অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনের বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস ফেসবুকে তাদের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে লিখেছে- ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলিউডের রোমান্টিক কমেডির চেয়েও বাস্তবতার সাথে কম মিল রয়েছে।’

প্রেস উইং ফ্যাক্টস আরো বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ কৌশল ব্যবহার করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রক্সি হিসেবে কাজ করা শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া এবং বাংলাদেশের জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম্মান করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের যে জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলো গত জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে নবীনবরণ অনুষ্ঠিত

নিটার ১৪তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন, নবীন শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতার আহ্বান

হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ হিসেবে তথ্য পরিচালনা বা ‘অপতথ্য’ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে লক্ষ্যবস্তুকে অভ্যন্তরীণ এবং তার স্বাভাবিক বন্ধু ও মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।

বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা সাধারণত একেবারে মনগড়া একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি বা প্রমাণ থাকে না, বরং নামহীন ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বানানো হয় এবং তা বন্ধুত্বপূর্ণ বা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

প্রেস উইং ফ্যাক্টস উল্লেখ করে-‘যদি গল্পটি যথেষ্ট চটকদার হয়, তাহলে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এটি তুলে নেবে এবং প্রচারের ফলে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একপর্যায়ে, যারা বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু বিশদ বিশ্লেষণের সময় পান না, তারাও এই গল্পটি সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারেন, যা মূলত একজন প্রোপাগান্ডাবিদের কল্পনাপ্রসূত ধারণা ছাড়া আর কিছুই না।’

ফ্যাক্টস আরো উল্লেখ করেছে, মিথ্যা প্রচারণা ও অপতথ্যে বিশ্বাস করে মানুষ যখন যার বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে, তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, তখন তা পুরোপুরি সফল হয়।

এই ক্ষেত্রে, প্রতিপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের নিজস্ব সার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচালনার আকাঙ্ক্ষা। আর স্বেচ্ছায় এই মিথ্যা প্রচারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।

ফ্যাক্টস আনন্দবাজারের উদ্দেশে বলেছে, ‘আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি প্রকৃত সাংবাদিকতা করবেন, যেখানে সত্য ঘটনা অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, নাকি মিথ্যা প্রচারণার অংশ হিসেবে মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে একটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন?’

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ য ক টস

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান অগ্রহণযোগ্য

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফসল, সন্দেহ নেই। আন্দোলনটি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহের আগে নেহাতই সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা অবসানের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও ১৪ জুলাই দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বক্তব্যটি আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে কয়েকজন সমন্বয়ককে ডিবি হারুনের অফিসে ধরে নিয়ে গিয়ে ‘মিডিয়া-ডিনার’ খাওয়ানোর দৃশ্য এবং সমন্বয়কদের একজনকে দিয়ে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় আন্দোলন সমাপ্ত করার ঘোষণা দিতে বাধ্য করা জনগণের ক্রোধকে দ্রুত ঘনীভূত করে। অন্যদিকে আন্দোলন মোকাবিলার জন্য পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মাস্তান বাহিনীকে লেলিয়ে দেন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের, যার ফলে সারাদেশে এক দিনেই শতাধিক আন্দোলনকারীর প্রাণহানি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে কারফিউ জারি করে তা বলবৎ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু কারফিউ প্রায় ১০ দিন চলার পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৩ আগস্ট দুপুরে সামরিক বাহিনীর ঢাকায় অবস্থিত সব অফিসারের সভা (দরবার) ডাকেন। সভায় প্রধানত জুনিয়র অফিসাররা মতামত ঘোষণা করেন– সেনাবাহিনী জনগণের বিপক্ষে গুলি চালাবে না। সেনাপ্রধান তাদের মত মেনে নেন। সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিশাল সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। তাদের ঘোষিত ৬ আগস্টের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ৪ আগস্ট আবারও ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশের যৌথ বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন শেখ হাসিনা। ওই দিনও শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিন দেশের প্রায় ৪০০ থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। উপরন্তু, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় আক্রমণ চালিয়ে ১৩ জন ও নরসিংদীতে ৬ জন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সাহস হারিয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে থানা থেকে পালিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ বুঝে যায়, শেখ হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

এ প্রেক্ষাপট তুলে ধরার কারণ এটা বলা, গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মানুষের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, শেখ হাসিনাকে উৎখাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কারা রয়েছে– সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য ছিল না। শেখ হাসিনার স্থানে কে ক্ষমতায় আসবে– সেটাও তাদের ভাবনায় ছিল না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের সাড়ে পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর জনগণের সিংহভাগ বুঝতে পারছে– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবশালী সমন্বয়কদের বড় অংশ একটি বিশেষ মতের। আন্দোলনের সময় তারা তাদের পরিচয় সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অনেকেই ছদ্মবেশে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক পরিচয় পর্যন্ত ধারণ করেছিলেন। এখন শীর্ষ সমন্বয়করাই বলে বেড়াচ্ছেন, আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যদিও লাখ লাখ জনতার মিছিল সংঘটিত করার পেছনে ছাত্রশিবিরের কোনো দলীয় তৎপরতার চিহ্নই ছিল না। 

এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে– সরকারে অন্তর্ভুক্ত ছাত্রনেতারাসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সমন্বয়ক, যারা বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে জনপরিসরে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন; তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবিরের লোক। এই ব্যাপারটি এখন জাতির সামনে একটি মহাবিপদ হিসেবে হাজির হয়েছে। কারণ তারা জাতির প্রধান ঐতিহাসিক অর্জন ও আদর্শ ‘মুক্তিযুদ্ধ’কে মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি সিংহভাগ সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৭১ সালে কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তা কারও অজানা নয়। তারা গণহত্যাকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে ‘আলবদর’ ও ‘আলশামস’ গঠন করেছিল। এই আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ক্যাডাররা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘাতকদের সশস্ত্র সহায়তাকারী, গোয়েন্দা বাহিনী ও পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও অত্যন্ত নৃশংস ঘাতকের ভূমিকা পালন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল রাও ফরমান আলীর নীলনকশা অনুসারে এই আলবদর বাহিনীর ক্যাডাররাই দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি গণঅভ্যুত্থান ছিল না। ছিল এক জনযুদ্ধ, যেখানে ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত সব অংশের প্রায় সব সদস্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এ কথা সত্য, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে দুই বা আড়াই লাখ মানুষ। কিন্তু ভারতের মাটিতে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরের এক কোটিরও বেশি মানুষ বলতে গেলে সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। দেশের ভেতরে কত লাখ পরিবার যে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। সর্বোপরি এ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলেছে পাকিস্তানি শাসনের প্রায় ২৩ বছর ধরে। ফলে এর স্মৃতি, আবেগ ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলবে।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি যদি মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সমন্বয়কদের মদদ পেলেই তারা জনগণকে ধোঁকা দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা স্বীয় কবজায় রাখতে পারবে– তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরও বলতে চাই, তাদের এই বিশেষ মহলকে তোষণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য ও অবস্থান দেশের সিংহভাগ জনগণ মোটেও পছন্দ করছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করেছে, সেগুলোর প্রতিবেদনে যদি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার কিংবা খাটো করার কোনো প্রয়াস দৃশ্যমান হয়, তাহলে তাদেরও জনরোষ মোকাবিলা করতে হবে। সম্প্রতি ছাত্রদের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বেশ হইচই হলো। বলা হচ্ছে, সব রাজনৈতিক দলের মত নিয়ে এই ঘোষণাপত্র সরকার দেবে। এই ঘোষণাপত্র আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, আমরা জানি না। তবে এতে যদি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন সংবিধানকে ‘ছুড়ে ফেলা’র মতো কোনো কোনো সমন্বয়কের দম্ভোক্তির প্রতিফলন ঘটে, তাহলে জনগণ এর উদ্যোক্তাদের শুধু রুখে দাঁড়াবে না, ছুড়েও ফেলতে পারে– আগেভাগেই এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি।

অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম: একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ; সাবেক সভাপতি
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি                                                             

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচিত সরকারকে হাসিনার বিচার করার সুযোগ দিন: জালাল
  • আনন্দবাজারের প্রতিবেদনকে ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’ বলল প্রেস উইং
  • নির্বাচনের চাপ বাড়াতে ‘দ্রুত আন্দোলনে যাবে’ বিএনপি 
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান
  • চীনের বসন্ত উৎসবে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
  • আ. লীগের হরতাল-অবরোধ ঘিরে কঠোর হবে সরকার: প্রেস সচিব
  • বৈষম্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান অগ্রহণযোগ্য
  • রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও জনগণের ‘ম্যাট্রিক্স’