চীন ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের চাপে পড়তে পারে ঢাকা
Published: 31st, January 2025 GMT
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও সম্পর্ক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে রয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে এমনিতেই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে পড়তে পারে বলে মনে করছেন উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভূরাজনীতি নিয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ‘বাংলাদেশ অ্যাট জিওপলিনিক্যাল ক্রসরোড’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যদি দেখেন, তবে গত ছয় মাসে এখানে অনেক কিছু ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এখানে আচরণ করবে, তা আমরা জানি না। চীনের দিকে যাওয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যদি বাংলাদেশকে চাপ দেয়, তখন বাংলাদেশকেও কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার চীনের আসন্ন সফর নিয়ে কুগেলম্যান বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার চীনের দিকে ঝুঁকছে। আমরা জানি না, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে। ট্রাম্প কৌশলগত বিষয়গুলো কম গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগী হবেন বলে মনে হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বাধা তৈরিতে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেখতে পাওয়ার শঙ্কা আছে।
অনুষ্ঠানে সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণে ভারতকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীন ভারসাম্যের দেশ হিসেবে দেখা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা আরও চীনা বিনিয়োগ দেখতে চাই।
আলোচনায় পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশকে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই বহির্বিশ্বে অভিন্ন স্বার্থ ও সম্মানের বৈদেশিক সম্পর্ক তৈরিতে এগিয়ে থাকবে। জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থ্যান সমতা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখিয়েছে। এখন সময় এসেছে আগের ভুল শুধরে নেওয়ার। সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনীতিকে ঠিক করা। বেশির ভাগ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে না। কারণ, তারা একটি সরকারকে চার-পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশি ডায়াসপোরাদের কাছে যেতে হবে রেমিট্যান্সের জন্য।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কমিশন করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির। তিনি বলেন, হাসিনার আমলে যেসব পররাষ্ট্র নীতি পাস করা হয়েছিল, তা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের কী ধরনের পররাষ্ট্র নীতি দরকার আর কী রয়েছে, তা-ও দেখতে হবে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.
অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে কীভাবে মোকাবিলা করবে, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রশ্নে আলোচকরা বলেন, ভারত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অকার্যকর সম্পর্কের ওজন আমাদের জন্য ভারী হবে। এমনকি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও অকার্যকর সম্পর্কের ওজনও আমাদের জন্য ভারী হবে। তবে হাসিনার আগে ও পরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যধিক বন্ধুত্ব থেকে অত্যধিক খারাপের দিকে গেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা হতে হবে গঠনমূলক ও ইতিবাচক। যেটা ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে এবং সময়ের দাবির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পারস্পারিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে জামায়াত ও পাকিস্তান– এ দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টায় আছে। ভারত বাংলাদেশে একটি নির্বাচন দেখতে চায়। কারণ হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ভারত মনে করছে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ফলে বিএনপির সম্ভাব্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ভারতকে স্বস্তি দেবে। বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যকে প্রয়োজন।
মাহফুজ আনাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। পত্রিকাটির জিওপলিটিক্যাল ইনসাইটের সম্পাদক রামিসা রবের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মারুফা আক্তার, সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট র ভ র জন ত সরক র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাজা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। খবর- বাসস।
এদিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটি এবং মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার কথা জানিয়েছে ইইউ। সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইইউর এই কমিশনার বলেন, যদিও এই অর্থের পরিমাণ গত বছরের প্রাথমিক ইইউ অনুদানের চেয়ে বেশি, তবু এটি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তহবিল ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখনও কোনো সমাধান নেই। কখন সমাধান হবে, তার কোনো সময়সীমা নেই।
ইইউ কমিশনার বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি। আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও অন্তর্ভুক্ত।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউর সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে কমিশনার বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।
কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাই বেওয়ারিশ লাশ যেন না থাকে। আমরা এমন একটা সমাজ বানাই, যেখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাজ আর থাকবে না।’ রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দোয়া ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নতুন ভবন আঞ্জুমান জে আর টাওয়ারের উদ্বোধন করেন। ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি গোলাম রহমান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী বক্তব্য দেন।