মুড়িকাটায় লোকসান পোষাতে চারা রোপণ
Published: 30th, January 2025 GMT
মৌসুমের শুরুতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে লোকসান হয়েছে কৃষকের। এবার চারার দাম কম হওয়ায় ২০ একর জমিতে রোপণ করছেন বাঘার চাষি জিল্লুর রহমান। তিনি বলছিলেন, চাষ, সেচ, শ্রমিক, কীটনাশক, সারসহ সব মিলিয়ে বিঘায় খরচ হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিঘাপ্রতি ৮০ মণ উৎপাদন হবে বলে আশা তাঁর। এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ দাম থাকলেও পেঁয়াজ বিক্রি হবে ১ লাখ ১২ হাজার টাকায়। এতে খরচ বাদে বিঘায় লাভ হবে ৪২ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ায় নষ্ট হওয়া, দাম কমাসহ নানা কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে লোকসান হয়েছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৌসুমের শুরুতে চারা পেঁয়াজ রোপণ শুরু করেছেন চাষি। গত বছরের তুলনায় এবার চারার দাম কম। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা চারা রোপণ করছেন। এক বিঘা জমিতে এক কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ৬ হাজার টাকা। এবার প্রতি কেজি বীজ কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৭শ থেকে ২ হাজার টাকায়। এতে বিঘায় চারা উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মণ। এবার মৌসুমের শুরুতেই প্রতি মণ চারা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। গত বছর ছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনার বীজ নিয়ে চারা তৈরি করে অনেকে রোপণ করছেন। কেউ কেউ চারা কিনে নিচ্ছেন। এ আবাদে চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকসহ প্রচুর খরচ হয়। কৃষকের ভাষ্য, সেচই দিতে হয় সাত-আটবার।
কৃষক পিয়ার আলী প্রণোদনার বীজ নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, উৎপাদন ও বাজারে দাম ভালো পেলে খরচ বাদে লাভ থাকবে। আর কৃষক আব্দুল্লাহ ও হারু চারা কিনে রোপণ করছেন। চাঁদপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভালো দাম পেয়ে এবার উচ্চ মূল্যে বীজ কিনে ৪০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন। দাম ভালো না পেয়ে বিঘায় লোকসান হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
পাকুড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ কিনেছিলেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। চাষ, বীজ, সেচ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ মণ। বাজার মূল্যে এক বিঘার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এবার ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কন্দ জাতের ১ হাজার ৫০০ ও অন্যান্য ৫১৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে কন্দ আর ৯৫ হেক্টরে চারা আবাদ হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৬১৮ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পরে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের। বিঘায় ৭০ থেকে ১০০ মণ উৎপাদন হতে পারে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চরাঞ্চলে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি আবাদ হলেও চারার আবাদ কম। চারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। মুড়িকাটা আবাদের পর বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় উৎপাদন কমেছে। দাম কম থাকায় লোকসান হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজে লোকসান হলেও চারায় লোকসান হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ ম কম
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ বাবর, দুবাইতে হাসপাতালে ভর্তি
ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সদ্য কারামুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। পরে তাকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুবাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাবরের একান্ত সহকারী মির্জা হায়দার আলী।
তিনি জানান, ঢাকা থেকে মদিনার উদ্দেশে রওনা দেন লুৎফুজ্জামান বাবর। যাত্রাপথে উড়োজাহাজে (অ্যামিরাটস এয়ারলাইন্স) হঠাৎ তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। পরে দুবাইতে বিমান অবতরণের পরে দ্রুত বিমানবন্দরের কাছে একটি ক্লিনিকে তাকে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাবরকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।
মির্জা হায়দার বলেন, স্যার এখন দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে।
১৭ বছর কারাবাসের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পান লুৎফুজ্জামান বাবর। এর আগে ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা পৃথক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পান তিনি।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। দুটি মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, পরেশ বড়ুয়া, দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। অস্ত্র আইনের মামলায় উভয় পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৪ জানুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।