Samakal:
2025-03-04@00:13:40 GMT

হাসান আজিজুল হকের গল্পের জগৎ

Published: 30th, January 2025 GMT

হাসান আজিজুল হকের গল্পের জগৎ

হাসান আজিজুল হক (১৯৩৯-২০২১) ষাটের দশকের বাংলা ছোটগল্পের একজন ব্যতিক্রমী রূপকার। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার মঙ্গলকোট থানাধীন যবগ্রামে তাঁর জন্ম। মূলত কথাশিল্পী হলেও বাংলা ছোটগল্পধারায় তিনি দেখিয়েছেন অবিসংবাদী কৃতিত্ব। ১৯৬০ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শকুন’ গল্পের মধ্য দিয়েই তিনি সাহিত্যজগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। তারপর সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর মূলত ছোটগল্পের মধ্যেই ডুবে থাকেন।
ছোটগল্পের ক্ষেত্রে হাসান আজিজুল হক তাঁর বিষয়বৈচিত্র্য ও বিস্তার, পর্যবেক্ষণ ও পরিনির্মাণ, শিল্পবোধ ও আঙ্গিক– এসব নিয়ে যে ফসল ফলিয়েছেন, তার তুল্য মান খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃত অর্থে এটিই বাংলা ছোটগল্পের স্পর্ধা ও শক্তি। ‘ছোটগল্প ও তার বিচার’ শীর্ষক প্রবন্ধে সৈয়দ শামসুল হক বাংলা ছোটগল্প সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যে, রবীন্দ্রনাথ থেকে এখন পর্যন্ত, সামগ্রিক বিচারে আমার মনে হয়, উপন্যাস ও অন্যবিধ আখ্যানের তুলনায় ছোটগল্প অনেক বেশি সোনালি ও বড় জমির ফসল। এটি সত্য, হিন্দি-উর্দু ভাষার কথাসাহিত্যেও। পৃথিবীর আর যে-প্রধান কয়েকটি ভাষার খবর রাখি, ইংরেজি ও ইংরেজি অনুবাদে, এর উল্টোটাই তাদের বেলায় দেখেছি।’ হাসান আজিজুল হকের গল্পভুবন আবর্তিত হয়েছে রাঢ়বঙ্গের জীবন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জনজীবন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে। সমাজের সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিম্নবর্গ মানুষের জীবনসংগ্রাম ও জীবনবাস্তবতা তাঁর গল্পসমূহে শিল্পসত্যে উদ্ভাসিত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালেই প্রকাশিত তাঁর অধিকাংশ গল্প। এসব গল্পে রূপময় হয়েছে এ দেশের শ্রমজীবী নিম্নবর্গ মানুষের অস্তিত্বসংকট ও তাদের অস্তিত্বসংগ্রামের বহুমাত্রিক রূপচিত্র। নিম্নবর্গ মানুষের বিপন্নতা ও বিষণ্নতা, তাদের ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের অন্তহীন দুর্ভোগের চিত্র উঠে এসেছে তাঁর গল্পের পরতে পরতে। এ ব্যাপারে হাসান আজিজুল হকের ভাষ্য, ‘আমি মাটিলগ্ন মানুষ, আধুনিকতা আর মধ্যবিত্তের তত্ত্ব আমি মানি না, আমি মনে করি আমি মাটির মানুষের সঙ্গেই আছি, তার বাইরে আমি কোনো দিন থাকব না।’ হাসান আজিজুল হকের গল্প মূল্যায়ন করতে গিয়ে হায়াৎ মামুদ বলেন, ‘নিষ্ঠুরতান্ত্রিক তিনি’! খুব কঠিন দুঃখ, কঠিন কষ্ট লিখবার সময় তাঁর কলম কাঁপে না। একদম কঠোর জিনিসটাকে কঠোর জায়গাতেই রেখে দিয়ে দেখান। যেমন– তাঁর ‘শকুন’ গল্প। গল্পটিতে বাস্তবতার নির্মমতাকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করেছেন লেখক। রাঢ়বঙ্গের মানুষের গ্রামীণ জীবন ও তাদের শোষণ-নিষ্পেষণে বেঁচে থাকার কথা আছে গল্পটিতে। এসেছে মানুষ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং একে অপরের সম্পর্কের টানাপোড়েন। যেখানে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় সমাজের শ্রেণিদ্বন্দ্ব, শোষণ ও তোষণের বিবিধ রূপ চিত্রিত হয়েছে। গল্পে শকুনটিকে দেখা যায় সন্ধ্যার সময় পথ হারিয়ে শোষক ও নির্যাতনকারী মহাজন অঘোর বোষ্টমের ভূমিকায়– ‘ছেলেদের কথায় শকুনটাকে দেখে তাদের রাগ লাগে, মনে হয় তাদের খাদ্য যেন শকুনের খাদ্য, তাদের পোশাক যেন ওর গায়ের গন্ধভরা নোংরা পালকের মতো; সুদখোর মহাজনের চেহারার কথা মনে হয় ওকে দেখলেই। নইলে মহাজনকে লোকে শকুন বলে কেন।’ গল্পের শেষে শকুনটিকে মৃত অবস্থায় দেখা যায়। আরও দেখা যায়, কাদু শেখের বিধবা বোনের অর্ধস্ফুট অবৈধ সন্তানটি মৃত অবস্থায় শকুনের পাশে পড়ে আছে। শিশুটির মাংসের লোভে শকুনেরা আসতে থাকে এবং ভিড় জমায়। প্রথম গল্প ‘শকুনে’ই হাসান আজিজুল হকের গল্পের বিষয় ও আঙ্গিক অবিচ্ছিন্ন এক সত্তায় মিলেমিশে যায়। পরে ক্রমশ তিনি আরও বিষয়ানুবর্তী হয়েছেন। বিষয়ই তাঁর গল্পের আঙ্গিক নির্ধারণ করে দিয়েছে। হাসান আজিজুল হক এই দুইয়ের মধ্যে একটি অপূর্ব সমন্বয় করেছেন। 
হাসান আজিজুল হকের গল্পের বিষয় ও নির্মাণকৌশল পুনরাবৃত্তিমুক্ত। এই দৃষ্টান্ত বাংলা ছোটগল্পে খুব বেশি নেই। তাঁর প্রতিটি গল্প নিরলস ও কঠোর শ্রম দাবি করে। প্রতিটি বাক্য ও শব্দ প্রয়োগে তিনি অত্যন্ত সতর্ক ও অনুসন্ধিৎসু। এই কারণে পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়কাল ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখক-জীবন অতিক্রম করেও মাত্র ৬৭টি গল্প লিখেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসান আজিজুল হক নিজেই বলেছেন, ‘গল্প লেখা আমার কাছে বেশ কষ্টকর কাজ। আমি চেষ্টা করি যাতে খুব যথাযথ করা যায়, আমি চেষ্টা করি যেন একটুও বাড়াবাড়ি না হয়, এক শব্দও যেন বেশি না হয়, বরং এক শব্দ কম হয় যেন, টাইট হয় যেন জিনিসটা, বাক্য যেন ব্যঞ্জনাপূর্ণ, ইঙ্গিতপূর্ণ হয়। ভাষাটা যেন একেবারে মলিন না হয়। দৈনন্দিন যে-ভাষাটা, ঠিক সে রকমই ভাষা যদি হয়, দৈনন্দিন ঘটনা যদি ঠিক সে রকমই হয়, তাহলে আমি কেন লিখব? পৃথিবীতে যত মানুষই হয়, প্রত্যেকেই কিন্তু আলাদা-আলাদা হয়, কথা বলে আলাদাভাবে। কারও কথা মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়, কারও কথা মনের মধ্যে ঢোকেই না, উড়ে চলে যায়। আমার ছোটগল্প লেখার ব্যাপারটাও কিন্তু তাই। যখন কোনো একটা অভিজ্ঞতার কথা ভাবি, তখন আমি ভাবি এ-জায়গাটাতে একশভাগ সৎ থেকে এটা লিখতে চাই। সব সময় যে লিখতে পেরেছি তা নয় কিন্তু। মানুষকে নিজের জায়গা থেকে সরতে হয়, অনেক সময় পারা যায় না।’ একজন কথাশিল্পীকে নিজস্ব একটি গদ্যশৈলী নির্মাণের নিরন্তর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, আর তার নির্মিত শৈলী ভেঙে আবার নতুন শৈলী তৈরি করে নিতে হয়। এভাবে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক গিয়েছেন। তার বড় উদাহরণ হলো, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পটি। গল্পের অনেকটা অংশ লেখার পরে তিনি দেখতে পান, গল্পটা সমরেশ বসুর গল্পের মতো হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসান আজিজুল হক তা ফেলে দেন। অনেক দিন পরে কোনো এক শরৎকালে একদিন গল্পটা আবার লিখতে বসেন। টেবিলে বসে হঠাৎ লিখলেন, ‘এখন নির্দয় শীতকাল, ঠান্ডা নামছে হিম, চাঁদ ফুটে আছে নারকেল গাছের মাথায়।’ তারপরে লিখলেন, ‘অল্প বাতাসে একটা বড় কলার পাতা একবার বুক দেখায় একবার পিঠ দেখায়।’ স্রোত শুরু হয়ে গেল। বাক্যগুলো একেবারে যেন মিছিল করে আসছে। একটার পর একটা। এভাবে গল্পের শেষে এসে লিখলেন, ‘চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে। আবার হু হু ফোঁপনি এলো আর এই কথা বলে গল্প শেষ না করতেই পানিতে ডুবে যেতে, ভেসে যেতে থাকল বুড়োর মুখ।’ গল্পটিতে মূলত ফুটে উঠেছে ১৯৪৭-এর দেশভাগের চিত্র। যে চিত্রে ফুটে উঠেছে উদ্বাস্তু জীবনের প্রত্যাশা, হাহাকার, মানবিক চেতনার বিপর্যয় ও বেকারত্ব। এমনকি বৃদ্ধ বাবার বোধ বিপর্যয়ের চিত্রও ফুটে উঠেছে কন্যার দেহ বিক্রির টাকায় সংসার চালানোর বাস্তবতায়। গল্পে ইনাম, ফেকু ও সুহাস– এই তিন চরিত্র মূল ভূমিকা পালন করেছে। 
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অপকৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন হাসান আজিজুল হক। অপকৌশলের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী-লড়াই অব্যাহত ছিল। এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি দেশের যে কোনো জাতীয় সংকটে সোচ্চার ছিলেন। দেশভাগের পর জন্মস্থান ছেড়ে বাংলাদেশে এসেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে একটুও চিন্তা করেননি। তখন অন্যায়ের প্রতিবাদের একটা সোজাসাপ্টা নামকরণ করা হতো– রাজনীতি। রাজনীতি বা অন্যায়ের প্রতিবাদের কারণে মেধা-বৃত্তি বঞ্চিতই শুধু হননি, পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতন ভোগ করেছেন– জেল খেটেছেন। কলেজও ছাড়তে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের অত্যাচার ও স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদের বিষাক্ত ছোবলের বিরুদ্ধেও তিনি চালিয়েছেন কলম-লড়াই। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ পটভূমিকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য দুটি গল্প ‘ভূষণের একদিন’ ও ‘ঘরগেরস্থি’ গল্পের উপজীব্য বিষয়। ‘ভূষণের একদিন’ গল্পে ভূষণের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনের ক্ষোভ ও বঞ্চনার বৃত্তান্ত গল্পকার উপস্থাপন করেছেন এভাবে– ‘গত বর্ষায় মালিকের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শোধ দিতে গিয়ে ভাগে পাওয়া ধানটা সব শেষ হয়ে গিয়েছে। গরু দুটোকে খেতে দেবার জন্য একমুঠো খড় পর্যন্ত নেই। ধুঁকছে গরু দুটো।’ গল্পটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপরীতে বাঙালির প্রতিরোধ-সংগ্রামের চিত্র প্রতিফলিত হয়নি। কিন্তু ভূষণ ও হরিদাসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সমাজের নিম্নবর্গ মানুষের অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রাম এবং বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় তাদের আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ বিবৃত হয়েছে। অপরদিকে ‘ঘরগেরস্থি’ গল্পে স্বাধীনতার তিক্ত অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত রামশরণের উচ্চারণে তাই খোদ স্বাধীনতা-শব্দটিই হয়ে উঠেছে প্রশ্নবিদ্ধ– ‘স্বাধীনতাটা কি, অ্যাঁ? আমি খাতি পালাম না-ছোয়াল মিয়ে শুকিয়ে মরে, স্বাধীনতা কোঁয়ানে? রিলিফের লাইনে দাঁড়াও ফহিরের মতো– ভিক্ষে করো লোকের বাড়ি বাড়ি।’ যুদ্ধের সর্বগ্রাসী রূপ কেবল রামশরণকে নয়, তার সমগ্র পরিবারটিকেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় কাতর করেছে, তা গল্পটিতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। হাসান আজিজুল হকের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গল্পগুলোতে দেখা যায়, চরিত্ররা তাদের নিজের শ্রমে-রক্তে-ত্যাগে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে গ্রহণ করতে পারেনি। ‘ঘরগেরস্থি’ গল্পের রামশরণ তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই দেশ হারায় অর্থাৎ নতুন স্বাধীন দেশে তার ঠাঁই হয় না; ‘কেউ আসেনি’ গল্পে আসফ আলী দেশ স্বাধীনের দিনেই তার কেটে ফেলা ঠ্যাং ফিরে চেয়েছে, আর এক মুক্তিযোদ্ধা গফুরের শরীরে স্বাধীন দেশের রোদ কাঁটা দিয়ে ওঠে; ‘ফেরা’ গল্পের আলেফ অস্ত্র ফেরত না দিয়ে ডোবায় লুকিয়ে ফেলে নতুন যুদ্ধের আশায়। হাসান আজিজুল হক যেসব আশঙ্কা করেছিলেন এবং যেসব অভিযোগ তুলেছিলেন স্বাধীনতার পরেই, তার কি কোনো উত্তরণ ঘটেছে? এর জবাবে হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘আমি যেসব আশঙ্কা করেছিলাম অথবা যে সমস্ত অভিযোগ তুলেছিলাম, আজকের বাংলাদেশে তার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি।’ v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ

রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।

এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক। 
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।

গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।

কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।

সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ