Samakal:
2025-04-24@17:27:24 GMT

বৃদ্ধ ছেলের সহায় অশীতিপর মা

Published: 31st, January 2025 GMT

বৃদ্ধ ছেলের সহায় অশীতিপর মা

বাক্‌প্রতিবন্ধী আসকর আলী (৬২) চলাফেরা করতে পারেন না। চোখেও দেখেন না ঠিকমতো। এই বয়সে সাধারণত মানুষ অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে স্ত্রী-সন্তান বা স্বজনের ওপর। আসকর আলীর তেমন কেউ নেই। ঘরবন্দি এই মানুষটার দিনযাপনের একমাত্র অবলম্বন অশীতিপর মা কয়েদ ভানু। অতিদরিদ্র মা-ছেলের নেই বসবাস করার মতো একখণ্ড জমি। অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘরে কোনোমতে দিন কাটে তাদের। রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় দিনে একমুঠো ভাত জুটবে কিনা, এ নিয়েও প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় মা-ছেলেকে। 

তাদের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার দুর্গম গ্রাম কাশিয়াবাড়িতে। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে একটু রোদের উষ্ণতা পেতে ঘরের আঙিনায় খড়ের ওপর পাশাপাশি মা-ছেলে বসে আছেন। মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে শিশুর মতো শীতে জড়সড়ো হয়ে আছেন শীর্ণকায় আসকর আলী। বাক্প্রতিবন্ধী আসকর স্বভাবতই কথা বলতে পারেননি। তবে জীবনের প্রতি পাহাড়সমান অভিযোগ নিয়ে কিছু কথা বলেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মা কয়েদ ভানু। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বামী আলতাফ হোসেন ছেড়ে যান কয়েদ ভানুকে। নিজেরই কোনো ঠাঁই নেই, সঙ্গে ছোট্ট দুটি মেয়ে আর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তখন তিনি যেন পড়েন অথই সাগরে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বয়সের ভারে ন্যুব্জ কয়েদ ভানু বলেন, ‘স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর ছোট তিন বাচ্চা নিয়ে রাস্তার ধারের খুপরি ঘরে, মানুষের গোয়াল, আবার কখনও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় রাত কাটিয়েছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ওদের খাইয়েছি। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিলেও অসুস্থ ছেলেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এমন নিষ্ঠুর জীবন যেন আর কারও না হয়।’ 
বয়স হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর হলো কয়েদ ভানু কাজ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাও করেছেন কিছুদিন। তবে এখন ভিক্ষা করার শারীরিক সক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি জানান, রান্নাবান্নার কাজও করতে পারেন না। মেয়েদের যেখানে বিয়ে হয়েছে, তাদেরও নুন আনতে পানতা ফুরায়। ফলে মা-ছেলেকে দেখার মতো কেউ নেই। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতাও ভাগ্যে জোটেনি। বয়স্ক ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতাও পান না। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গৃহহীন, ভূমিহীন অনেকে নাকি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দাতে মা-ছেলের বহু রাত অর্ধাহারে, অনাহারে কাটলেও তারা কিছু পাননি। 

সম্প্রতি মা-ছেলের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তামিম মিডিয়া’। সংগঠনটির উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম তামিম বলেন, বৃদ্ধ অসহায় মা-ছেলেকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দা থেকে এনে নিজেদের জায়গায় ঘর তুলে দিয়েছি। কিন্তু তাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার। তারা যেন প্রতিবন্ধী ভাতা ও বয়স্ক ভাতা পান, এটা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী ইউএনও কামরুল ইসলাম বলেন, কয়েদ ভানুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি বৃদ্ধ মা-ছেলের পরিচর্যার জন্য সপ্তাহের তিন দিন নার্স পাঠানো হবে সেখানে।

 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। 

আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
 
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
 
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
 
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
 
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
 
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ