নেপালে সাফ চলাকালে পিটার বাটলারের সঙ্গে মেয়েদের দ্বন্দ্বটা ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তিরও পরিকল্পনা সেই সময় নিয়েছিল ফেডারেশন। হিমালয়ের বুকে দ্বিতীয়বারের মতো সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমারা লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোয় কর্তাদের কঠোর মনোভাব শীতল হয়ে যায়। শাস্তির চিন্তা থেকে সরে গিয়ে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা আগামীর পরিকল্পনার জন্য ইংলিশ কোচ বাটলারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করে। কিন্তু মঙ্গলবার বাটলারের ডাকে মেয়েরা সাড়া না দেওয়ায় বাংলাদেশের নারী ফুটবলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দাবি-দাওয়া না মানলে গণহারে অবসরের হুমকি দিয়ে রেখেছেন সিনিয়র ফুটবলাররা। তাদের সেই হুমকি কানে তুলছে না ফেডারেশন। কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, কোচ হিসেবে বাটলারই থাকবেন; এটা নিয়ে দ্বিতীয় কোনো ভাবনা নেই বাফুফে উইমেন্স কমিটির। মেয়েদের কানে এই বিষয়টি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদি নারী ফুটবলাররা না মানেন, তাহলে প্ল্যান ‘বি’তে চলে যাবে বাফুফে। সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলারকে ক্যাম্প থেকে বাদ দেওয়াও হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। কারণ, বাটলার নিজেই ফেডারেশন কর্তাদের বলেছেন, অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলাররা বেশ প্রতিভাবান। আর বাফুফের পাইপলাইন বেশ শক্তিশালী। সেই বিষয়গুলো নিয়ে ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তারা। তাই অন্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আপত্তি না থাকলেও বাটলার ইস্যুতে ছাড় নয়। বরং অনুশীলনে ফেরানোর জন্য সাবিনা খাতুন-মাসুরা পারভীনদের চাপে রাখার পরিকল্পনা বাফুফের।
বাটলারের অধীনে অনুশীলন বয়কটের ধারাটা বৃহস্পতিবারও রেখেছেন সিনিয়র নারী ফুটবলাররা। গতকাল সকালে জিম সেশনে মাত্র ১২ ফুটবলার ছিলেন; যাদের সবাই নতুন। এটা জানার পর নারী ফুটবল নিয়ে কর্তারা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি ক্ষুব্ধও। কারণ, ২৪ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য এই মুহূর্তে শক্তিশালী দল সাজানো প্রয়োজন। তাই ফেডারেশন চাচ্ছে, যতটা নমনীয় হয়ে সমস্যার সমাধান করতে। সভাপতি তাবিথ আউয়াল দেশে এলে মেয়েদের বেতন ইস্যুসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে থেকেও নারী ফুটবলে বিদ্রোহের সমাধানের চেষ্টা করছেন তিনি। মেয়েদের বিদ্রোহের পেছনে কারও ইন্ধন আছে বলে মনে করেন বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। গতকাল সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, কেউ ইন্ধন দিচ্ছে। আমি যতদূর জানি, পৃথিবীতে এটা (কোচের অধীনে না খেলা) কখনোই হয় না। একটা দলে কোচের কথাই শেষ কথা।’ সে ক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কী? ‘এটা নিয়ে মিডিয়াকে আমি আরও দু-তিন দিন পরে ব্রিফ করব। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি আপনাদের সামনে আসব।’ দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং হয়ে গেল কিনা? ‘জিনিসগুলো আমি জেনে নিই, বুঝে নিই; তার পর এ ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব’– বলেন কিরণ।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের রাডারে বেশ কয়েকজন ফুটবলার থাকায় এমনিতেই ক্যারিয়ারে বেলা শেষের গান শুনছেন বর্তমান জাতীয় দলের অনেকেই। শুধু পারফরম্যান্স নয়, বয়সের কারণে ফিটনেস লেভেলও সেই অর্থে অনেকের নেই বলে মনে করছেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে ৩১ বছর বয়সী অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে আগামীর পরিকল্পনায় বাটলার রাখতে চাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। কোচ হওয়ার পর গত বছরের জুনে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে শুরুর একাদশে এ ফরোয়ার্ডকে রাখেননি বাটলার। সেই সময় থেকে ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু সাবিনার। ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে মাঠে ফিরলেও ২৪ বছর বয়সী কৃষ্ণা রানী সরকারকে সর্বশেষ সাফে বেঞ্চ গরম করতেই দেখা গেছে বেশি। ২৩ পার করা সানজিদা আক্তারের পারফরম্যান্সে মন ভরেনি বাটলারের। আর সংবাদমাধ্যমে সরাসরি কোচের বিরুদ্ধে কথা বলে এমনিতেই চাপে আছেন ২৩ বছর বয়সী ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, শিউলি আজিম, মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমাদের পারফরম্যান্স ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়গুলো ফেডারেশন কর্তাদের কানে পৌঁছে দিয়েছেন বাটলার। তাই বর্তমানে চলা সমস্যার সমাধান না হলে সিনিয়র এসব ফুটবলারের ক্যারিয়ার বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে!
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল ফ টবল র কর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ইংল্যান্ডে ফিরেই শেফিল্ডকে শীর্ষে তুললেন হামজা
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল হামজা চৌধুরীর। ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর তিনি ঢাকায় ফিরে এলেও বৃহস্পতিবার উড়াল দেন ইংল্যান্ডে। ফেরার পরই তার দল শেফিল্ড ইউনাইটেড ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ জয় পেয়েছে। কভেন্ট্রি সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিগের শীর্ষে উঠে গেছে শেফিল্ড।
শেফিল্ডের হয়ে গোল করেছেন গুস্তাভো হ্যামার, টেরিস ক্যাম্পবেল ও রিয়ান ব্রুস্টার। কভেন্ট্রির একমাত্র গোলটি এসেছে জ্যাক রুডোনির পা থেকে। যদিও গোল বা অ্যাসিস্ট না পেলেও ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন বাংলাদেশি তারকা হামজা চৌধুরী।
৮৯ মিনিট মাঠে থেকে শেফিল্ডের মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। ৪৮ বার বল স্পর্শ করা হামজা ফাইনাল থার্ডে তিনটি সফল পাস দিয়েছেন, তিনটি লং বলের মধ্যে দুটি ছিল নিখুঁত। দুটি ট্যাকলে শতভাগ সফল ছিলেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে তিনটি ডুয়েলের মধ্যে দুটিতেই জয়ী হয়েছেন। পুরো ম্যাচে কেউ তাকে ড্রিবল করে পেরোতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানান।
ফুটবলভিত্তিক পোর্টাল ফুটমব হামজার পারফরম্যান্সকে ৭.৫ রেটিং দিয়েছে। তবে পরিসংখ্যান ছাড়াও মাঠে তার প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই জয়ের ফলে ৩৯ ম্যাচে ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে উঠে গেছে শেফিল্ড ইউনাইটেড। এতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরার পথ আরও সুগম হলো তাদের জন্য। শেফিল্ডের পরবর্তী ম্যাচ আগামী ৫ এপ্রিল অক্সফোর্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে।