গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলিজস্টস (জিএনওবিবি) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার উদ্যোগে বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম বায়োটেক স্কুলিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) কুষ্টিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলে এ অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যামিবাসহ বিভিন্ন অনুজীবের মডেল উপস্থাপন, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন অণুজীব দেখানোর ব্যবস্থা, টিস্যু কালচারসহ জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক  প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতনতা, জিন ক্লোনিং, টিস্যু কালচার, মাটিবিহীন চাষাবাদ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ আরো বিষয়ে পোস্টার প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।

প্রদর্শনী শেষে জীবপ্রযুক্তি বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কুইজে প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী প্রথম তিনজনকে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। এছাড়া কুইজে সন্তোষজনক ফলাফলকারী প্রথম ৪০ জনকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষায়িত গবেষণাগারসমূহ ঘুরে দেখার জন্য মনোনীত করা হয়।

অনুষ্ঠানে সংগঠনটির ইবি শাখার সভাপতি আবু রেজার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন   বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.

রেজুয়ানুল ইসলাম।

প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড.  আবু হেনা মোস্তফা জামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিন্নাতুল করিম।

প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামাল বায়োটেকনোলজি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্লাইড প্রদর্শন করেন।

প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা জীবনে যেটাই করো না কেন, বিজ্ঞান অবশ্যই জানতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”

ঢাকা/তানিম/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগের ‘ভয়ংকররূপে’ ফেরার বার্তা কী বার্তা দেয়?

জু  লাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আওয়ামী দুর্গ। গা-ঢাকা দেন দলটির নেতারা। আত্মগোপনে চলে যান অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীও। অফলাইন-অনলাইন কোনো জায়গায় যেন তারা নেই। সম্প্রতি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে দলটির নেতাকর্মীর মধ্যে। যদিও এটিকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার চেষ্টা বলে, নাকি অন্য কিছু– তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

যেমন, আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় বেসামরিক ফ্রন্ট থেকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা এ সংগঠন ছিল কার্যত শেখ হাসিনার ‘লাঠিয়াল বাহিনী’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে অকার্যকর, সেখানে নামিয়ে দেওয়া হতো ছাত্রলীগকে। ফলে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তালিকা দীর্ঘ হলেও দলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছিল ছাত্র সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নৈকট্য ছাত্রলীগকে করে তুলেছিল আরও বেপরোয়া। 

পেশায় ছাত্র হলেও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা করতেন বিলাসবহুল জীবনযাপন। হল ছেড়ে থাকতেন অভিজাত পাড়ায়; চলতেন দামি গাড়িতে। তবে আওয়ামী লীগের পতনের পর ছাত্রলীগ নেতাদের আলিশান জীবন ও ক্ষমতার দাপট রাতারাতি শূন্যে মিলিয়ে যায়। জনরোষ ও গ্রেপ্তার এড়াতে বেছে নিতে হয় আত্মগোপনের পথ।
অনভ্যস্ত এই জীবন নিয়ে সংক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ আড়াল থেকেই দেওয়া শুরু করেছে হুমকি-ধমকি। সংগঠনটির ভাষ্য, তারা ফিরতে চায় ‘আরও ভয়ংকররূপে’। আর ফেরার প্রথম ধাপ হিসেবে বেছে নিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। বিভিন্ন কলেজ, সরকারি দপ্তর, হাসপাতাল এমনকি ফার্মেসির ডিজিটাল স্ক্রিনে তারা ভয়ংকররূপে ফেরার বার্তা প্রচার করে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। জুলাইয়ের গ্রাফিতি মুছে সেখানেও লেখা হচ্ছে এই বার্তা। শুধু তাই নয়; সমন্বয়কদের উদ্দেশে পাঠাচ্ছে হত্যার হুমকি।
জুলাই অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষের রক্ত ও অঙ্গহানির জন্য দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে অনুশোচনা তো নেই-ই। তার ওপর ভয়ংকররূপে ফেরার বার্তা। প্রশ্ন হচ্ছে, সংগঠনটির এমন ঔদ্ধত্য কি আমলে নেওয়ার দরকার আছে? এর উত্তর– হ্যাঁ, আছে।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন হয়েছে; ছাত্রদের নেতৃত্বের কাছে পরাজিত– এই দুঃখ নিশ্চয় তিনি বা আওয়ামী লীগ ভুলে যায়নি। আর অতীতের মতো বিরোধী পক্ষ ‘মোকাবিলা’ করতে ছাত্রলীগই ভরসা। ফলে সংগঠনটির হম্বিতম্বিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। স্বীকার্য, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু নব্বই দশকের পর তারা আওয়ামী লীগের ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ হয়ে ওঠে। বিশেষত দল ক্ষমতায় থাকাকালে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সহিংসতার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের হামলায় কমপক্ষে ১৬২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। এ সময়ের মধ্যে শুধু নিজেদের অন্তর্কোন্দলে ৫৫ জন কর্মী নিহত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনকালে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা আগেই বলেছি।

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হল দখল, ক্যাম্পাসে আধিপত্য, সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, ফাউ খাওয়া, চাঁদাবাজির অভিযোগও নিত্যদিনের ঘটনা। বুয়েটে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা, দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, হলের সিট নিয়ে দ্বন্দ্বে ঢাবি শিক্ষার্থী আবু বকরকে হত্যা, ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা, নিজেদের দু’পক্ষের কোন্দেলে জাবি ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়েরকে হত্যা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদ ইবনে মমতাজকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা; সব শেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডেও ছাত্রলীগের ছয়জনের নাম উঠে এসেছে।
ভুলে যাওয়া কঠিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদ্দিন মানিক ‘ধর্ষণের সেঞ্চুরি’ পালন করেছিল। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরী নির্যাতন, ২০১৫ সালে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানি, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের অভিযোগ মিডিয়ায় এসেছে। আরও অনেক খবর হয়তো মিডিয়ায় আসেনি।
এ ছাড়া গেস্টরুম নির্যাতন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা এবং বিভিন্ন সময় সাংবাদিক নির্যাতনে ছাত্রলীগের নাম জড়িত। অপকর্মের এই ইতিহাস যে সংগঠনের রয়েছে, তার ভয়ংকররূপে ফেরার হুমকি আমাদের শঙ্কিত করে বৈ কি।

ক’মাস আগেও আমাদের শুনতে হতো, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সংগঠন ছাত্রলীগ। কিন্তু বাস্তবে জোরপূর্বক মিছিলে নিয়ে গিয়ে সংগঠনের কলেবর বাড়ানো হতো। তারা বলত, শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির মশালবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ। বাস্তবে ছিল অর্থ, অস্ত্র আর মাদকের ছড়াছড়ি। 
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। এত বড় সংগঠন কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর কার্যত কোনো প্রতিবাদ মিছিলও করতে পারেনি তারা। ফলে চোরাগোপ্তা পথ বেছে নিতে পারে আদর্শচ্যুত সংগঠনটি। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা।

অনি আতিকুর রহমান: সহসম্পাদক, সমকাল
atikbanglaiu@gmail.com
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহীতে ছাত্রশিবিরের গণমিছিল
  • ছাত্রলীগের ‘ভয়ংকররূপে’ ফেরার বার্তা কী বার্তা দেয়?
  • চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল
  • আদালতে বিক্ষোভ হুমকি স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য