দেশে বেশি দারিদ্র্য মাদারীপুরে, কম নোয়াখালীতে
Published: 31st, January 2025 GMT
দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার মাদারীপুর জেলায়। দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে, নোয়াখালী জেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এ হার ১ শতাংশ। তুলনামূলক এ অনুপাত বলে দেয় বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের জেলা হিসেবে মাদারীপুরের নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, ২০১৬ সালে প্রকাশিত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী মাদারীপুর ছিল সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের জেলার মধ্যে তৃতীয়। ওই প্রতিবেদনে জেলাটিতে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে এ রকম উল্টো চিত্র মুদ্রণজনিত ত্রুটি কিনা– জানতে চাইলে বিবিএসের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিত্র সঠিক। তবে গত প্রতিবেদনে কিছু ত্রুটি থেকে থাকতে পারে। এ দুর্বল ভিত্তির কারণে তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন
করেন বিবিএসের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর গুলশানের চেয়ে ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার কম। ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গুলশানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আবার রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্যের বাস মিরপুরে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এলাকার মধ্যে আদাবরে ৯ দশমিক ৮, বাড্ডায় ৭, বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে। ঢাকা জেলার সামগ্রিক দরিদ্রের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর জাতীয় দরিদ্রের হার ১৯.
প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের আঞ্চলিক ম্যাপিংয়ে দেখা যায়, বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস বরিশালে, ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম নোয়াখালীতে, ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাদারীপুরে সবচেয়ে বেশি, ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। উপজেলা হিসেবে ডাসারে (মাদারীপুর) সবচেয়ে বেশি, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।
গত ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র্যের মানচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের সহযোগিতা নেওয়া হয় এতে। প্রতিবেদন তৈরিতে প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ডব্লিউএফপি।
প্রতিবেদনে নতুন করে জাতীয় দারিদ্র্যের তথ্য দেওয়া হয়নি। বিবিএসের ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে– এমন ভোগ্যপণ্যের একটি তালিকার ভিত্তিতে বিবিএস জরিপ করে। মৌলিক চাহিদা পূরণ করার মতো আয় যারা করতে পারে না, তারা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকায় ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমন লসন পার্সমেন্ট বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এই মানচিত্র প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ভিত্তিতে সরকার বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির এলাকা এবং বরাদ্দ নির্ধারণ করবে। উন্নয়ন সহযোগীরাও প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে এ দেশে কার্যক্রমে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে।’ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবও প্রায় একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৈষম্যহীন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব এস র ৬ দশম ক সবচ য় সবচ য
এছাড়াও পড়ুন:
এবার রাগবি বিশ্বকাপও চায় সৌদি আরব
২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবেই আয়োজন করেছে কাতার। ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের স্বাগতিক সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বিশ্ব ট্রায়াথলন চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বৈশ্বিক ক্রীড়া আসর আয়োজনের অভিজ্ঞতা আছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই তিন দেশ মিলে এবার রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এ জন্য তারা ২০৩৫ অথবা ২০৩৯ বিশ্বকাপের জন্য বিড করবে। এশিয়া মহাদেশের রাগবি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এশিয়া রাগবিও সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাতকে আয়োজন স্বত্ব পাইয়ে দিতে জোরালো সমর্থন জানাবে।
উপসাগরীয় দেশ তিনটির দাবি, তাদের সুযোগ দেওয়া হলে ‘রাগবি ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ইভেন্ট’ আয়োজন করে দেখাবে।
এশিয়া মহাদেশে এখন পর্যন্ত একবারই রাগবি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯ সালে নবম আসর হয়েছিল জাপানে। ২০২৭ সালে একাদশ আসর বসবে অস্ট্রেলিয়ায়, ২০৩১ দ্বাদশ আসরের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র।
২০৩৫ বিশ্বকাপের বিডিং প্রক্রিয়া আগামী দুই বছরের মধ্যে শুরু হবে। সেই আসরের আয়োজক হতে এরই মধ্যে তদবির শুরু করে দিয়েছে ইতালি ও স্পেন। শেষ পর্যন্ত এই দুই দেশের কেউ ২০৩৫ বিশ্বকাপের আয়োজন স্বত্ব পেয়ে গেলে ২০৩৯ বিশ্বকাপের জন্য বিড করবে সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাত।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তিনটির কারোরই ‘রাগবি খেলুড়ে জাতি’ হিসেবে পরিচিতি নেই। এমনকি তারা কখনো বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি। ফুটবল বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে স্বাগতিক দেশ সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেলেও রাগবি বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে তা নয়। এখানে আয়োজন স্বত্ব পাওয়া দেশকেও বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে হয়। এখন পর্যন্ত যে দশবার রাগবি বিশ্বকাপ হয়েছে, প্রতিবারই স্বাগতিক দেশ বাছাই পর্বের বাধা টপকেছে।
কিন্তু সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাত আদৌ বাছাই পেরিয়ে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই বিশ্ব রাগবির নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও ফিফার পথ অনুসরণ করতে হতে পারে। অর্থাৎ, নিয়ম বদলে তিন স্বাগতিক দেশকে সরাসরি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ দেওয়া।
এশিয়া রাগবিও এ ধরনের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করছে। সংস্থাটি মনে করে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অথবা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া চাইলেই ২০৩৯ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হতে বিড করতে পারে। কিন্তু তাদের পছন্দের জায়গা মধ্যপ্রাচ্য।
রাগবি বিশ্বকাপ সাধারণত সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে হয়ে থাকে। কিন্তু মাধ্যপ্রাচ্যে সেই সময়ের আবহাওয়া তীব্র গরম হওয়ায় সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাতে ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ হতে পারে। এমনকি ফাইনাল চলে যেতে পারে পরের বছর জানুয়ারিতে। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপও বছরের শেষ ভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের বিডে সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এশিয়া রাগবির সভাপতি কাইস আল দালাই। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতাদের বিশ্বাস, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি, ২০৩৫ সালেই এটা ঘটতে পারে (মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ যৌথ আয়োজক হতে পারে)।’
ফুটবল বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে আল দালাই আরও বলেছেন, ‘আমি একাধিক দেশে (রাগবি বিশ্বকাপ) আয়োজন মডেলের পক্ষে। ফিফা ২০০২ বিশ্বকাপ জাপান ও কোরিয়া আয়োজন করে দেখিয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হতে যাচ্ছে, এরপর ২০৩০ বিশ্বকাপ হবে তিন মহাদেশে। তাহলে রাগবি কেন নয়?’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কেন রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তা সবার জানা। মানবাধিকার ইস্যুতে বহির্বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ভালো নয়। বিশেষ করে সৌদি আরব সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করে আসছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা, যা দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
ভাবমূর্তি ফেরাতেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রীড়াঙ্গনে অঢেল অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘স্পোর্টস ওয়াশিং’। ফুটবল, গলফ, বক্সিং, টেনিস, রেসিংসহ আরও অনেক খেলায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
সর্বশেষ আইপিএলের মেগা নিলামও সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইপিএলকে টক্কর দিতে ৬ হাজার কোটি টাকার টি–টোয়েন্টি লিগ আনারও পরিকল্পনা করছে। শোনা যাচ্ছে, দেশটি ২০৩৬ অলিম্পিকের আয়োজক হতেও বিড করবে।