ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা বন্ধে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে কোন দেশ?
Published: 31st, January 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। সেই আদেশেই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। এতে বলা হয়, ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এই আদেশের ফলে অনেক দেশের ‘মাথায় হঠাৎ করে বাজ পড়েছে’। অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিতে ধসের।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা কেবল যে মানবিক সহায়তা তা নয়, বরং এর উদ্দেশ্য বহুবিধ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ৯০ দিন পর তারা এই কর্মসূচি পর্যালোচনা করবে। অর্থাৎ সহায়তা হয়তো চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ঘটনা চলছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো র্যাচেল বনিফিল্ড আল-জাজিরাকে বলেছেন, মার্কিন সহায়তা বন্ধের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে, সব প্রোগ্রাম ভালো কাজ করে না এবং বন্ধ করা যেতে পারে।
তবে অনেকে বলছেন, উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ হলে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ বিপাকে পড়বে। তবে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে কোন দেশ, তা বিশ্লেষণ করা যাক-
২০২৩ সালে বিদেশি সহায়তাপ্রাপ্ত শীর্ষ দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০ দেশে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা এবং ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত শীর্ষ দেশগুলো হলো- ইউক্রেন, ইসরায়েল, ইথিওপিয়া, জর্ডান, মিশর, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, সিরিয়া, কেনিয়া, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, কলম্বিয়া, মোজাম্বিক, তাঞ্জানিয়া, লেবানন, ইরাক এবং বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কোন দেশ কতটুকু পায়
২০২৩ সালে মার্কিন সহায়তার একটি বড় অংশ অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছিল, যা প্রায় ৫৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছে জর্ডান। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) থেকে দেশটি অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। এরপর পর্যায়ক্রমে ইয়েমেন এবং আফগানিস্তান ৩৫৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন এবং ৩৩২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফেডারেল বিভাগ যেমন পেন্টাগন এবং ইউএসএআইডি-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। যেখানে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এরপর স্টেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার এবং ট্রেজারি থেকে ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে।
সেক্টর অনুয়ায়ী, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি তহবিল দেওয়া হয় ১৯ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তহবিল দেওয়া হয় স্বাস্থ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলার এবং মানবিক সহায়তায় ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন দেওয়া হয়।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে তার মিত্রদের সামরিক সহায়তায় ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি ইসরায়েল এবং মিশর পেয়েছে।
বাংলাদেশ কতটা সহায়তা পেত
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। এর আগের বছরগুলোতে আড়াইশো থেকে তিনশো মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন ডলার।
ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএইড এর তথ্য বলছে, এই অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার জন্যও বরাদ্দ ছিল এতে।
অন্যান্য বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমের অর্থায়ন বজায় থাকবে, ইউএসইডের বরাতে এমনটি জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা বন্ধের প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা বন্ধের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং ব্যয় কমাতে শুরু করেছে তারা। এতে বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ ও স্থগিত করেছে উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি কর্মীদের রাতারাতি ইমেইল করেছেন এবং ব্যয় কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ানকে একটি মেইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আগামী কয়েক সপ্তাহ খুব সাবধানতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে করে শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের ওপর অর্থায়নের অনিশ্চয়তার প্রভাব প্রশমিত করতে সহায়তা করে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, যেটি গত বছর মার্কিন অর্থায়নে ২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। যাতে করে অন্তত ১০০টি দেশ ১২২ মিলিয়ন মানুষকে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান করতে পেরেছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রভাব ইউক্রেনেও পড়তে পারে। যেখানে আগে থেকে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হয়েছিল। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়ে ইউক্রেন অস্ত্র সহায়তায় বড় অংকের সহযোগিতা পেয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএইড মিশনের সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’, যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মানবিক এবং উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে।
তিনি জানান, বিদেশি সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে পড়তে পারে।
‘এটি শুধু সাহায্য স্থগিতই নয়, বরং ইতোমধ্যে দেশটির অর্থায়নে চলমান চুক্তিগুলোর কাজ বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করে’, যোগ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নোটিশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
‘বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কথাটি একবার ভাবুন। এটি অনেক বড় একটি বিষয়’, বলেন জশ পল।
এদিকে কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও বিপুল কর্মীসংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে পরিচিত ব্র্যাক। বাংলাদেশ ভিত্তিক সংস্থাটির কাজ রয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশে নয়টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করেছেন তারা। এর মধ্যে তিনটি প্রোজেক্ট সরাসরি আমরা বাস্তবায়ন করি, তিনটি অন্য এনজিও দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল আরেকটি উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তাদের দুইটি প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কয়েকজনকে হোম অফিস করতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সবার মধ্যে।’
সূত্র: আল-জাজিরা এবং বিবিসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ড ভ লপম ন ট পরর ষ ট র ২০২৩ স ল সহয গ ত প রকল প ইউক র ন র জন য বন ধ র তহব ল দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
শীর্ষ তিন পোশাকের রপ্তানি কমছে
চার দশকের বেশি সময় ধরে কম দামের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরি বা শ্রেণির তৈরি পোশাকই বেশি রপ্তানি হয়। সেগুলো হচ্ছে ট্রাউজার, টি–শার্ট ও নিট শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস। মূলত ট্রাউজার, টি–শার্ট ও সোয়েটারই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। গত দুই অর্থবছর (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) ধরে এই পাঁচ শ্রেণির পোশাকের রপ্তানি কমছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংগঠনটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮১ শতাংশই আসে ট্রাউজার, টি–শার্ট ও নিট শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস থেকে।
শীর্ষ তিন পোশাক পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়া নিয়ে রপ্তানিকারকেরা বলছেন, দুই বছর ধরে সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পোশাকের রপ্তানি কমেছে। এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ পেতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হয়। বিভিন্ন কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ট্রাউজার, টি–শার্ট ও সোয়েটারের মতো পোশাকের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। যে কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যায়। তার প্রভাবে গত দুই বছর সেসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার আগের দুই অর্থবছরে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ২৬১ ও ৩ হাজার ৮১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এমনটা জানা গেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে।
বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট পোশাক রপ্তানির ৩৩ শতাংশই হলো ট্রাউজার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্রাউজারের রপ্তানি প্রায় ৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। করোনার সময় ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের কম ট্রাউজার রপ্তানি হয়েছিল। তারপর ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫১ এবং ১ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের ট্রাউজার রপ্তানি হয়।
সস্তায় টি–শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশের বেশ সুনাম রয়েছে। ওয়ার্ল্ড টপ এক্সপোর্ট ডট কমের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ৫১ বিলিয়ন ডলারের টি–শার্ট রপ্তানি হয়। সবচেয়ে বেশি টি–শার্ট রপ্তানি করে চীন, যা মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ। তারপরই বাংলাদেশের অবস্থান, যা মোট রপ্তানির ১৫ শতাংশ। তবে ওই বছর কটন টি–শার্ট রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশ হচ্ছে টি–শার্ট। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৭৭৩ কোটি ডলারের টি–শার্ট রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি তার আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরের তুলনায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার কম। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৯৮৬ কোটি ডলারের টি–শার্ট।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সোয়েটার রপ্তানি হয়। পরের দুই বছরই পণ্যটির রপ্তানি কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে ৪৮২ কোটি ডলারের সোয়েটার রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ১২ কোটি ডলার বেশি।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, শার্ট ও ব্লাউজের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ডলারের শার্ট ও ব্লাউজ রপ্তানি হয়। তার আগের অর্থবছর রপ্তানি হয়েছিল ৩১৮ কোটি ডলারের শার্ট ও ব্লাউজ।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত সামগ্রিকভাবে রপ্তানি কমলে যেসব তৈরি পোশাক বেশি রপ্তানি হয়, সেগুলোর রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টি–শার্ট, ট্রাউজার ও সোয়েটারের মতো তৈরি পোশাক খুবই মূল্য সংবেদনশীল। অর্থাৎ তীব্র প্রতিযোগিতা করে এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ পেতে হয়। শ্রমিকের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং নগদ সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে অনেক রপ্তানিকারক পণ্যগুলোর ক্রয়াদেশ নিতে পারছে না।
ফজলুল হক আরও বলেন, ‘আমরা রপ্তানিমুখী শীর্ষস্থানীয় পোশাকের বিক্রয়াদেশ হারাচ্ছি কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, এসব পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে অনেক কারখানা ও লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। তৈরি পোশাক রপ্তানির এই মূল ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ, গ্যাস–বিদ্যুৎসহ যেকোনো মূল্যবৃদ্ধিতে রপ্তানিকারকদের সময় দিতে হবে। যাতে তাঁরা সেই বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের সুযোগ পান।’