গৃহকর্মী ‘কল্পনা’ এখন স্বপ্ন বুনছে ডাক্তার হওয়ার
Published: 31st, January 2025 GMT
উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ভুপেন হাজারিকার গানের চয়নের সাথে যেন মিলে গেলো কল্পনার জীবনের গল্প। তার সেই বিখ্যাত গান ‘মানুষ মানুষের জন্য’ যেন বাস্তবে রূপ নিলো।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় গৃহকর্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছিল ‘কল্পনা’ নামে ১৩ বছরের এক গৃহকর্মী। গত বছরের ১৯ অক্টোবর এই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয় গৃহকর্ত্রী ২১ বছরের দিনাত জাহান আদরকে। কল্পনার জীবনকে নরকে পরিণত করে তুলেছিলেন এই গৃহকর্ত্রী। হেন কোনো নির্যাতন নেই, যা কল্পনার উপর প্রয়োগ হয়নি।
খেতেও দিতো না। কারণে-অকারণে করতো মারধর। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছ্যাঁকা দিতো। কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে হাতের নখ উঠিয়ে ফেলে। মারধর করে দাঁত পর্যন্ত নাড়িয়ে দেয়। চুল শুকানো মেশিন দিয়েও ছ্যাঁকা দিতো। সমস্ত শরীরে ক্ষত চিহ্নে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই গন্ধ দূর করতে পারফিউম ব্যবহার করা হতো। তবুও তাকে ওষুধ দিতো না। কল্পনার চেহারাই বিকৃত করে ফেলা হয়েছিল।
গৃহকর্মী কল্পনার জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়ে উঠল প্রতিবেশীর একটি ভিডিও ক্লিপ। নির্মম নির্যাতনের শিকার কল্পনার বাঁচার আকুতির সেই ভিডিও ক্লিপ প্রচারিত হয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট সবার। কল্পনার অবয়ব এমন হয়ে উঠেছিল যে, সেখান থেকে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ছিলো চ্যালেঞ্জিং।
সবার সহযোগিতা ও চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কল্পনা নামের সে মেয়েটি এখন প্রস্ফুটিত ফুলের মতো আলোকিত হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে আগের রূপে ফিরে এসেছে কল্পনা। তাকে দেখতে যে কারোরই মায়া লাগবে। তার সাথে যারা এমন আচরণ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায় সে। মেয়েটি এখন স্বপ্ন বুনছে ডাক্তার হওয়ার, মানুষের সেবা করার।
কল্পনাকে নির্যাতনের মামলায় ওই দিনই মামলা করেন কল্পনার মা আফিয়া বেগম। মামলাটি তদন্ত করছে ভাটারা থানা পুলিশ। এরমধ্যে আরেক অভিযুক্ত দিনাতের ভাই নাজমুস সাকিব আনানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর ওবায়দুল হক বলেন, “মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। কল্পনার চিকিৎসার কিছু ছাড়পত্র লাগবে। এগুলো পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো। দিনাত জাহান আদর ও তার ভাই নাজমুস সাকিব আনান ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।”
মুঠোফোনে কথা হয় সেই কল্পনার সাথে। কল্পনা বলল, “আগের চেয়ে ভালো আছি, হসপিটালে আছি। রবিবার, সোমবার ছুটি পাবো। বাড়িতে ফিরবো। আর কারো বাসায় কাজ করবো না। বাড়িতে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হবো। পড়াশোনা করতে চাই। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। আমাকে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের সাজা চাই।”
কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, “৩ মাস ১২ দিন ধরে হাসপাতালে। মেয়েটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে ফিরবো। ওকে সাথে করে বাড়িতে নিয়ে যাবো। আর কারো বাসায় কাজে দিবো না। স্কুলে ভর্তি করে দিবো। লেখাপড়া করবে। ও ডাক্তার হতে চায়। মানুষের সেবা করতে চায়। লেখাপড়া করতে পারলে, ডাক্তার হতে পারলে- মানুষের সেবা করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা গরীব মানুষ। এজন্য মেয়েটাকে অন্যের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম। কতজন কাজের মেয়ে স্কুলেও ভর্তি করে দেয়। জীবন পাল্টে দেয়। আর ওরা আমার মেয়েটার জীবন নষ্ট করছে।”
গৃহকর্ত্রীর বিষয় উল্লেখ করে বলেন, “সাজা চাই। সর্বোচ্চ সাজা চাই। জেল থেকে যেন বের হতে না পারে। বের হলে কল্পনার মত অন্য কারো জীবন নষ্ট করে দিবে। অমানুষ ওরা। ওদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায়।”
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ হকর ত র গ হকর ম র জ বন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ
চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আকস্মিক ঝটিকা মিছিল করার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। মিছিলে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম জিইসি মোড় এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী এই মিছিলটি জিইসি মোড় থেকে সিডিএ এভিনিউ’র দিয়ে সামান্য পথ এগিয়ে নেতাকর্মীরা নিজেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ২০-২৫ জনের এই মিছিলটিতে কয়েকজনকে ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়। এদিন বিকেলের দিকে ওই মিছিলের প্রায় দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে এই মিছিলটি হয়েছে বলে পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়। মিছিলটি অনেক সকালে হওয়ায় আশেপাশে কোনো পুলিশের টহল বা অবস্থান ছিলো না। মিছিলের আগে পুলিশের অবস্থান রেকি করেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার মো. রকিবুল হাসান বলেন, “জিইসি এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকমিনিটের একটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। ইতিমধ্যে কার নেতৃত্বে এবং কারা এই মিছিলে অংশ নিয়েছে তাদের অন্তত ১০-১২ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। অতি দ্রুত সময়ে তারা গ্রেপ্তার হবে বলে পুলিশ আশা করছে।”
এর আগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর মধ্যরাতে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে মিছিলে থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায়, দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৩০ থেকে ৫০ জন জামালখান এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে সরে পড়েন। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/রেজাউল/ইমন