বিশপ স্যামুয়েল মানখিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তের দাবি খৃস্টান নেতাদের
Published: 31st, January 2025 GMT
চার্চ অব বাংলাদেশের মডারেটর ও ঢাকার বিশপ স্যামুয়েল সুনিল মানখিনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে তার বিচারের দাবি জানিয়েছেন খৃস্টান কমিউনিটির নেতারা।
তারা দাবি করেছেন, বিশপ স্যামুয়েল নিজের পরিবার, অনুগত লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে জাতীয় চার্চ পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তারা এ দাবি জানান।
সভায় বক্তারা বলেন, হালুয়াঘাটের স্যামুয়েল সুনিল মানখিন অবৈধভাবে চার্চের ও সরকারি জমি বিক্রি, সীমাহীন কুকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এই চক্রটি ট্যাক্সও ফাঁকি দিচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।
স্যামুয়েল মানখিন চার্চের সংবিধান পরিবর্তন করে এবং সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের চাকরির মেয়াদ ৬৮ বছর করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এনে তারা বলেন, এ অপকর্মে সহায়তা নিয়েছেন স্ত্রী মনিতা মানখিন, ছেলে আছিক চাম্বুগং, সিনড সম্পাদক রেভারেন্ড প্রভুদান হীরা, সিনড ডায়োসিসের কতিপয় সদস্য, শালোম উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও ঢাকা ডায়োসিসের কয়েকজন পুরোহিতের।
সভায় অভিযোগ আরও করা হয়, ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন মল্লিক বাবুকে চার্চের টাকা খরচ করে জামিনে মুক্ত করা হয়। হালুয়াঘাট মিশনের ৩ একর, রাজশাহী শহরের ১১ শতাংশ ও জণ্ডীপুর বয়েজ হোস্টেলের জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়াও সৈয়দপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়ার মশান, হালুয়াঘাট, পানিহাটা ও রাজশাহীর মহিষবাথান বিক্রি করে চার্চের অস্তিত্ব বিলীন করা হয়েছে।
তারা বলেন, চার্চের ১০ কোটি টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফিক্সড ডিপোজিট করে তার লভ্যাংশ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
স্যামুয়েল সুনিল মানখিনের স্ত্রী মনিতা মানখিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কুষ্টিয়া মিশন স্কুলে অডিট করতে না দিয়ে তিনি ৪২ লাথ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও স্কুলের দায়িত্বে থাকাকালে মিশনের নামে ১০ লাখ টাকা এফডিআর না করে আত্মসাৎ করেন এবং নিয়োগ ও বদলির নামে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
খৃস্টান কমিউনিটির নেতা অগাস্টিন দীপক কর্মকারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বইমেলা ঘিরে উচ্ছ্বাস, উদ্বোধনে অধীর অপেক্ষায়
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস।
চলতি বছরে আয়োজিত বইমেলার রঙ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে লাল, কালো ও সাদা। বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে লাল, শোকের প্রতীক হিসেবে কালো এবং আশার প্রদীপ হিসেবে চিরকালীন সাদা।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের অমর একুশে বইমেলার প্রেক্ষাপটটাও ভিন্ন। এবারের অমর একুশে মেলায় গণঅভ্যুত্থানের নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলায় থাকছে ‘জুলাই চত্বর’। মেলায় বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হবে গণঅভ্যুত্থানকে।
আরো পড়ুন:
বাংলা একাডেমি পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গোলমাল ছিল: ফারুকী
বাংলা একাডেমি
‘গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ’
বইমেলা ঘিরে উচ্ছ্বাস
বইপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় আসর অমর একুশে বইমেলা ঘিরে চলছে উচ্ছ্বাস। মেলা শুরুর আগের দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে প্রকাশক, লেখক, পাঠকদের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বৃহষ্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার বিকেল ৩টায় শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক আবুল কাশেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম স্বাগত বক্তৃতা করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবার বইমেলা প্রাঙ্গণে পরিবেশ সুরক্ষা সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট পরিবেশ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আয়োজনস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিত সব স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্টফুড, কফিশপ, খাবারের দোকান ইত্যাদি প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ যেমন পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুরস্কার
প্রতি বছরের মতো এবারও ২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের গুণগতমান ও শৈল্পিক উৎকর্ষের ওপর ভিত্তি করে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের পুরস্কার দেওয়া হবে। সেরা বইয়ের জন্য দেওয়া হবে-চিত্তরঞ্জন পুরষ্কার, শৈল্পিকভাবে সেরা বই প্রকাশের জন্য দেওয়া হবে-মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, সেরা শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য দেওয়া হবে-রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার, স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে-কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার।
স্টল ও প্যাভিলিয়ন
বইমেলায় এবার বেড়েছে আয়তন ও প্রকাশক সংখ্যাও। মোট ৭৮০টি প্রকাশনা থাকবে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টিসহ মোট ইউনিট থাকবে ১০৮৪টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি)। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি (গত বছর প্যাভিলয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশু চত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৬টি এবং ইউনিট ১২০টি (গত বছর ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি)।
বইমেলার বিন্যাস
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে তবে আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানের কারণে গতবারের মেলার থেকে বের হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যাান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট ৪টি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, খাবারের স্টলগুলোকে এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে। শিশুচত্বর মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্খিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
এছাড়া অমর একুশে বইমেলায় এবার বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শতকরা ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বইমেলার সময়-সূচি
পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া)। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
ঢাকা/সৌরভ/সাইফ