Samakal:
2025-04-24@16:52:14 GMT

শিশুখাদ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি কেন?

Published: 31st, January 2025 GMT

শিশুখাদ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি কেন?

সম্প্রতি বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্যকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলা শুধু পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না; এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিক্রয়কর্মী ও বেকারি মালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভ্যাট বাড়ানোর প্রভাব শুধু পণ্যের দাম বাড়িয়েই থেমে থাকছে না; বরং বাজারে ভেজাল পণ্য এবং অপ্রয়োজনীয় কাটছাঁটের মতো সমস্যাও বাড়ছে। ফলে এ সংকট শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মূল্যায়ন করা জরুরি।
পুষ্টিহীনতায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সক্ষমতা কমে যায়। শিশুখাদ্যে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হলে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে, যা শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৩৫.

৫% শিশু স্টান্টিং তথা বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ভুগছে। ২২% শিশু ওয়েস্টিং (অতিরিক্ত দুর্বলতা) সমস্যার শিকার ও ৪০% শিশু আয়রন ঘাটতিজনিত সমস্যায় ভুগছে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের মূল্য এমনিতেই বেশি। তদুপরি ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে শিশুখাদ্যের দাম অনেক কম এবং ভ্যাটমুক্ত কিংবা ভ্যাটের পরিমাণ সীমিত। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মালয়েশিয়ায় শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য ভ্যাটমুক্ত। দেশটির সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে কম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ পুষ্টি কর্মসূচি পরিচালনা করে। ইউনিসেফের মতে, পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে অপুষ্টিজনিত সমস্যার কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, তা কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা সম্ভব। বিলাসপণ্য, উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের ওপর কর বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু শিশুদের পুষ্টির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অতিরিক্ত ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মতো এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। শিশুদের সুরক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা কেবল সামাজিক বা নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ক্ষতিকর। সরকারের উচিত, শিশুখাদ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। এটা শুধু জনকল্যাণের জন্য নয়, বরং সরকারের দীর্ঘমেয়াদি সুনাম, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

প্রজ্ঞা দাস 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, 
ইডেন মহিলা কলেজ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য র ওপর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার দমনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে ইতালি’

অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনসহ বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতালি সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।

সাক্ষাতে আসন্ন ৫-৬ মে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসির বাংলাদেশ সফর, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, নিরাপত্তা খাতে পারস্পরিক সহায়তা; পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইতালি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু।” তিনি উল্লেখ করেন, ইতালিতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী কর্মরত আছেন, যারা রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে এই সংখ্যাটি আরো বাড়বে এবং দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, সফরকালে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হবে এবং একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে উভয় দেশের সম্মতিক্রমে অবৈধ অভিবাসন রোধ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন এবং পুলিশ বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে ঘোষণা, সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বৈধ চ্যানেলে জনশক্তি রপ্তানিতে আগ্রহী। আমরা অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে এবং যারা দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মো. শামীম খান, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মো. জসীম উদ্দিন খান এবং ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসের অভিবাসন সংযুক্ত কর্মকর্তা জিউসেপ্পে দি জিওভান্নি উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ