লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিনের দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে আসন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আব্বাস সুমন। তিনি আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

বিএনপির দলীয় সম্মেলনে মঞ্চে বিশেষ অতিথির চেয়ারে বসা আওয়ামী লীগের ওই নেতার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষকে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শামীম আব্বাস সুমন রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৫১ নম্বর সদস্য। তিনি আমাদের মিছিল মিটিং সক্রিয় ছিল।

রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা.

জামাল উদ্দীন জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আব্বাস সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য কি না জানা নেই। তবে তার পরিবার বিএনপি। আমরা তাকে দাওয়াত দেইনি। তিনি এসে অনুষ্ঠানে বসেছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আব্বাস সুমন বলেন, এলাকার স্বার্থে আমরা তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেছি। এখন বিএনপির পদ না পেলেও পাওয়ার আশা করছি।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন জানান, শামীম নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট করেছেন। যে কমিটির সদস্য হিসেবে তার নাম প্রচার করা হচ্ছে সেটা কোনও অনুমোদিত কমিটি নয়। এটি তার নাম দিয়ে ছাপানো একটি কাগজ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ব এনপ র র সদস য আওয় ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মা হতে এসে প্রাণ হারাচ্ছে ওরা

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে প্রায় প্রতিদিনই ভেসে আসছে অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে অন্তত ১৫১টি কচ্ছপ মারা গেছে। কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া সৈকতেও অনেক মৃত কচ্ছপ ভেসে আসছে। কচ্ছপ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার লোকজন জানান, বাংলাদেশে অলিভ রিডলি কচ্ছপের প্রজনন ক্ষেত্র কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন সমুদ্র উপকূলের সৈকতের বালিয়াড়ি। প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) এ প্রজাতির মা কচ্ছপ দল বেঁধে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। গত দুই দশকে কক্সবাজার সৈকতে কচ্ছপের ডিম দেওয়ার নিরাপদ স্থান কমে নেমে এসেছে অর্ধেকে। 

গত বছরও প্রজনন মৌসুমে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মৃত মা কচ্ছপ ভেসে এসেছিল বা ডিম পাড়তে এসে মারা পড়েছে। 
মৃত অধিকাংশ কচ্ছপের পেটে ডিম ছিল। 

গত বছরের তুলনায় এ বছর কচ্ছপের মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক। 
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিমুল ভূঁইয়া জানান, গত সাত দিনে ১৫১টি কচ্ছপ মারা গেছে। সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক, হিমছড়ি ও প্যাঁচারদ্বীপ এলাকায় ১৪টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী কচ্ছপ রয়েছে। এসব কচ্ছপ এক থেকে দুই দিন বা তারও আগে মারা পড়েছে। কিছু কচ্ছপ এক সপ্তাহ বা ১০-১২ দিন আগে মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মৃত কচ্ছপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শিমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এ সময় সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়িতে ডিম দিতে আসে মা কচ্ছপ। এই মা কচ্ছপগুলো উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ছে বা বড় নৌযানের ধাক্কা কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা পড়ছে।’ 

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানান, অলিভ রিডলি কাছিম সমুদ্রের হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার সময় বার্নাকল, ক্রাস্টেসিয়ানের ছোট প্রাণীরা তাদের গায়ে আশ্রয় নেয়। এতে ছোট প্রাণীগুলো শিকারির হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ধরনের কচ্ছপ সামুদ্রিক ঘাস, শ্যাওলা, অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন– জেলিফিশ, পোকামাকড় খেয়ে সমুদ্রের পরিবেশ ঠিক রাখে। কাছিম যখন সৈকতে ডিম পাড়ে, তখন তারা বালু ও গাছপালার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে। কচ্ছপের ডিমের খোসা সার হিসেবেও কাজ করে এবং উপকূলের বালুর স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে ভাঙন রোধে সহায়ক। 
কচ্ছপের প্রজনন ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) ২০০৩ সালে করা এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসে। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কচ্ছপের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল। এখন এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২-এ ঠেকেছে। নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, মা কচ্ছপের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। রাতের বেলায় নির্জন সৈকতে এসে বালুতে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। এর পর মা কচ্ছপ ফিরে যায় সাগরে। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। এর পর বাচ্চাগুলো গর্ত থেকে বের হয়ে চলে যায় সাগরে। কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানগুলো কুকুর-শিয়াল বা অন্য কোনো প্রাণী যাতে নষ্ট করতে না পারে, তার জন্য পাহারা ও ঘের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শফিকুর রহমান আরও বলেন, সোনাদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সৈকতের নির্জন এলাকায় কচ্ছপ দলবেঁধে ডিম দিত। 
সৈকতে অপরিকল্পিত পর্যটন, অবকাঠামো নির্মাণ, আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়াসহ নানা কারণে কচ্ছপের প্রজনন বাধা পাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, কচ্ছপসহ সব জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য কক্সবাজারে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হবে। নইলে কোনোভাবেই পরিবেশ কিংবা জীববৈচিত্র্য কিংবা সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ