অপমান অপদস্থের কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা
Published: 31st, January 2025 GMT
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমাসহ বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সব তারকা একসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনের সামনে মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্ডা, সানজিদা আক্তার, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, সাগরিকাদের চোখে ছিল অশ্রু। কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে সাবিনা যেন কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একটু পর স্বাভাবিক হয়ে বলেন, ‘আমরা এই কোচের অধীনে অনুশীলন করব না। এই কোচ থাকলে আমরা একসঙ্গে চলে যাব। একটা বিষয় বলা দরকার, নিজেদের প্রমাণের কিছু নেই। ব্যাপারটি আত্মসম্মানের। দিনশেষে মেয়েরা দেশের জন্য খেলেন। দেশের মানুষ যেভাবে মেয়েদের কটূক্তি করছেন, যেটি মেয়েদের জন্য মেনে নেওয়াটা অসম্ভব’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাবিনার এমন মন্তব্যের পর অন্য ফুটবলাররাও একে একে বাটলারের বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। ২০ মিনিটের মতো সংবাদ সম্মেলনের আগে তিন পাতার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি মিডিয়াকর্মীদের হাতে তুলে দেন মেয়েরা। যেখানে লেখা আছে বাটলারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনেক অভিযোগ। মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলা, বডি শেমিং (শারীরিক গঠন নিয়ে লজ্জা দেওয়া), দলের অভ্যন্তরে সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন সৃষ্টি, গালাগাল, মানসিক নির্যাতন, মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলাসহ নানা বিষয় আছে তিন পৃষ্ঠার লেখাতে। এসব বিষয় বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে জানালেও সমাধান না পাওয়ার অভিযোগ মেয়েদের। তাই সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আগে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্ত নারী সাফজয়ীদের। সেখানেও যদি বাটলার ইস্যুতে ইতিবাচক কিছু না আসে, তাহলে গণহারে অবসরের হুমকি দিয়েছেন সাবিনারা। তবে গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে বাফুফেকে একটি চিঠি দিয়েছেন। প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বাফুফেকে।
দুই বছরের চুক্তিতে নারী জাতীয় দলের কোচ হিসেবে পিটার বাটলারকে নিয়োগ দেওয়ার পরই অস্থিরতার ইঙ্গিত মেলে। সেটা বাস্তবে রূপ নেয়, মঙ্গলবার যখন বাটলারের ডাকে সাড়া দেননি মেয়েরা। এমন অবস্থায় মেয়েদের হুমকি দিতে থাকেন ফেডারেশনের কর্তারা। সংবাদমাধ্যমে নানা রিপোর্টের পর গতকাল একজোট হয়ে নিজেদের যুক্তিগুলো তুলে ধরেন মেয়েরা। মোট ১৮ জন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে গত অক্টোবরের সাফে পিটার বাংলাদেশকে ‘ডোবাতে চেয়েছিলেন’ এমন অভিযোগও করা হয় প্রথম প্যারায়। সেখানে লেখা আছে, ‘আমরা যদি সাফে ব্যর্থ হতাম, বাফুফে কর্তারা ও দেশের মানুষের কাছে ভিলেন হয়ে যেতাম। ওই ম্যাচেই আমাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। এটা বুঝেও আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম দেশের হয়ে লড়াই করার জন্য। দেশের জন্য আমাদের এই লড়াই ও আবেগ, ভালোবাসার মূল্য ফুটবল ফেডারেশন থেকে আশা করেছিলাম। সেটা হয়নি। বরং সাফ থেকে ফেরার পর যা হলো, তার জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এই বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্তে মেয়েদের দাবি-দাওয়াকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে।’
কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে মেয়েদের বিদ্রোহের খবর নতুন নয়। গত বছরের অক্টোবরে নেপাল সাফের সময় এ নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল। তবে কোচ বাটলারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সমাধানে বাফুফে থেকেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মেয়েদের। এটাই এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। গতকাল সকালে বাটলার জিম সেশনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে ক্যাম্পে থাকা ২৯ খেলোয়াড়ের মধ্যে ১২ জন অংশ নেন। সন্ধ্যায় বাকি ১৭ জন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে কৃষ্ণা রানী সরকার সাফে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা মাঠে খুবই মানসিক চাপে থাকি। তিনি ইচ্ছা করে আমাদের অঙ্গভঙ্গি.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এক বোনের বুয়েটে আরেকজনের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ, প্রথমবার আলাদা হচ্ছেন তাঁরা
যারীন তাসনীম ও যাহরা তাসনীম যমজ বোন। মায়ের পেট থেকে স্কুল-কলেজের বেঞ্চে একসঙ্গে ছিলেন। এক টেবিলে পড়াশোনা, এক বিছানায় ঘুমানো—এভাবেই কেটেছে ১৭টি বছর। একজনের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া, অন্যজনের প্রকৌশলী। সম্প্রতি যারীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং যাহরা টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। স্বপ্ন পূরণে এখন থেকে তাঁদের আলাদা থাকতে হবে।
যারীন ও যাহরা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার শিক্ষক দম্পতি আবু জুয়েল ও চায়না আক্তারের যমজ মেয়ে। শিক্ষাজীবনে পিএসসি থেকে শুরু করে সব পরীক্ষায় তাঁরা জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। যারীন-যাহরার বাবা আবু জুয়েল উপজেলার সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আর মা চায়না আক্তার উপজেলার শান্তিকুঞ্জ একাডেমির সহকারী প্রধান শিক্ষক। তাঁদের বাড়ি উপজেলার কচুয়া গ্রামে।
যারীন তাসনীম এবার বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে এইচএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর হলিক্রস কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে মায়ের পেটে ছিলাম। এক দোলনায় শুয়েছি। বড় হয়ে একই বিছানায় ঘুমিয়েছি। স্কুল-কলেজে একই বেঞ্চে বসে পড়াশোনা করেছি। শুধু কলেজ ছাড়া ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত এক সেট বইয়ে দুজন পড়েছি। আমাদের কখনো মুঠোফোন দেওয়া হয়নি। তবে কলেজে দুজনে মিলে একটি বাটন ফোন চালিয়েছি। ১৭ বছর একসঙ্গে থেকেছি। স্বপ্নপূরণে ও ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে এখন থেকে আমাদের আলাদা থাকতে হবে।’
মায়ের পেট থেকে স্কুল-কলেজের বেঞ্চে একসঙ্গে ছিলেন যমজ দুই বোন। স্বপ্ন পূরণে এখন থেকে তাঁদের আলাদা থাকতে হবে