মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২
Published: 30th, January 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জ সংলগ্ন চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ ও মোহনপুর সীমানাধীন চর আব্দুল্লাহপুর এলাকার মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-চাঁদপুর মতলব থানার দশানি গ্রামের রিফাত (২৯) ও মতলব ভাষানচর গ্রামের রাসেল (৩০)। গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ সদরের কালীরচর গ্রামে কানা জহির ও কিবরিয়া মিজি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সদরের কালিরচর এলাকার কিবরিয়া মিজি ও তার লোকজন মুন্সীগঞ্জ-মোহনপুর সীমানাধীন চর বাংলাবাজার এলাকায় চাঁদপুর নৌ পুলিশের সহযোগিতায় ২৫ থেকে ২৬টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অপরদিকে কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা কানা জহির গ্রুপও একইভাবে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করলে বিরোধ দেখা দেয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কানা জহির ও তার লোকজন প্রতিপক্ষ কিবরিয়া মিজির অবৈধ বালু মহালের পাশে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলতে গেলে কিবরিয়া মিজির বালু সিন্ডিকেটের সশস্ত্র সদস্য জনি, জসিম দেওয়ান মিছির বেপারী ও মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয় এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে ট্রলার ও স্পিডবোটে থাকা রিফাত, রাসেল ও স্পিডবোট চালক আইয়ুব আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাত ও রাসেলের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, রাত ৮ টার দিকে তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। আরেকজন গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম বলেন, রিফাত এবং রাসেল নামে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বালু উত্তোলন নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন বলেন, গোলাাগুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। তবে ঘটনাটি চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকার মেঘনা নদীতে। তাই আমরা বেশি কিছু বলতে পারবো না।
তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার এলাকার মেঘনাবক্ষে ঘটেনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ম ঘন র এল ক র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘পেডে দুই মুঠ ভাতই জোডে না, ঈদের সওদা করুম ক্যামনে’
‘প্রায় এক মাস ধইরা মেঘনায় মাছ ধরতে পারতাছি না। সরকার থেইকা সাহায্য-সহযোগিতাও পাই নাই। রোজগার নাই। পরিবার লইয়া খাইয়া না খাইয়া আছি। পেডে দুই মুঠ ভাতই জোডে না। ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করুম ক্যামনে। খুব বিপাকে আছি।’
কথাগুলো বলছিলেন মর্তুজা মিয়া। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নন্দলালপুর এলাকার জেলেপল্লিতে। ১ মার্চ থেকে মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ঈদ সামনে রেখে পরিবার নিয়ে কষ্টের কথা জানান তিনি। তাঁর মতো মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১২ শতাধিক জেলে পরিবারেও একই অবস্থা বিরাজ করছেন।
মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, জাটকা রক্ষায় ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মেঘনার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দুই উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ১৪ হাজার ৮৪০ জন। মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফের খাদ্যসহায়তা (চাল) পাচ্ছেন ১২ হাজার ২৯৬ জন জেলে। খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন না ২ হাজার ৫৪৪ জন জেলে। এর মধ্যে সহায়তাবঞ্চিত ইসলাম ধর্মাবলম্বী জেলে ১ হাজার ২৭২ জন।
শুক্রবার সকালে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, আমিরাবাদ, নন্দলালপুর ও ষাটনল এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর ও কাজিরবাজার এলাকার জেলেপাড়ায় দেখা যায়, অনেক জেলে পরিবারে ঈদের আমেজ নেই। মনমরা হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এবং রোজগার না থাকায় অধিকাংশ জেলের পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ঘরে চুলা জ্বলছে না তাঁদের। আর্থিক সমস্যায় ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করাও বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জাল মেরামত করে সময় কাটাচ্ছেন এক জেলে। শুক্রবার সকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এলাকায়