আইন সংশোধনে সরকারকে প্রস্তাব পাঠাবে ইসি
Published: 31st, January 2025 GMT
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনে সংশোধনী আনতে সরকারকে প্রস্তাব পাঠাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরুতে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবে।
এদিকে, আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ৪১টি সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে ২৪৮ আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। এর বেশির ভাগই ২০০১ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে কমিশনার আবুল ফজল মো.
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে আলোচ্যসূচিতে ছিল ১২টি বিষয়। বৈঠকে ভোটার তালিকা আইন, আন্তর্জাতিক ও দেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা এবং নির্বাচনের সময় সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা আরও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য এগুলো ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার তালিকা আইন আরও পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের সভায় যে চারটি আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা করা হয়েছে, একই বিষয় নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আছে। তাদের সেই সুপারিশ এখনও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। এর মধ্যে ইসির এই উদ্যোগের ফলে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে কিনা– এমন প্রশ্নে সানাউল্লাহ বলেন, এটা ইসির নিজস্ব চর্চা। এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এখানে সাংঘর্ষিক হওয়ার সুযোগ নেই।
সীমানা নির্ধারণ আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে দুটি বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। মূলত জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ইসি ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদন ইত্যাদির ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে চায়। দেশের জনসাধারণের শহরমুখী প্রবণতা রয়েছে। শুধু জনসংখ্যার ভিত্তিতে করলে শহরের দিকে আসনসংখ্যা বাড়বে, অন্য এলাকায় কমে যাবে। এতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব হবে না বলে কমিশন মনে করে। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনের উপধারায় একটি ছাপার ভুল আছে। ইসি এটি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠাবে। সংস্কার কমিশনও সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া করেছে। ইসিও সংশোধন করছে। দুটির মধ্যে পার্থক্য থাকলে ইসি কোনটা নেবে– এমন প্রশ্নে সানাউল্লাহ বলেন, এখানে কোনো পার্থক্য হওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, কতগুলো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা শেষে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে কিনা, এমন প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশনে প্রতিবেদন আসার পর কমিশন যদি মনে করে তাহলে পাঠানো হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কারণে ইসির কাজ দেরি হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। সংস্কারটা ন্যাশনাল ডিমান্ড। আমরা তো এর বাইরে নই।
সম্প্রতি সিইসি বলেছেন, সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। বিষয়টি সরকারকে ইসি জানিয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে সানাউল্লাহ বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসি তাদের পর্যবেক্ষণ সরকারকে জানাবে।
এ ছাড়া সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তিনটি বিকল্প নিয়ে ভাবছে ইসি। সেগুলো হলো– পোস্টাল ব্যালট, প্রক্সি ভোটিং এবং অনলাইন ভোটিং।
এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া মানবিক করার কথা ভাবছে
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন প্রক্রিয়া মানবিক করার কথা ভাবছে ইসি। এ জন্য একটা নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সানাউল্লাহ বলেন, এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কমিশনের কাছে আসছে। এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তিনি বলেন, ১৮২ প্রতিষ্ঠান ইসির হাতে থাকা জাতীয় সার্ভার থেকে সেবা নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার আলোকে ইসি মনে করছে, নিরাপত্তা ফিচারগুলো আরও জোরদার করতে হবে। এটা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
ভোটারের আস্থা ফেরানোর পরামর্শ ইইউর
ইসিকে ভোটারের আস্থা ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সফররত ইইউ গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ মাইকেল লিডর সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমন পরামর্শ দেন।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমরা দু’সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের মতবিনিময়ের ফিডব্যাক দিতে এসেছেন। সব মহলের একটাই কথা- সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটাধিকার ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা মডেল থাকলে শেয়ার করতে বলা হয়েছে। এটা জটিল প্রক্রিয়া হলেও তারা বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান সচিব।
মাইকেল লিডর বলেন, দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে এসে আমরা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষ সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়– এটা বোঝা যাচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আটক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যে সংযোজন- বিয়োজনসহ বায়োমেট্রিক জালিয়াতির অভিযোগে সোমবার রাত ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জুবায়ের আলম।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন শাখার উপ-পরিচালক তকবির আহমদ ও সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসে। রাতে অফিসে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ডাটা এন্টি অপারেটরকে দেখতে পায় তদন্ত কমিটি। তখন নথিপত্রসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে তারা দুর্নীতির তথ্য পান। বিশেষ করে এনআইডি সংক্রান্ত তথ্য সংযোজন-বিয়োজন এবং বায়োমেট্রিক জালিয়াতির প্রমাণ পায় তদন্তকারী দল। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তারা পুলিশকে কল দিয়ে অভিযুক্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জুবায়ের আলমকে তাদের হেফাজতে দেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুকুর মাহমুদ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় এ প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচন কমিশনের তদন্তকারী দলসহ তারা সরেজমিনে গিয়ে দুর্নীতির তথ্য পেয়েছেন। তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দুজনকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি রুল আমীন বলেন, দুজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।