বেরিয়ে এলো দেশে বৈষম্যের প্রকট চিত্র
Published: 31st, January 2025 GMT
দেশের ভেতর উন্নয়ন বঞ্চনা ও বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। সমালোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বিশেষ করে অঞ্চলভেদে বৈষম্য যে কতটা প্রকট, তা বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্যের স্থানিক মানচিত্র (পোভার্টি ম্যাপ) প্রতিবেদনে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস। অন্যদিকে রাজধানীর পল্টন থানায় এ হার ১ শতাংশ। তুলনামূলক এ অনুপাত বলে দেয় বৈষম্য কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের জেলা হিসেবে মাদারীপুরের নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ, ২০১৬ সালে প্রকাশিত দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী মাদারীপুর ছিল সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের জেলার মধ্যে তৃতীয়। ওই প্রতিবেদনে জেলাটিতে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছরের ব্যবধানে এ রকম উল্টো চিত্র মুদ্রণজনিত ত্রুটি কিনা– জানতে চাইলে বিবিএসের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে প্রকাশিত চিত্র সঠিক। তবে গত প্রতিবেদনে কিছু ত্রুটি থেকে থাকতে পারে। এ দুর্বল ভিত্তির কারণে তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকায় বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন
করেন বিবিএসের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর গুলশানের চেয়ে ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার কম। ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গুলশানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আবার রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৯ শতাংশ দারিদ্র্যের বাস মিরপুরে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য এলাকার মধ্যে আদাবরে ৯ দশমিক ৮, বাড্ডায় ৭, বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে। ঢাকা জেলার সামগ্রিক দরিদ্রের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আর জাতীয় দরিদ্রের হার ১৯.
প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের আঞ্চলিক ম্যাপিংয়ে দেখা যায়, বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস বরিশালে, ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম নোয়াখালীতে, ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাদারীপুরে সবচেয়ে বেশি, ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। উপজেলা হিসেবে ডাসারে (মাদারীপুর) সবচেয়ে বেশি, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।
গত ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দারিদ্র্যের মানচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের সহযোগিতা নেওয়া হয় এতে। প্রতিবেদন তৈরিতে প্রযুক্তি সহযোগিতা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে ডব্লিউএফপি।
প্রতিবেদনে নতুন করে জাতীয় দারিদ্র্যের তথ্য দেওয়া হয়নি। বিবিএসের ২০২২ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে– এমন ভোগ্যপণ্যের একটি তালিকার ভিত্তিতে বিবিএস জরিপ করে। মৌলিক চাহিদা পূরণ করার মতো আয় যারা করতে পারে না, তারা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকায় ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমন লসন পার্সমেন্ট বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এই মানচিত্র প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ভিত্তিতে সরকার বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির এলাকা এবং বরাদ্দ নির্ধারণ করবে। উন্নয়ন সহযোগীরাও প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে এ দেশে কার্যক্রমে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে।’ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবও প্রায় একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৈষম্যহীন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব এস র সবচ য় দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবযেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী