দেশের উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। কনকনে ঠান্ডায় কষ্টে রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছে। আজ শুক্রবার সকালে ও বিকেলের পর লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার মাঠ-ঘাট।

আজ সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘণ্টায় বাতাসের গতি ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। 

সকাল ১১টা পার হলেও জেলার চরাঞ্চলগুলোতে এখনো দেখা মেলেনি সূর্যের। জেলা শহরের কোথাও কোথাও সূর্য উঠলেও ঘন কুয়াশার কারণে তা ঢাকা পড়েছে। সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। 

সদরের সুজামের মোড়ের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই দুইদিন ভালোই রোদ ছিলো, ঠান্ডাটা কম মনে হইছিলো। আজ সকাল থাকি আবার বেশি ঠান্ডা মনে হচ্ছে।’

শুলকুর বাজারের কৃষক হযরত আলী বলেন, ‘সাত সকালে জমি বাড়িত আসছি কাজ করবের। জারতে হাত-পাও শিষ্টা নাগছে। কুয়াশার তেজত আজ কাম করা মুশকিল হয়া গেইছে।’

জেলায় শীত নিবারণের জন্য সরকারিভাবে দুঃস্থদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে; তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এখনো জেলার চরের বসবাসরত মানুষরা পাননি সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কম্বল। 

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ইয়ুথনেটের বাসিন্দা তারা চাঁদ বলেন, ‘হামরা নদী পাড়ের মানুষ। হামার চরত কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান আসে নাই কম্বল দিবার।’

পাশের খেয়ার আলগা চরের হাসিনা বানু বলেন, ‘বাবা ঠান্ডাতে কাম-কাজ করা খুব মুশকিল হয়া গেইছে। চেয়ারম্যান-মেম্বর কাইয়্যো হামার চরত আসে নাই কম্বল ধরি।’

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘সরকারিভাবে যে বরাদ্দ পাইছি, তা খুবই অল্প। আমার এলাকার কয়েকটি চরে এখনো কম্বল বিতরণ করতে পারি নাই।’

জেলার ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো.

আব্দুল মতিন জানান, জেলার ৯ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’

কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কুড়িগ্রামের আকাশ দিয়ে হিমেল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২-৩ দিন এ রকম থাকবে। সূর্য উঠলেও সহজেই সূর্যের তাপ মিলবে না।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনওর সামনে ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা

পাবনার সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সামনে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরসহ চার নেতাকে  মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামানের কার্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামান বলেন, “বিষয়টি দুঃখজনক। যেহেতু, আমার কক্ষে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দানের ঘটনা ঘটেছে, কাজেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরো পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪

শরীয়তপুরে ডাকাতির ঘটনায় আরো এক জনকে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ

মারধরের শিকার জামায়াত নেতারা হলেন- উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফারুক-ই আজম, সেক্রেটারি টুটুল বিশ্বাস, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস ও সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জামায়াতের চার নেতা ইউএনও অফিসে যান কোনো একটি কাজে। ইউএনও অন্য একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় জামায়াত নেতারা অফিসে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমানের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন নেতাকর্মী বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে কেন জানতে ইউএনও’র কাছে যান। সেখানে আগে থেকেই বসে থাকা জামায়াত নেতাদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বলেন- এরা কেন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে, এ কথা বলেই, বিএনপি নেতারা ইউএনওর কক্ষ থেকে বের হয়েই আরো কয়েকজনকে ডেকে আনেন।

এরপরই বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, বাবু খা, মানিক খা, আব্দুল বাছেদ, আরিফ শেখসহ ৩০-৪০ জন ইউএনওর কক্ষে ঢুকে  জামায়াত নেতাদের কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে জামায়াত নেতাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

এদিকে, জামায়াত নেতাদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর জামায়াতের উপজেলা আমির কেএম হেসাব উদ্দিন কয়েক’শ নেতাকর্মী নিয়ে ইউএনও অফিসে যান এবং ঘটনার প্রতিবাদ জানান। 

বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দেন-দরবার চলে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম বিশ্বাস বলেন, “যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত এসব সন্ত্রাসী আমাদের দলের হতে পারে না। আমরা বলেছি- যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আলোচনা করা হবে।”
 
সুজানগর উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক কেএম হেসাব উদ্দিন বলেন, “সুজানগরে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় বিএনপির এসব ক্যাডাররা ইউএনওকে মারধর ও তুলে আনার জন্য গেছিল। এসময় জামায়াত নেতারা বাধা দিলে আমাদের চারজনকে তারা মারধর করেছে। ইউএনওকেও কয়েকদফা মারধর করতে গেলে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মারতে না পেরে অশ্লীল ভাষায় বকাবকি করেছে ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “৫ আগস্টের পর এসব নেতারা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির গডফাদার হয়েছে। চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলন, মাদক কারবারি, চুরি- ডাকাতি, অপহরণ-ছিনতাই থেকে শুরু করে সব অপকর্ম করে বেড়ালেও এদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে  না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

এ বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত মজিবুর রহমান ও মানিক খার মোবাইলে কল করা হয়। তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

সুজানগর থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। আহতরা মামলা করেত আসেননি। তারা এলেই মামলা নেওয়া হবে। যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ