তরুণরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাও নেই। পরিস্থিতির প্রয়োজনে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন। তখন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান পররাষ্ট্র ভাষ্যকার গিডেয়েন র‌্যাচম্যানের উপস্থাপনায় পডকাস্টে অংশ নেন। ‘র‌্যাচম্যান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টের কথোপকথন লিখিত আকারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। 

পডকাস্টের শুরুতে প্রশ্নের জবাবে ড.

ইউনূস ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বলেন, বাংলাদেশে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি অনন্য। এমনটি বিশ্ব ইতিহাসেও বিরল। প্রশ্নকর্তা জানতে চান, এটা গ্রাফিতির কারণে হয়েছে কিনা। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রাফিতি পরে হয়েছে। যখন আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন এগুলো আঁকা হয়। ছেলেমেয়েরা মাইলের পর মাইল দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছে। তারা আবেগ, স্বপ্নকে তুলে ধরেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এগুলো অনন্য দক্ষতায় এঁকেছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল না।

পডকাস্টে ড. ইউনূস এক শিক্ষার্থীর আবেগঘন চিঠি তুলে ধরেন। সেখানে ওই শিক্ষার্থী লিখেছে, কীভাবে সে পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের বাবা-মায়েরাও যে এক সময় মিছিলে হাজির হন, প্রধান উপদেষ্টা সেই সূক্ষ্ম সত্যও তুলে ধরেছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি প্রসঙ্গে করা প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু টিউলিপ নন, তাদের পুরো পরিবার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।  

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য যে দুটি সময়ের কথা বলেছেন, তা ভালো সময়। কারণ তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখছেন। তিনি এটা থেকে বিচ্যুত হতে চান না।

আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন তারা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হচ্ছিল, তখন তিন ছাত্রকে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশকে জীবন দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদে বসতে পারে এবং জীবন দেওয়ার জন্য কী করছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ভালো কাজ করছে।’ 

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। তাই আমরা জানি না– তারা আমাদের দেশের যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কিনা। এক ধরনের সুযোগ আছে, যা আমাদের নিতে হবে। তবে ছাত্ররা প্রস্তুত। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।’

এক পর্যায়ে পডকাস্টে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, ভারতীয়রা যেসব বিষয় বলছেন, তার একটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তারা বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। অধ্যাপক ইউনূস হয়তো না-ও ঠিক থাকতে পারেন। কারণ সেখানে ইসলামপন্থিরা রয়েছে, যারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
তখন ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন লক্ষণ দেখি না। অন্তত আমি এখন কোনো লক্ষণ দেখি না। তরুণরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাও নেই। পরিস্থিতির প্রয়োজনে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদের রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেসব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যদের মতো সবকিছুর পুনরাবৃত্তির সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স র র জন ত র জন ত ক দল গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

মোদির থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৪ পরামর্শ দিলেন অক্ষয়

৫৭ বছর বয়সেও অক্ষয় কুমারের ফিটনেসের কাছে হার মানবে তরুণরাও। বলিউডের অভিনেতাদের মধ্যে ফিটনেস নিয়ে সবচেয়ে সচেতন যদি কেউ থাকেন, তিনি খিলাড়ি। নিজে যেমন শরীর সচেতন, তেমনই অনুরাগীদেরও ফিট থাকার পরামর্শ দেন সর্বক্ষণ। এবার নরেন্দ্র মোদির থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে বড় পরামর্শ দিলেন বলিউড অভিনেতা।

উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে ‘ন্যাশনাল গেমস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘ফিট ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘আজকাল দেশে স্থূলতার সমস্যা খুবই বেড়েছে, বিশেষত যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। এ থেকে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের মতো অসুখ বাড়ছে।’

ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন, দু’টি বিষয় খেয়াল রাখতে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, প্রতি দিন ১০ শতাংশ ভোজ্য তেল গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে।

এর পরেই বেশ কিছু পরামর্শ দেন অক্ষয়ও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পরামর্শগুলো দেন তিনি। 

অক্ষয় কুমার লেখেন, ‘একেবারে সত্যি! বহু বছর ধরে আমি এটাই বলে আসছি। খুব ভাল লাগছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে এত ভাল করে বুঝিয়ে বলেছেন। স্বাস্থ্য ভাল থাকলে সব কিছু ঠিক থাকে।’

স্থূলতার সঙ্গে লড়াই করার কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছেন তিনি তার পোস্টে। লিখেছেন, ‘স্থূলতা দূর করতে হলে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুম প্রয়োজন। টাটকা হাওয়া ও সূর্যের আলোও দূর করতে পারে স্থূলতা। তবে বাদ দিতে হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার। সঙ্গে অল্প তেলের খাবার খেতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি দেশি ঘিয়ে খাবার খাওয়া যায়। এছাড়া চলাফেরা করতে থাকুন। যে কোনও ধরনের শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। আমার কথা বিশ্বাস করুন এবং এগিয়ে যান।’

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে অক্ষয়ের ছবি ‘স্কাইফোর্স’। এর আগে তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘সিংহম আগেন’ ও ‘খেল খেল মে’ ছবিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ