আওয়ামী লীগ সরকারের পতন-পরবর্তী বিশৃঙ্খলার মধ্যে ক্ষমতা গ্রহণকালে অন্তর্বর্তী সরকার বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে ‘কয়েক মাস’ সময় চাহিয়াছিল। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যে প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত; কিন্তু বাজার স্থিতিশীল হয় নাই। বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণে যথার্থই আসিয়াছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ; মজুতদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের ন্যায় অনিয়ম মোকাবিলা করিতে পারে নাই অন্তর্বর্তী সরকার। নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাসকরণে সরকারের ব্যর্থতায় মূল্যস্ফীতির চাপে পড়িয়াছে সাধারণ মানুষ। আমরা মনে করি, সরকার জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করিলে মূল্যস্ফীতির হার হ্রাসকরণ কঠিন হইবে।
স্বীকার্য, অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নেহায়েত কম গ্রহণ করে নাই। কিন্তু শেষ বিচারে উহার সুফল পাওয়া যায় নাই। সিপিডি ডিম, রুই মাছ, হলুদ, পাম অয়েলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণ করিয়া দেখিয়াছে, অদক্ষতাজনিত কারণে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে নাই। বর্তমানে চাউলের বাজারে যেই অস্থিরতা বিরাজমান, তাহাতে গুদাম মালিকরা নাটের গুরু হইলেও সরকার অসহায় কেন? যাহা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গত বৎসরের শেষদিকে বিশ্ববাজারে খাদ্য, তৈল, চিনিসহ কিছু পণ্যমূল্য আন্তর্জাতিকভাবে হ্রাস পাইলেও দেশের বাজারে উহার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে নাই। উদ্বেগের বিষয়, বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই সরকার কতিপয় পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করিয়াছে। ইহাতে মূল্যস্ফীতি, তৎসহিত সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাইবে। একদিকে তীব্র বেকারত্বের হার, অন্যদিকে মানুষের মজুরি বৃদ্ধি না পাইবার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং উহা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করিয়া তুলিয়াছে।
আমরা মনে করি, এহেন পরিস্থিতি হইতে উত্তরণে সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ লইতে হইবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে অধিক গুরুত্ব দিতে হইবে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পথও সচল রাখিবার বিকল্প নাই। ইহা স্পষ্ট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারিলে সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা থাকিবে। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা এমনকি স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাও অর্থনীতিবিদ হইবার কারণে দ্রব্যমূল্য, বাজার পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তাহাদের নখদর্পণে থাকিবার কথা। তজ্জন্য মানুষের প্রত্যাশাও অধিক ছিল। দ্রব্যমূল্যের সহিত দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ জড়িত বলিয়া মূল্যস্ফীতি হ্রাসকরণের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারে সব সময়ই থাকিতে হইবে। তথায় অদক্ষতার বিষয়গুলি সরকারকে খতাইয়া দেখিতে হইবে।
আমরা দেখিয়াছি, অন্তর্বর্তী সরকারকে এক প্রকার চাপে ফেলিয়া ইতোপূর্বে ব্যবসায়ীরা ছয়টি নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর ছাড় করাইয়া লইলেও ইহার সুফল পাওয়া যায় নাই। ইতোপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলিয়াছি, মূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট থাকিবার যেই অভিযোগ ছিল, সেই সিন্ডিকেটের ভিত সরকার নাড়াইতে পারে নাই। সিপিডিও যেইভাবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুতদারি ও অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা আলোচনা করিয়াছে; আমরা মনে করি, এই সকল বিষয়ে ছাড় দিবার অর্থ হইল মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা। আমরা বিস্মিত, রাজনৈতিক সরকার না থাকা সত্ত্বেও বাজারে সিন্ডিকেট বহাল!
ইহা সত্য, শীতকালীন উৎপাদনের কারণে সবজির মূল্য কিছুটা স্বস্তির মধ্যে রহিয়াছে। কিন্তু চাউল, তৈলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন থাকিলে মানুষের অস্বস্তি অবশ্যম্ভাবী। আর মানুষের অস্বস্তি বর্তমান থাকিলে সরকার স্বস্তিতে থাকিতে পারে না। আমরা উক্ত ক্ষেত্রে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রত্যাশা করি। আমাদের বিশ্বাস, সরকার তৎপর হইলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন নহে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র পদক ষ প যপণ য
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ নং ওয়ার্ডে পাম্প হাউসের ক্যাবল চুরি, দুর্ভোগ
বন্দরে ২৫ নং ওয়ার্ডের লক্ষণখোলা- দাসেরগাঁ পাম্প হাউসের বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২ মার্চ) ভোরে ওই পাম্পের প্রায় ৩০ ফুট ক্যাবল চুরি করে নিয়ে গেছে অজ্ঞাত চোরেরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে পাম্পের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।
ফলে পবিত্র মাহে রমজানে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোজাদাররা । এ ব্যাপারে পাম্প অপারেটর রাজু মিয়া বাদি হয়ে বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পাম্প অপারেটর রাজু জানান, সাহরি খাওয়ার পর রোববার ভোরে পাম্প বন্ধ করে তিনি চলে যান । এ সময় চোরেরা পাম্পের প্রায় ৩০ ফুট বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি করে নিয়ে যায়। সকাল ৮টায় পাম্প চালু করতে এসে ক্যাবল চুরির বিষয়টি নজরে আসে। ক্যাবল চুরির কারণে পানি উত্তোলন ও গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান ।
পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নাসিকের সহকারি প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল জোবায়ের জানান, দুই সপ্তাহ আগে এ পাম্পের ক্যাবল চুরি হয়। পরে নতুন ক্যাবল স্থাপন করে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু রোববার পুনরায় ক্যাবল চুরি হয়। বার বার ক্যাবল চুরি হওয়ায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। চোরদের গ্রেপ্তার ও ক্যাবল উদ্ধারে অভিযান চলছে।