নারীদের খেলায় আর ‘নাক গলাবেন না’ জড়িতরা
Published: 31st, January 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধে মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতরা ক্ষমা চেয়েছেন। তারা আর ‘নারীদের খেলাধুলায় নাক গলাবেন না’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শুক্রবার উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থানকালে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চা হাজি কওমি মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিমের পক্ষে কথা বলেন মাদ্রাসার শিক্ষক মোস্তাকিম হোসাইন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ‘দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত’ বলে জানান।
শিক্ষক মোস্তাকিম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার তিলকপুরে নারী ফুটবল খেলা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে যা হয়েছে, তাতে দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত। আমরা ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করব না। যেখানে সরকার খেলাকে বৈধতা দিয়েছে, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে আর কখনও যাব না। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমরা। যা করেছি, এখান থেকে আমরা লজ্জিত। ভবিষ্যতে জয়পুরহাট জেলাতে আর কখনও এ ধরনের কাজ হবে না। আমরা নারীদের খেলার বিষয়ে আর নাক গলাব না।’
ভ্যাটকুরি মসজিদের খতিব ও তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে; আমরা আইনকে শ্রদ্ধা জানাই। সরকারি নিয়ম-নীতিতে খেলা হোক– এটা আমরাও চাই। আলেম-ওলামাদের মধ্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটি ঘটেছে। সামনের দিনে আর যেন না ঘটে, আমিও সেটিই চাচ্ছি। সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যেতে চাই না।’
নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন করায় গত মঙ্গলবার বিকেলে আক্কেলপুর উপজেলা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করে স্থানীয় মুসল্লিদের একাংশ। ভাঙচুর শেষে ওই মাঠেই তারা অবস্থান নেন।
এ ঘটনায় তিলকপুর পুরোনো বাজার জামে মসজিদের খতিব আব্দুস সামাদ বলেন, ‘খেলার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো পদক্ষেপ ছিল না। তবে সামান্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। খেলা উন্মুক্তভাবে চললে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
টি স্টার ক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন বলেন, ‘তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়। আমরা আলেম সমাজের সঙ্গে একত্র হয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, ‘আমরা সবকিছু মিলিয়ে সমাধানের পথে চলে এসেছি। এখানকার জনগণ সবাই একতাবদ্ধ হয়েছেন। এখানে খেলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা নেই। খুব দ্রুতই আমরা খেলা পরিচালনা করতে পারব।’
এর আগে ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমারকে। অন্য সদস্যরা হলেন– আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান, জেলা ক্রীড়া অফিসার আরিফুজ্জামান ও ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আহমেদ। আগামীকাল রোববারের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম, আক্কেলপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা আয়োজক কমিটি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিলকপুর বাচ্চাহাজী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকের প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় আলেমদের নিয়ে বৈঠকে করেন।
স্থানীয় আফজাল হোসেন বলেন, মাইকে প্রচার শোনার পর থেকেই স্থানীয়রা নারী দলের খেলা নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন। প্রথমে একবার হুমকি দিয়ে এটি বন্ধ করেন। কিন্তু আয়োজক কমিটি খেলা চালানোর জন্য আবার মাইকিং করে। এটি শোনার পর বেশ কয়েকজন এসে ভাঙচুর করেন।
তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঘটনার পর আমি বিদ্যালয় মাঠে গেছি। তবে এটি কেন হলো, বলতে পারব না।’
আক্কেলপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ হওয়ায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল র উপজ ল র ঘটন ফ টবল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ
বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।
জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।
জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।
এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।
আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়।