Samakal:
2025-01-31@09:10:25 GMT

চীন দেশে কয়েকবার

Published: 30th, January 2025 GMT

চীন দেশে কয়েকবার

শেষ পর্ব

কালের খেয়ায় পত্রস্থ হলো আজ এ ধারাবাহিক রচনার শেষ পর্ব। পূর্ণাঙ্গ লেখাটি আসছে একুশে গ্রন্থমেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিতব্য

এন লিং বলে, আমার বাবা ক্যান্টনে এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। ম্যানেজার ছিলেন। কালচারাল রেভল্যুশনের সময় তাঁকে গ্রামে কমিউনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁকেও কমিউনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা এখনও কমিউনে আছেন। আমি যাই তাদের দেখতে। ছুটি পেলে তারাও আসেন।
আলী হোসেন বলেন, শহর থেকে গ্রামে কমিউনে গিয়ে তাদের কষ্ট হয়নি?
এন লিং বলে, তারা খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তারপর সে বলে, তারা তো একা নন। আরও অনেকে গিয়েছে শহর থেকে গ্রামে।
আলী হোসেন বলেন, কালচারাল রেভল্যুশন কি ভালো ছিল? কোনো লাভ হয়েছে তাতে?
শুনে এন লিং খুব সচেতন হয়ে যায়। সতর্ক হয়ে বলে, পার্টির নির্দেশ সবাই মেনে চলে। পার্টি সবার জন্য যা ভালো তাই করে।
আলী হোসেন মোহাম্মদুলার সঙ্গে তর্ক হবে মনে করে সাধারণত কথা বলে না। তিনি তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, লাভ আর কী হয়েছে? কিছু মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বুর্জোয়া আরাম-আয়েশে জীবন কাটাবার জন্য। একটা জেনারেশনের পড়াশোনা বন্ধ করে দেশটার  মেধা-পুঁজির বৃদ্ধি ব্যাহত করা হয়েছে। এখন ভুল বুঝতে পেরে কালচারাল রেভল্যুশন বন্ধ করা হয়েছে। তার সঙ্গে জড়িত বলে কুখ্যাত গ্যাং অব ফোরের বিচার হতে যাচ্ছে। এসব কথা তো মেয়েটা বলতে পারে না। তাই বিব্রত বোধ করছে।
মোহাম্মদুল্লা বলেন, একটা জেনারেশনের পড়াশোনা বন্ধ করার কথাটা একদম ভিত্তিহীন। তাই যদি হবে তা হলে এই মেয়েটি পড়াশোনা করল কী করে?
আমি বললাম, বেশ তো, ওকেই জিজ্ঞাসা করে দেখা যাক। তারপর এন লিংয়ের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করি, তোমাকে কমিউনে যেতে হয়নি?
এন লিং বলে, হ্যাঁ। আমি এক কমিউনে ছয় মাস ছিলাম। তারপর ফিরে এসে ক্যান্টনের স্কুলে আবার পড়েছি।
আমি বলি, সব ছাত্রছাত্রীকে কি এভাবে স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে হয়েছে কমিউনে?
এন লিং বলে, সবার কথা আমি বলতে পারব না। তবে শুনেছি কমিউনে গিয়ে ভালোভাবে কাজ না করলে বেশিদিন থাকতে হয়েছে।
নুরুল হক এন লিংকে বলেন, তোমার ভাইবোন নেই? তারা কী করে?
এন লিং বলে, আমিই মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
মোহাম্মদুল্লা বলেন, জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য গণচীন প্রতিটি দম্পতিকে জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে।
আলী হোসেন ব্যঙ্গস্বরে বলেন, এর ফলে শিশুহত্যা হয়েছে। পুত্রলাভের জন্য অনেক দম্পতি কন্যাসন্তানকে হত্যা করেছে অথবা রাস্তায় ফেলে গিয়েছে।
মোহাম্মদুল্লা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ডাহা মিথ্যা কথা। পশ্চিমা মিডিয়ার ছড়ানো গুজব। তাই যদি সত্যি হবে, তা হলে এই মেয়েটি একমাত্র সন্তান হয়েও বেঁচে আছে কী করে? বাজে কথা বলবেন না। রিভিশনিস্ট রাশিয়ার গুণগান করছেন করেন। চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করবেন না। আপনারা মার্ক্সিজমের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে পশ্চিমের কাছে পিসফুল কো-এক্সিস্টেন্সের নামে ধরনা দিয়ে পড়ে আছেন। থাকুন। গণচীনের ব্যাপারে নাক গলাবেন না। গণচীন এখনও বিশুদ্ধ মার্ক্সবাদের প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। আমরাই প্রকৃত কমিউনিজম প্রতিষ্ঠায়  নিরলসভাবে কাজ করছি।
মোহাম্মদুল্লা প্রায় একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন।
এন লিং সবার কথা শুনে বুঝতে পারল যে তার দেশ নিয়ে তর্ক হচ্ছে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল, সময় হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন ট্রেনের দিকে যেতে পারি।
আমরা উঠে ওয়েটিং রুম থেকে বেরিয়ে লম্বা করিডোর পার হয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাই। সেখানে ক্যান্টনের ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। চাইনিজ যাত্রীরা ব্যস্ত হয়ে প্রায় ছুটছে। দেখা গেল ট্রেনে দুটো ক্লাস, ফার্স্ট আর সেকেন্ড ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাসে উঠছে শুধু বিদেশিরা। সেকেন্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্ট সংখ্যায় বেশি হলেও সেখানে চাইনিজদের বেশ ভিড়। তাদের সঙ্গের মালপত্রের সংখ্যা এত বেশি যে কামরায় রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। যখন এন লিং বলল শুধু ফার্স্ট ক্লাসেই এয়ারকন্ডিশনার আছে, তখন বেশ একটা অপরাধবোধ এসে গেল মনে। গণচীনে এমন বৈষম্য দেখতে পাব ভাবিনি। বিদেশিদের জন্য যে আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা, তা যে চীনের শাসকশ্রেণির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? এখনই যে হয়ে যায়নি, তা কে বলতে পারে? তাছাড়া বিদেশিদের তো তোয়াজ করার কোনো কারণ নেই এই দেশের। তারা চীনের দীর্ঘ বিপ্লবের সময়ে কোনো সাহায্য করেনি। একমাত্র ভারত থেকে ড.

কোটনিস ন্যাশনালিস্ট চীনে কলেরা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবা করতে ছুটে এসেছিলেন এবং নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন।
প্ল্যাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে দেখি ট্রেন আকারে বেশ বড়, লাইন পুরোনো আমলের ব্রডগেজের। সেকেন্ড ক্লাসের কামরাই বেশি। সেগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। তাদের কথাবার্তায় বেশ একটা কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিফর্ম পরা একজন রেলওয়ে গার্ড হাতে লাল পতাকা নিয়ে হেঁটে গেল পাশ দিয়ে। একটু পর আমাদের কামরা যে বগিতে, তার দরজার সামনে এসে এন লিং বলল, এই যে তোমাদের কম্পার্টমেন্ট।
মোহাম্মদুল্লা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, মাই স্যুটকেস? আওয়ার ব্যাগেজ?
এন লিং বলে, তোমাদের কামরায় তুলে দেওয়া হয়েছে।
ট্রেনে উঠে প্রথমেই আমরা আমাদের কামরা পেয়ে যাই। চারজনের বসার ব্যবস্থা। ওপরে বার্থে আমাদের ব্যাগেজ রাখা হয়েছে। আলী হোসেন ভেতরে ঢুকেই হাত দিয়ে স্যুটকেসের লক দেখে বললেন, এই লকটা এখনও কাজ করছে।
বললাম, না খুললেই-বা কী? দড়ির যে শক্ত বাঁধন সেটা খুলবে না।
দোরগোড়া থেকে এন লিং বিদায় নেওয়ার জন্য বলে, নাউ আই গো।
আমরা সবাই তাকে দরজা পর্যন্ত গিয়ে বিদায় জানাই। অনেকক্ষণ কষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ দিই। যতক্ষণ ট্রেন না ছাড়ে সে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেন চলতে শুরু করলে সে হাত তুলে কয়েকবার নেড়ে বিদায় জানায়। আমরাও হাত নাড়ি তার উদ্দেশ্যে।
কামরায় এসে সিটে বসে আলী হোসেন বলেন, বড় ভালো মেয়ে। তারপর অভিজ্ঞের মতো মন্তব্য করেন, একটা দেশকে জানতে হলে তার সাধারণ মানুষের ব্যবহার দেখলেই চলে।
কামরার সিটগুলো প্রশস্ত, সামনে পা ছড়িয়ে রাখার মতো অনেক জায়গা। দেয়ালে দুটো পোস্টার। একটিতে এক তরুণী ছোট ছেলেমেয়েকে বই পড়ে শোনাচ্ছে। অন্যটিতে চীন দেশে নানা খাতে উন্নতির বিষয়ে স্লোগানের পাশে হাস্যোজ্জ্বল এক তরুণীর মুখ। হঠাৎ ট্রেন চলার শব্দ ছাপিয়ে কামরার সিলিং থেকে বেজে উঠল যন্ত্রসংগীত। শোনার পর বোঝা গেল চাইনিজ ইনস্ট্রুমেন্টাল। বেশ দ্রুত লয়ের আর উঁচু নাদের। সামরিক কুচকাওয়াজে যেমন শোনা যায়। সমস্ত কামরা গমগম করে উঠল সেই শব্দে।
একটু পর নীল প্যান্ট আর সাদা শার্টের ওপর সাদা ওভারঅল পরিহিত এক যুবতী এসে জানালার পাশের টেবিলে বড় ফ্ল্যাস্ক আর চারটি মগ রেখে চলে গেল। দেখে আলী হোসেন বললেন, চা ছাড়া এ দেশে এক পা এগোনো যাবে না। ভাগ্যি ভালো ফ্রি।
মোহাম্মদুল্লা বললেন, ভুলে যাবেন না এটা গণচীন। এখানে তারা কলেরাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।
সীমান্ত অতিক্রম হওয়ার পর থেকে ‘গণচীন’ নামটি প্রায়ই বলছি আমরা। মনে মনেও জানা আছে আমরা ‘গণচীন’ দেখতে এসেছি। চীন থেকে গণচীন, এই দীর্ঘ যাত্রার ইতিহাস একটু ঝালাই করে নিলে হয়তো দেশটাকে জানতে সুবিধা হবে। অতীতের দিকে না তাকিয়ে  বর্তমানকে জানার চেষ্টা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়ে যেতে পারে। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

গণপিটুনিতে গরু চোরের মৃত্যু, গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা

বরিশালের গৌরনদীতে গরু চুরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ সোহেল (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরে রাতে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

নিহত সোহেল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে। 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সংঘবদ্ধ একদল গরু চোর গত ২৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার পশ্চিম খাঞ্জাপুর গ্রামের জসিম চৌকিদারের গোয়ালঘরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর সংঘবদ্ধ চোরেরা গোয়ালঘর থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ২টি ষাঁড় ও ১টি গাভী চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় গরুর মালিক টের পেয়ে ডাক চিৎকার দিলে ২টি ষাঁড় বাড়ির উঠানে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় চোররা। পরে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে চোরাই গাভী খুঁজতে গিয়ে একই গ্রামের ইউনুস আকনের পান বরজের পাশ থেকে চোর সোহেলকে চোরাই গরুসহ আটক করে গণধোলাই দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় গত ২৬ জানুয়ারি ভোরে শেখ সোহেলকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওইদিনই শেবাচিম হাসপাতালে তাকে (সোহেল) ভর্তি করা হয়। 

গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, “গরুর মালিক জসিম চৌকিদার বাদী হয়ে শেখ সোহেলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ চোরকে আসামি করে ২৬ জানুয়ারি সকালে গৌরনদী থানায় একটি চুরি মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে চোর সন্দেহে স্বামীকে মারধরের অভিযোগে সোহেলের স্ত্রী জহুরা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ শত গ্রামবাসীকে আসামি করে ২৮ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তর করা হবে।”

ঢাকা/পলাশ/ইমন

সম্পর্কিত নিবন্ধ