অনেক শ্রমিকের
উদ্যোক্তারা ছোট থেকে বড় হলেও উন্নতি ঘটেনি শ্রমিকের। রাসেল নামের এক শ্রমিক বলেন, জুতার ওপরের অংশের কাজ করেন তিনি। এক ডজন জুতার কাজ করে পান ২২০ টাকা। কাজ করতে হয় ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা। মাসে ১৫ থেকে ২০ দিনের বেশি কাজ করা যায় না।  পাদুকা শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, জুতায় ব্যবহার করা রাসায়নিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেঁচে থাকার জন্য জেনেশুনেও এ কাজ করতে হয়। এখানে চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। অনেকেই অকালে মারা যান।

উদ্যোক্তারা জানান, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ছোট। মূলধনও কম। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মীর সংকট ও লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না। 
ভৈরব পাদুকা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আল আমিন মিয়া বলেন, উন্নত মানের হাসপাতাল ও কম সুদে ঋণ দরকার। সমিতির সহসভাপতি মুর্শিদ মিয়া বলেন, ভৈরবে একটি কমন ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার (সিএফসি) দরকার; যেখান থেকে শ্রমিকরা প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তারা মেশিন ভাড়া নিতে পারবেন।
এসএমই ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে ভৈরবের পাদুকা ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, পণ্যের মানোন্নয়ন ও কমপ্লায়েন্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৪০ জন উদ্যোক্তাকে প্রায় তিন কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন মো.

মুশফিকুর রহমান সমকালকে বলেন, উদ্যোক্তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, কারিগরি জ্ঞান, ঋণসুবিধা ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একটি সিএফসি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে এসএমই উদ্যোক্তাদের ৬ শতাংশ সুদে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস ব যবস থ ক জ কর চ কর র উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সাঈদীর মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি মেডিকেল কিলিং জানাতে হবে: মিজানুর রহমান আজহারী

ইসলামী বক্তা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি মেডিকেল কিলিং তা জানাসোর দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, ‌‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শিরক-বিদআতের আস্তানা তছনছ করে দিয়েছিলেন। আজীবন ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব কেঁদেছে। তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি মেডিক্যাল কিলিং ছিল, তা আমরা এখনও জানি না। এখন বিষয়টি তদন্ত করে জাতির সামনে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।’

শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের  ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের পঞ্চম দিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এই কথা বলেন।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে স্মরণ করে মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা সাঈদী বিজড়িত ময়দান। আমরা কোরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনো ভাবে আমাদের এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। সব ধরনের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যদি আমরা ঐক্য ধরে রাখতে পারি তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি, গুম, খুন দূর করতে পারব। ১৬ বছরের জঞ্জাল ৬ মাসে দূর করা সম্ভব না, কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১৩ বছর জেলে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’

ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাওলানা শামীম সাঈদী, বক্তব্য রাখেন মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বিআইএ জামে মসজিদের খতিব সাফওয়ান বিন হারুন আজহারী, অলি খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ।

মাহফিলে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবিরী আল মাদানী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ