হাজারমুখীরা আমাদের চারপাশেই থাকে: কাজী লাবণ্য
Published: 31st, January 2025 GMT
কথাশিল্পী কাজী লাবণ্যের বর্ণনায় মাটির কাছে থাকা মানুষের নিবিড় পরিচয় ফুটে ওঠে। তিনি অবহেলিত, প্রতারিত এবং নিগৃহীত মানুষের কথা লিখে চলেন প্রকৃতির চিত্রময় বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে। তার প্রকাশিত গল্প গ্রন্থের সংখ্যা ৬ টি, উপন্যাসের সংখ্যা ২টি। ২০২৫ বইমেলায় কাজী লাবণ্যের একটি গল্পগ্রন্থ এবং একটি উপন্যাস প্রকাশ হচ্ছে। প্রকাশিতব্য বই নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: হাজারমুখী রোদসীর প্রেক্ষাপট জানতে চাই।
কাজী লাবণ্য: এই নামে আমার একটি গল্প আছে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘আয়োলিতার পুরুষ’ গ্রন্থে। বাস্তবে দেখা এক নারীর আবছায়া নিয়ে লেখা ঐ গল্পের গর্ভে উপন্যাসের বীজ লুকায়িত ছিল। পরবর্তীতে এটি উপন্যাস আকারে আনার সিদ্ধান্ত নিই এবং তাতে উৎসাহ দেয় সুহৃদ বন্ধু কথাসাহিত্যিক সাদিয়া সুলতানা। গতবছরের একটা সময়ে দেশ থেকে দূর পরবাসের এক আনন্দধামে ছিলাম। লেখালেখি বান্ধব সেই পরিবেশে বসে দেখতে পেয়েছি হাজার হাজার মাইল দূরত্বে থাকা ‘ময়না’ নামক অভাবী, অশিক্ষিত, এক তেজি নারীর লড়াই, সংগ্রাম। ঐ সময়েই রচনা করেছি এই ময়না তথা হাজারমুখীর নিত্যদিনের আখ্যান। আসলে তো, হাজারমুখীরা আমাদের চারপাশেই থাকে; থাকে গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, ঢাকা উদ্যান, কিংবা কামরাঙ্গির চরে। এদের দৈনন্দিন জীবনযুদ্ধের চিত্রই এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাস।
রাইজিংবিডি: মাদ্রাসায় শিশু ছাত্রদের যৌন নির্যাতন বিষয় আপনি উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, সেক্ষেত্রে বাস্তবতাকে কতটুকু আশ্রয় করেছেন?
কাজী লাবণ্য: ঢালাওভাবে একথা বলা যাবে না যে, মাদ্রাসাগুলোতে শিশু ছাত্রদের উপর যৌন নির্যাতন চলে। সব মাদ্রাসাতেই এমন ঘটে সেটাও সত্য নয়। বিভিন্ন স্থানে, বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে। আমার লেখার পেছনে আছে আমার শোনা কয়েকবছর আগের তেমনই একটি ঘটনা। বেড়াতে গিয়েছিলাম পূর্বপুরুষের ভিটায়। সকালবেলায় হাঁটতে গিয়েছি। ছোট কালভার্টের উপর নির্মিত সেতুতে নীল জোব্বা, মাথায় টুপি পরা একটি শিশু বালক বসেছিল।চারপাশের অনাবিল পরিবেশ, অপুর্ব সবুজ বনরাজি, মেঘমুক্ত আকাশ, পাখির কুজন, জলাশয়, আর শস্যক্ষেতের মাঝে বাচ্চাটিকে দেখে কৌতূহলী হয়ে বসেছিলাম ওর পাশে। অনেক কসরতের পর, মাছের মতো পর্দাহীন চোখে তাকিয়ে ওর ক্রোধান্বিত কিছু বক্তব্য আমাকে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এটাই এই আখ্যানের বীজ। এরপরে আরও অনেকের মুখে শুনেছিলাম কিছু কদর্য কাহিনী। আর টিভি, পত্রিকা, ফেসবুকের রিপোর্ট তো আছেই।
রাইজিংবিডি: আপনারতো একটি গল্পের বইও প্রকাশ হচ্ছে ‘আরুশি ও একটি মিছরিদানা আংটি’— এই নামকরণের কারণ কী? কী ধরণের গল্প থাকছে বইতে?
কাজী লাবণ্য: এই বইটি ১৬টি ভিন্ন মেজাজের গল্প নিয়ে মলাটবন্দি করেছে গ্রন্থিক প্রকাশন। গল্পগুলি ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবং ভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছে। অধিকাংশ গল্পই এসেছে নিজের দেখা প্রখর বাস্তবতা থেকে। কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছি সেখানে দেখা পেয়েছি ‘নুরবানু’ নামে এক ফুলওয়ালি বালিকার, বাজার করি কৃষিমার্কেটে সেখানে দেখা পাই প্রকৃতির খেয়ালি সৃষ্টি ‘অজুফা’র, এরাই চলে আসে আখ্যানে, এদের নিয়ে তৈরি হয় গল্পের কাঠামো।
‘আরুশি ও মিছরিদানা আংটি’ গল্পটি নাম গল্প। এখানে এক নিঃসঙ্গ নারীর একাকীত্বের চিত্র এসেছে একেবারে আলাদা ফরমেটে। প্রেমিক পুরুষের দেওয়া নাম ‘আরুশি’। এর অর্থ সূর্যের আলো বা প্রভাতি। এটি লিখতে গিয়ে কেমন এক ঘোর তৈরি হয়েছিল।
রাইজিংবিডি: সারাদিনে লেখা ও পড়ার সময়টা কীভাবে বের করেন?
কাজী লাবণ্য: আদতে আমি একজন ‘পড়ুয়া মানুষ’। পূর্বেও একথা একাধিকবার বলেছি। লেখালেখিতে না এলে আজীবন পড়ুয়াই থাকতাম। প্রচুর পড়া হয়, এই পড়ার জন্য আলাদা সময় বের করতে হয় না। এটা জীবনের প্রতিটি ধাপের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। যেভাবেই হোক ঢুকে পড়েছি এক ছুটন্ত টানেলের ভেতর। নিশ্চিন্ত ঘুমের কাছে সমর্পিত হয়েও মাঝেমধ্যে আবার ভূমিকম্পের মতো আঁতকে উঠি। লিখতে বসি। লম্বা সময় না লিখতে পারলে খুব অস্থির লাগে। যা লিখি যেমন লিখি লেখার টেবিলে বসতে হয়। তাতে শান্তি পাই, স্বস্তি আসে। শব্দেরা আমার ইরেজার, আখ্যান আমার প্রেমময় সঙ্গী।
রাইজিংবিডি: বইয়ের প্রচারণায় লেখকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
কাজী লাবণ্য: জোরালো হওয়া উচিত মানে, আমাদের প্রেক্ষাপটে। আমার বই আমি প্রচার না করলে কে করবে? ব্যাপারটা এমনটাই দাঁড়িয়ে গেছে। না, আজকাল আর খারাপ লাগে না। আমিও কম, বেশি প্রচারে নেমে পড়েছি।তবে প্রচারের নানা উপায় থাকলেও কেবলমাত্র ওই ফেসবুকে দেওয়া ছাড়া আর তেমন কিছু করা হয় না। তবে প্রকাশকের উচিৎ নানাভাবে প্রচার করা।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ
চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আকস্মিক ঝটিকা মিছিল করার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। মিছিলে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম জিইসি মোড় এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী এই মিছিলটি জিইসি মোড় থেকে সিডিএ এভিনিউ’র দিয়ে সামান্য পথ এগিয়ে নেতাকর্মীরা নিজেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ২০-২৫ জনের এই মিছিলটিতে কয়েকজনকে ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায়। এদিন বিকেলের দিকে ওই মিছিলের প্রায় দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে এই মিছিলটি হয়েছে বলে পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়। মিছিলটি অনেক সকালে হওয়ায় আশেপাশে কোনো পুলিশের টহল বা অবস্থান ছিলো না। মিছিলের আগে পুলিশের অবস্থান রেকি করেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার মো. রকিবুল হাসান বলেন, “জিইসি এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকমিনিটের একটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। ইতিমধ্যে কার নেতৃত্বে এবং কারা এই মিছিলে অংশ নিয়েছে তাদের অন্তত ১০-১২ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। অতি দ্রুত সময়ে তারা গ্রেপ্তার হবে বলে পুলিশ আশা করছে।”
এর আগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর মধ্যরাতে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে মিছিলে থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায়, দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৩০ থেকে ৫০ জন জামালখান এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে সরে পড়েন। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/রেজাউল/ইমন