বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মহত্যা। এটি এমন একটি জঘন্যতম সিদ্ধান্ত, যা শুধু জীবনকে শেষ করে না; বরং একজন ব্যক্তির চারপাশের মানুষদের অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। তা আশানুরূপ না হওয়া বা সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ জঘন্যতম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় অনেক শিক্ষার্থী।
গত ২৭ জানুয়ারি ইশতিয়াক চৌধুরী মাহিম নামে এক শিক্ষার্থী অনেক হতাশার মধ্যে পড়ে এ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আবার বিভিন্ন পরিবারে রয়েছে নানা ধরনের সমস্যা। যেমন– বিয়ে বিচ্ছেদ, স্বামী বা স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কে আসক্তি, ব্যবসায় ক্ষতি, বিষণ্নতা, হতাশা, একাকিত্ব, ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাপে ডুবে যাওয়া অনেক মানুষ এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। যেখানে তারা মনে করেন, তাদের জীবনের আর কোনো মূল্য নেই। এই অনুভূতি থেকে জন্ম নেয় আত্মহত্যা করার চিন্তা, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং জীবন ধ্বংস করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে সারাদেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য না হন। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই বন্ধ হবে আত্মহত্যা।
বন্ধ হোক আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ জঘন্যতম সিদ্ধান্ত। খুলে যাক নতুন জীবনের দরজা। যেখানে আশা আছে, ভালোবাসা আছে এবং নতুন স্বপ্নের জন্য বেঁচে থাকার শক্তি আছে।
রবিউল হাসান সাগর
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ (২০২৩-২৪)
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্য মেলার শেষ দিনে ছিল উপচে পড়া ভিড়
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা নেমেছে শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ে। বিকেল শেষে সন্ধ্যায় সে ভিড় রূপ নেয় জনসমুদ্রে। এমন ভিড়ের মধ্যে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম।
বিকেলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলায় থাকা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কার বিতরণ করেন তিনি। এবার বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ২২টি প্রতিষ্ঠান প্রথম পুরস্কার, ১৬টি দ্বিতীয় এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এর আগে ১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার দুপুর ২টার পর থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নামে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে ছিল মানুষের দীর্ঘ সারি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। মেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বাণিজ্য মেলায় আগত হাটাব এলাকার দর্শনার্থী মামুন মোল্লা বলেন, খুবই ভালো লেগেছে। তবে মেলার ভেতরে ফুটপাতে অনেক হকার বসিয়ে মেলার মানকে একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে। এদের জন্য হাঁটতে অসুবিধা হয়।
মেলায় বিদেশি স্টল কাশ্মীরি শাল হাউসের কর্মী আব্দুল মালেক বলেন, এবার বিক্রি ভালো। দর্শনার্থীও অনেক বেশি।
সায়মন ফেব্রিক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি রাজিব নয়ন বলেন, মেলার শুরুতে একটু হতাশ হলেও শেষটা খুব ভালো ছিল। বেচাবিক্রি বেশ ভালো হয়েছে।
মিয়াকোর মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের ব্যবসা ও প্রচার এবং জনগণের সাড়া– সব বিষয় পজিটিভ। ঢাকার ভেতর থেকে রূপগঞ্জেই আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।
মেলার খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করে আক্কাস আলী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বাণিজ্য মেলার সবই ভালো ছিল, কিন্তু খাবারের মান তেমন ভালো না; দাম তিন থেকে চার গুণ বেশি।
এদিকে শুক্রবার কয়েক লাখ দর্শনার্থীর চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম ৭০০ পুলিশ সদস্য ও শতাধিক সেনা। এর মধ্যে দুপুরে তুচ্ছ ঘটনায় ঈগলু আইসক্রিম স্টলের বিক্রয়কর্মী ও মেলার প্রবেশদ্বার ঠিকাদার নিয়োজিত কর্মীদের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মেলায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। পরে তাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। ঈগলু আইসক্রিম স্টলের কর্মচারীদের হামলায় যমুনা টিভির রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন জয় আহত হন।
রূপগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষ যে যেভাবে পারে, এলোমেলোভাবে মেলায় প্রবেশ করে। এর মধ্যেও সব ঠিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি।
এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হন। মেলায় ৯টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এ ছাড়া দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৬১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। এবারের মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিধারণ সংবলিত তারুণ্যের বাংলাদেশ, ৩৬ জুলাই, মুগ্ধ কর্নারগুলো ছিল তরুণদের আগ্রহের স্থানে।