Samakal:
2025-03-03@14:22:40 GMT

ফেলনা নয়, প্রয়োজনীয়...

Published: 31st, January 2025 GMT

ফেলনা নয়, প্রয়োজনীয়...

বেশির ভাগ ফল ও সবজির খোসা ফেলে দিয়েই আমরা বাকি ‌‌অংশটা ব‍্যবহার করি। অনেকেই জানি না, এসব ফল-সবজির খোসা ফেলে না দিয়ে সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যায়।  পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। একটি কমলার প্রায় ২০ শতাংশ অংশ এবং একটি কিউইর ৯ থেকে ১৩ শতাংশ ও একটি ডালিমের প্রায় অর্ধেক অংশই খোসা। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাবার অপচয় হয়, যার পরিমাণ ১.

৩ বিলিয়ন টন। এই খাবারের অপচয় ও ক্ষতি বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৮ শতাংশের জন্য দায়ী, যা বিমান পরিবহন খাতে নির্গমনের তিন গুণেরও বেশি। ল্যান্ডফিল বা ভাগাড়ে স্তূপ করে রাখা বর্জ্য পচে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নির্গত করে, যা কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। ল্যান্ডফিলে না ফেলে পচনশীল বর্জ্য কম্পোস্ট করার মাধ্যমে মিথেন নির্গমন কমানো সম্ভব। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তথ্য-উপাত্তসহ সবিস্তারে তুলে ধরা হয়।  লিখেছেন এইচবি রিতা

খোসা ব‍্যবহারের পাঁচটি পদ্ধতি এখানে দেওয়া হলো– 
কমলার খোসা দিয়ে দারুণ কিছু
কমলার খোসা দিয়ে জেলি (মার্মালেড) সকালের নাশতার জন্য হতে পারে একটি অসাধারণ উপাদান– ব্রেড টোস্টের সঙ্গে মাখন আর কমলার জেলি ভীষণ সুস্বাদু। জেলি বানানোর উপকরণ: সেভিল কমলা (তেতো এবং টকযুক্ত কমলা, যার খোসা ঘন) ১.৩ কেজি, দুটি লেবুর রস এবং ২.৩ কেজি চিনি। প্রথমে পরিষ্কার কমলাগুলো দুই ঘণ্টা সেদ্ধ করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে কমলাগুলো থেকে খোসা ছড়িয়ে নিয়ে, কমলার কোয়া অংশ চেপে রস ছেঁকে নিতে হবে। এই রসে পেপটিন বের হবে, যা কমলার জেলি জমাতে সাহায্য করবে। শেষে চিনি, রসসহ মিশ্রণটি ২০ মিনিট আবারও সেদ্ধ করতে হবে। খোসা কেটে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এই প্রক্রিয়া তিনবার করতে হবে এবং প্রতিবার ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে তেতো স্বাদ দূর করার জন্য। এরপর চিনি এবং পানির সঙ্গে রান্না করলে দারুণ মজার একটি খাবার তৈরি হবে।
আনারসের খোসার ব‍্যবহার
অবাক হলেও সত‍্য যে আনারসের খোসা খাওয়া যায়। মেক্সিকান ঐতিহ্যবাহী ফারমেন্টেড পানীয় ‘টেপাচে’, যা প্রোবায়োটিকের একটি ভালো উৎস। এর রেসিপিও খুব সহজ। ফারমেন্টেশনের ফলে এতে কিছুটা অ্যালকোহল থাকে সাধারণত ১ শতাংশের কম। এই রেসিপির উপকরণে দরকার একট এক গ্যালনের (৩.৮ লিটার) জার, একটি বড় ইলাস্টিক ব্যান্ড, একটি মসলিন কাপড় বা চিজক্লথ, যা জারের মুখ ঢাকবে। প্রথমে একটি আনারস ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে এবং কাণ্ড আলাদা করে নিন। এরপর একটি প্যানে পানি এবং ব্রাউন সুগার বা পিলোনসিলো (মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী অপরিশোধিত চিনি) মিশিয়ে ধীরে ধীরে গরম করুন যতক্ষণ না চিনি গলে যায়। এবার মিশ্রণটি কিছুটা ঠান্ডা করে আনারসের খোসা ও কাণ্ড বয়ামে রেখে তার ওপর গরম চিনি-পানি ঢেলে দিন। এরপর বয়ামের মুখ মসলিন কাপড়, চিজক্লথ বা পরিষ্কার ডিশটাওয়েল দিয়ে ঢেকে একটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিন। এতে বাতাস ঢুকতে পারবে;  মাছি বা ধুলা ঢুকবে না। মিশ্রণটি ফারমেন্ট হওয়ার জন্য রেখে দিন। এটি ২১-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭০-৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ওপরে সাদা ফেনা দেখা যাবে। এটিই ফারমেন্ট হওয়ার লক্ষণ। ফারমেন্টেশন যত বেশি সময় চলবে, স্বাদ তত বেশি হবে। যখন এটি প্রস্তুত হবে, তখন মিশ্রণটি ছেঁকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা পানীয় হিসেবে উপভোগ করুন। স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে আদা, লেবু বা অন্য কোনো ফল যোগ করতে পারেন। যদি এসিড (যেমন লেবুর রস) যোগ করতে চান তাহলে ফারমেন্টেশন শেষে যোগ করুন। কারণ এটি ফারমেন্টেশনের গতি কমিয়ে দেয়।
আদার খোসা
আদার খোসা আমরা অনেক সময় ফেলে দিই। খোসাটিই আদাকে অনেক উপকারী গুণ দেয়; যার মধ্যে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ, যার ফাইটোকেমিক্যাল গুণাবলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিক্যান্সার প্রভাব রয়েছে। এটি ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির ভালো উৎস। আপনি খোসাসহ আদা ব্যবহার করতে পারেন অথবা খোসা অন্য রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন।
আদার খোসা স্যুপে দিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন। ব্লেন্ড বা সার্ভ করার আগে সেটি সরিয়ে ফেলুন। খোসাগুলো পানির সঙ্গে সেদ্ধ করে আদার ব্রথ তৈরি করতে পারেন, যা ফ্রিজে রেখে স্মুদি, জুস, ককটেল, স্পার্কলিং ওয়াটার যোগ করার জন্য ব্যবহার করা যায়, অথবা রুট ভেজিটেবল স্টিম করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাদ বাড়াতে খোসা ওভেনে রোস্ট করতে পারেন। তারপর গুঁড়া করে আদার চা তৈরি করতে পারেন– চা তৈরি হওয়ার পর অবশ্যই ছেঁকে নিতে হবে। এই গুঁড়া রান্না এবং বেকিংয়ে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
বাটারনাট কুমড়ার ব‍্যবহার
মিষ্টি স্বাদের বাটারনাট কুমড়ার খোসা এবং বীজ অনেকেই ফেলে দেন। এগুলো সম্পূর্ণ খাওয়া যায় এবং পুষ্টিকর। কুমড়ার খোসা এবং বীজ ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদানসমৃদ্ধ।
বাটারনাট কুমড়ার খোসা এবং বীজের ব‍্যবহারে আপনি একটি মজাদার স্ন্যাকস তৈরি করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় আপনি খোসা এবং বীজের পূর্ণ পুষ্টি ব্যবহার করতে পারবেন। এটি করতে বীজ এবং খোসা একটি বাটিতে মিশিয়ে তাতে লবণ, পাপরিকা, স্মোকড পাপরিকা, জিরা এবং মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে কিছু অলিভ অয়েল দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এয়ার ফ্রায়ারে রোস্ট করতে হবে; যাতে এটি পুড়ে না যায়। মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করার পর প্রায় ২০ মিনিট পর এটি সুন্দর ও ক্রাঞ্চি হয়ে উঠবে। এ ছাড়া শুকনো খোসা ফ্রিজে রেখে সবজির স্টক তৈরি করতে ব্যবহার করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে স্যুপ বা অন্য কোনো রান্নায় কাজে আসবে।
পেঁয়াজের খোসার ব‍্যবহার
পেঁয়াজের মধ্যে কিছু রাসায়নিক থাকে। যাকে ফ্ল্যাভোনয়েড বলা হয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহবিরোধী গুণাবলি সমৃদ্ধ। এই ফ্ল্যাভোনয়েড ফুটিয়ে এবং বের করে এনে একটি শক্তিশালী রঙের ডাই তৈরি করা যায়। এটি করতে প্রথমে কাপড়টি গরম পানিতে ধুয়ে তেল বা ময়লা সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করতে হবে; যাতে ডাইয়ের কার্যকারিতা ভালোভাবে কাজ করতে পারে। একটি বড় ধাতব পাত্রে পেঁয়াজের খোসা ও দুই কাপ পানি যোগ করুন। মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন, যতক্ষণ না পানির রং গাঢ় হয়ে যায়। এবার খোসা সরিয়ে ফেলুন এবং কাপড়টি গরম ডাইয়ের মধ্যে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখুন। কাপড়টি পেঁচানো না রেখে শুকাতে দিন। যদি রং গাঢ় না হয়, আবার ডুবিয়ে রাখুন যতক্ষণ না কাঙ্ক্ষিত রং পেয়ে যান। এভাবে আপনি পেঁয়াজের খোসা ব্যবহার করে প্রাকৃতিক, স্থায়ী ডাই তৈরি করতে পারেন। 
লেখক: নিউইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক, শিক্ষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র করত স দ ধ কর য গ কর র জন য কমল র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই

নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।

এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’

গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।

দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ