গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে শুরায়ে নেজামের (যোবায়ের অনুসারি) দুই ধাপের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার জুমার নামাজ। দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। খুতবা শুরু হয় ১টা ৪৩ মিনিটে। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের।

আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজে মূল ইজতেমা মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা মাঠসংলগ্ন সড়ক, মহাসড়ক ও ফাঁকা জায়গায় নামাজ আদায় করেন।

ফজর নামাজের পর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা নুরুর রহমান। পৌনে ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হয়। তালিমের আগে মোজাকেরা (আলোচনা) করেন ভারতের মাওলানা জামাল সাহেব। এ ছাড়াও বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান হবে। যেমন, সকাল ১০টায় শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম সাহেব। ছাত্রদের সঙ্গে নামাজের মিম্বারে বয়ান করেন প্রফেসর আব্দুল মান্নান সাহেব, খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ সাহেব।

এ পর্যন্ত ৭২টি দেশের প্রায় ২ হাজার ১৫০ জন বিদেশি

মুসল্লি ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শুরায়ী নেজাম, তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান। তিনি জানান, ইজতেমার আরও ৫ দিন বাকি আছে। এ সময়ে আরও বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ও তুরাগ নদের তীরে হাজারো মুসল্লির আনাগোনা। এর মধ্যে ইজতেমার মূল মাঠে বাঁশ ও চটের তৈরি শামিয়ানার নিচে অবস্থান করছেন হাজার হাজার মুসল্লি। তাদের কেউ বয়ান শুনছেন। কেউবা ব্যস্ত রান্না, অজু ও গোসলে। এর মধ্যেই দলে দলে মাঠে প্রবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা। তাদের কারও মাথায়, কাঁধে ব্যাগ। আবার কারও হাতে একাধিক ব্যাগ, পোঁটলা।

বিগত বছরগুলোতে তাবলীগের দু’পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা দুই পর্বে আলাদাভাবে ইজতেমা করতেন। তবে এবারই প্রথম মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা একাই দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। এর মধ্যে আজ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। 
এ ধাপে অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লি। এরপর ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। আর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা পালনের কথা রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইজত ম র ইজত ম

এছাড়াও পড়ুন:

সরস্বতি পূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জমজমাট প্রতিমার হাট

আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্নস্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এখন চলছে প্রতিমার বেচাকেনা। এবার প্রতিমার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া থাকলেও কারিগররা বলছেন, জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমার দামও কিছুটা বাড়তি।

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আশীর্বাদ লাভের আশায় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। শুধু বাড়িতেই নয় বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেবীর পায়ে অঞ্জলী দিয়ে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হবে।

এ পূজার প্রধান অনুসঙ্গ হলো প্রতিমা। ফলে জেলা শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ী, সদর উপজেলার সাতপাড়, বৌলতলী, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, ঘাঘর বাজারসহ অনেক স্থানে বসেছে প্রতিমার হাট। এসব হাটে আনা এক একটি প্রতিমা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। 

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

পুটিয়ার কৃষ্ণপুরে চলছে কাত্যায়নী পূজা

এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিমার দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, দাম সাধ্যের মধ্যে আবার কেউবা বলছেন দাম আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন বয়সের মানুষ এসব হাট থেকে কিনে নিচ্ছেন পছন্দমতো প্রতিমা। হাটে শুধু প্রতিমাই নয় বিক্রি হচ্ছে ফুল, মালা, মিষ্টিসহ পূজার অন্যান্য উপকরণও। 

রীতি অনুযায়ী বিদ্যার দেবী সরস্বতি পূজার পাশাপশি বসন্ত পঞ্চমীতে গণেশ, লক্ষ্মী, নবগ্রহ, বই, খাতা, কলম ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শীত ঋতুর অবসান হয়ে বসন্ত ঋতুর আগমন বার্তা ঘটবে।

প্রতিমা কিনতে আসা উত্তম সাহা বলেন, “শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীতে সরস্বতী প্রতিমার হাট বসেছে। এবার বাড়িতে পূজা করাব। ছেলেকে নিয়ে হাটে প্রতিমা কিনতে এসেছি। ঘুরে ফিরে পছন্দমত প্রতিমা কিনেছি। আমি মনে করি, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

অপর ক্রেতা নারু গোপাল বলেন, “প্রতিবছর এখানে প্রতিমার হাট বসে। এবে এবার প্রতিমার আমদানি একটু কম। তারপরেও দেখে বুঝে দরদাম করে একটি প্রতিমা কিনেছি। এবার আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা হবে।”

অপর ক্রেতা পরিমল চন্দ্র ঢালী বলেন, “এক একটি প্রতিমা ২০০ তেকে ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটে এসে প্রতিমা দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার দাম একটু বেশি।”

গোপালগঞ্জ শহরের গোহাট সার্বজনীন কালীবাড়ীর হাটে প্রতিমা বিক্রি করতে আসা উত্তম পাল বলেন, “এবার ২০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে ১০টি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। আশা করি, বাকি দুই দিনও বেচাকেনা হবে।”

কার্ত্তিক পাল বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রাম থেকে ৩০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। চার থেকে পাঁচটি প্রতিমা বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতিমা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রতিমা তৈরির অনুসঙ্গের যে দাম তাতে খরচও উঠছে না।”

স্বপন পাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ছোন, রংসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তারপরেও বাব-দাদার পেশা আমরা ধরে রেখেছি।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ