হাসপাতালের সামনে সাইনবোর্ড টানাতে বাধা দেওয়ায় ঢাকার মগবাজারের বেসরকারি ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১ জন কর্মচারী গুরুতর আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এই ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এম এম আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল। এর আগে বুধবার রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বুধবার রাত ১০টায় মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত বৈদ্যুাতিক খুঁটিতে সাইনবোর্ড টানাতে আসে “এবিএস রেন্ট-এ-কারের” লোকজন। টানাতে নিষেধ করলে রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের এজিএম মো.

হাফিজুর রহমানকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায়। এছাড়াও হাসপাতালের স্টাফদের লোহার রড, কাঠ ও বেতের লাঠি, স্টিক নিয়ে আক্রমণ করে। আক্রমণকারীরা দলবদ্ধ হয়ে হাসপাতালের এজিএমকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতালের ডিউটিরত স্টাফরা বাধা দেয়।

রেন্ট-এ-কারের মালিক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে প্রিন্স, সাইদ, ওয়াহিদ, সুমন, লিমন, শুভ এবং রেন্ট-এ-কারের স্টাফরা এই হামলা চালায়। তারা হাসপাতাল ভাঙচুরসহ স্টাফদের ওপর আক্রমণ করে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আক্রমণকারীদের হাতে থাকা বেতের লাঠি, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রের এলোপাথাড়ি আক্রমণে হাসপাতালে কয়েকজন স্টাফ গুরুতর জখম হয়। এদের মধ্যে ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. হানিফ, কেয়ারটেকার মো. কবির হোসেন, পরিচ্ছন্নকর্মী মো. সোহেল, এটেন্ডেন্ট মো. রেজওয়ান, মো. হাসান সরদার, ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. নাঈম ইসলাম, সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. ফকরুল ইসলাম, রিসিপশন ইনচার্জ মো. আজিজুল ইসলাম, মো. রিয়াজ সরদার, মো. রেজা, মো.রুবেল হোসেনসহ আরো কয়েক জন আহত হয়।

হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকারীরা হাসপাতালের স্টাফদের মানিব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও হাসপাতালের মালামাল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আনুমানিক আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি করে।

এ প্রসঙ্গে হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার এস আই আলামিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন।”

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইনস ফ ব র ক হ

এছাড়াও পড়ুন:

দেখে এলাম প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত বান্দরবান জেলা। এই জেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়েছে পাহাড়, ঝরনা, নদী। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বান্দারবানে পৌঁছালে প্রকৃতি আর সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ভ্রমণকারীর মনে অবারিত শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। সম্প্রতি সহকর্মীদের সঙ্গে উপভোগ করে এলাম নীলাচলের নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত এবং নীলগিরি কুয়াশায় মোড়া ভোরে ভাসমান মেঘের খেলা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।

শুরুতেই আমরা গিয়েছিলাম নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবান শহরের কাছেই অবস্থিত এই পাহাড়ি স্থানটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় পৃথিবী হাতের মুঠোয়। সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। আকাশে রঙের খেলা, কমলা আর লাল রঙের অপূর্ব মিশ্রণ। এ সময় বাতাসে এক ধরনের প্রশান্তি। দূর পাহাড়ের সারি আর নীলাচলের চারপাশে মেঘের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করে। ‘ইকোসেন্স’ নামক একটি স্পটে বসে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই স্বর্গীয়। প্রকৃতির এই অনবদ্য দৃশ্য জানিয়ে দেয় জীবন কতটা সুন্দর ও উপভোগ্য। 

এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল নীলগিরি, যা বান্দরবানের সবচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্দ্র। পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আমাদের ভ্রমণকে আরও দারুণ করে তোলে। নীলগিরির চূড়ায় পৌঁছে মেঘের ভেলায় ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলো। মনে হলো যেন আকাশের কাছে চলে এসেছি। হিমেল হাওয়া আর মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

নীলগিরি থেকে চিম্বুক যাওয়ার পথটা অসাধারণ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে পাইন গাছের সারি। যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে। চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের ঢেউ সমুদ্রের মতো দুলছে। ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসা প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ আর সূর্যের আলোয় ঝলমলে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্য এক অন্যরকম শান্তি দেয়। এখানকার স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরল জীবনযাত্রা আরও মুগ্ধ করে।চিম্বুকের সৌন্দর্য শুধু চোখ নয়, মনও ছুঁয়ে যায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করাই চিম্বুক ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ।

সবশেষে আমরা যাই সাঙ্গু নদীর তীরে। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ ছিল পুরো সফরের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ। পাহাড়ি নদীর শীতল স্রোতে ভেসে চলার সময় মনে হলো প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। নদীর দুই পাশে সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি গ্রামের চিত্র আর নদীর বয়ে চলার মৃদু শব্দ আর নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর কর্মব্যস্ততা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আমরা ছোট্ট নৌকায় নদীতে ভেসে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করি। সাঙ্গুর মায়াবী সৌন্দর্য যেন মনকে গভীর প্রশান্তি এনে দেয়।

এই ভ্রমণ শুধু পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এটি ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা আর বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি করারও সুযোগ। বান্দরবানের এই সৌন্দর্যময় ভ্রমণ আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে যে প্রশান্তি, তা আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেখে এলাম প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য