অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ৮ শিক্ষক বরখাস্ত
Published: 31st, January 2025 GMT
চাঁদপুরের কচুয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে সামিয়া রহমান (৫) নামের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় একই স্কুলের ৮ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন- উপজেলার তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা আক্তার, ফারুক হোসেন, জসিম উদ্দিন, রোকেয়া আক্তার, সুমি আক্তার, কাজী শাকিরীন, ফয়েজুন নেছা ও ফাতেমা আক্তার। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুক হাসানকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি দুপুরে ছুটির পর তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খেলছিল ওই বিদ্যালয়েরই প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া। এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাখা ময়লার স্তূপে আগুন দেন স্কুলটির কর্মচারী সুমন মজুমদার। এটি দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে খেলার ছলে একটি প্লাস্টিকের বলপেনে আগুন ধরায় আরেক শিক্ষার্থী। দুষ্টুমির এক পর্যায়ে এ আগুন সামিয়ার পরনের কাপড়ে লাগিয়ে দেয় ওই শিশু। এতে দগ্ধ হয় সামিয়া। তার শরীরের অন্তত ৭০ শতাংশ আগুনে ঝলসে যায়।
সামিয়ার চাচা মাহমুদুল হাসান বলেন, সামিয়ার শরীরে আগুন লাগার পরপর তার গায়ে পানি দেননি বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি শিক্ষকরা। তারা কাপড় কাটার জন্য কাঁচি আনতে গিয়েছিলেন। এতে সে আরও বেশি দগ্ধ হয়। সামিয়াকে ওই অবস্থায় তার বড় বোন লামিয়ার মাধ্যমে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তারা। পরে সামিয়াকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানী ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সামিয়ার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, এডিপিও মোসাদ্দেক হোসেনকে প্রধান করে এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি বুধবার রিপোর্ট জমা দেন। তাদের তদন্ত রিপোর্টে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরম গাফিলতি ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আট শিক্ষককে দায়িত্বে অবহেলার জন্য বৃহস্পতিবারই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সুমন মজুমদার নামের এক কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, স্কুলটিতে মোট ১০ জন শিক্ষক কর্মরত। ঘটনার দিন একজন ছুটিতে ছিলেন। এখন এই বরখাস্ত শিক্ষকদের শূন্যতা পূরণে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ জনকে ডেপুটেশনে ওই স্কুলে পাঠানো হচ্ছে, যারা রোববার থেকে ক্লাসে যাবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক বরখ স ত র জন য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।
এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।